টানা ৯০৮ দিনের রেকর্ড শেষে মহাকাশ থেকে ফিরল এক্স-৩৭বি

এক্স-৩৭বিকে পরীক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বর্ণনা করে আসছে স্পেস ফোর্স এবং বোয়িং। শুরু থেকেই এই স্পেস প্লেন নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2022, 12:08 PM
Updated : 14 Nov 2022, 12:08 PM

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে ওড়ার নতুন রেকর্ড গড়ে পৃথিবীতে ফিরেছে মার্কিন স্পেস ফোর্সের এক্স-৩৭বি স্পেস প্লেন।

ষষ্ঠ মিশনে টানা ৯০৮ দিন ধরে পৃথিবীকে ঘিরে চক্কর দিয়ে শুক্রবার নাসার কেনেডি স্পেস স্টেশনে অবতরণ করেছে বোয়িংয়ের তৈরি পাইলটবিহীন রোবট প্লেনটি।

স্পেস ডটকম জানিয়েছে, এবারের মিশনে নতুন একটি একটি ‘সার্ভিস মডিউল’ বহন করেছে এক্স-৩৭বি।

রেকর্ড গড়ে এক্স-৩৭বি পৃথিবীতে ফেরার পর ‘বোয়িং স্পেস অ্যান্ড লঞ্চ’-এর জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট জিম চিলটন এক বিবৃতিতে বলেন, “সার্ভিস মডিউল জুড়ে দেওয়ার ফলে এখন পর্যন্ত কক্ষপথে সবচেয়ে বেশি (ওজন) বহন করেছে এক্স-৩৭বি এবং সরকার ও শিল্প সংশ্লিষ্টদের নতুন এই সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পেরে আমরা গর্বিত।”

এক্স-৩৭বি দেখতে নাসার অবসরে পাঠানো স্পেস শাটলের মতো হলেও আকারে অনেক ছোট; এর দৈর্ঘ্য ২৯ ফুট বা ৮.৮ মিটার। সে তুলনায় স্পেস শাটলের দৈর্ঘ্য ছিল ১২২ ফুট বা ৩৭ মিটার। তবে, স্পেস শাটলের সঙ্গে এক্স-৩৭বির সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে – স্পেস শাটল মহাকাশ থেকে নামিয়ে আনতেন একজন পাইলট, আর এক্স-৩৭বি একটি রোবটিক যান, পাইলট ছাড়া একাই উড়তে পারে এটি।

এক্স-৩৭বি প্রকল্পের শুরু থেকেই এই স্পেস প্লেন নির্মাণের উদ্দেশ্য, মিশন এবং কারিগরি খুঁটিনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন। মিশন শেষে কেবল সীমিত আকারে তথ্য-উপাত্ত স্পেস ফোর্স প্রকাশ করে জনসাধারণের জন্য।

স্পেস ডটকম জানিয়েছে, স্পেস ফোর্সের হাতে অন্তত দুটি এক্স-৩৭বি স্পেস প্লেন আছে বলে ধারণা করা হয়। উভয় প্লেনের নির্মাতা বোয়িং এবং প্লেনদুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয় ‘অরবিটাল টেস্ট ভেহিকল (ওটিভি)’ নামে।

২০১০ সাল থেকে ছয়টি ওটিভি মিশন সম্পন্ন করেছে স্পেস প্লেন দুটি। প্রতিটি মিশনেই আগেরবারের চেয়ে বেশি সময় মহাকাশে থেকেছে যানগুলো।

  • ওটিভি-১: যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল, ২২৪ দিন উড়ে পৃথিবীতে ফিরেছিল একই বছরের ৩ ডিসেম্বর।

  • ওটিভি-২: ৫ মার্চ, ২০১১ থেকে ১৬ জুন, ২০১২ (৪৬৮ দিন)।

  • ওটিভি-৩: ১১ ডিসেম্বর ২০১২ থেকে ১৭ অক্টোবর ২০১৪ (৬৭৪ দিন)।

  • ওটিভি-৪: ২০ মে ২০১৫ থেকে ৭ মে  ২০১৭ (৭১৮ দিন)।

  • ওটিভি-৫: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে ২৭ অক্টোবর ২০১৯ (৭৮০ দিন)।

  • ওটিভি-৬: ১৭ মে ২০২০ থেকে ১২ নভেম্বর ২০২২ (৯০৮ দিন)।

এক্স-৩৭বিকে পরীক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বর্ণনা করে আসছে স্পেস ফোর্স এবং বোয়িং; মহাকাশে ভিন্ন ভিন্ন কার্গো বা পেলোডের কার্যক্ষমতা এবং পৃথিবীতে ফেরার পর ওই পেলোডের ওপর মহাকাশের পারিপার্শিক অবস্থার প্রভাব বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেন গবেষকরা। 

এক্স৩৭-বির অর্জন নিয়ে বোয়িংয়ের চিলটন বলেন, “২০১০ সালে এক্স-৩৭বির প্রথম উৎক্ষেপণ থেকেই এটি একের পর এক রেকর্ড ভেঙ্গেছে আমাদের দেশকে দ্রুতগতিতে নতুন মহাকাশ প্রযুক্তি পরীক্ষা করে সমন্বয়ের সুযোগ দিয়ে আসছে।”

স্পেস প্লেনের মিশন এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশিরভাগ তথ্য গোপন রাখে স্পেস ফোর্স। এক্স-৩৭বির পেলোডের বেলাতেও একই কৌশল অবলম্বন করে মার্কিন সামরিক বাহিনীটি। এক্স-৩৭বি মিশনের যাত্রাপথ, বা কবে নাগাদ স্পেস প্লেনগুলো পৃথিবীতে ফিরবে, সে তথ্যগুলো উন্মুক্ত নয়। 

তবে, নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত নয় এমন তথ্য উপাত্ত প্রকাশে আপত্তি নেই মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের। ওটিভি-৬ মিশনে স্পেস প্লেনটি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির ‘ফোটোভোল্টাইক রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি অ্যান্টেনা মডিউল’ বহন করেছে – এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য।

স্পেস ডটকম জানিয়েছে, আকারে একটি পিজ্জা বক্সের সমান মডিউলটি সৌরশক্তিকে মাইক্রোওয়েভে রূপান্তর করে যা পৃথিবীতেও পাঠানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের বরাত দিয়ে সাইটটি জানিয়েছে, মহাকাশ থেকে সৌরবিদ্যুৎ আহরণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে পারে এই মডিউলটি।

এ ছাড়াও, মহাকাশে নাসার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা চালিয়েছে এক্স৩৭-বি। উদ্ভিদের বীজের ওপর মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে এর একটি পরীক্ষায়।