ক্রিপ্টো ধস: বিপাকে ‘কিম কিংডম’ উত্তর কোরিয়া

ক্রিপ্টো ধসে বিপাকে পড়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি সামরিক তহবিল জোগাতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহিত ক্রিপ্টো মুদ্রার ওপর নির্ভর করছে– বিশেষজ্ঞরা এমনটা বলে আসছেন আগে থেকেই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2022, 09:01 AM
Updated : 30 June 2022, 09:01 AM

প্রযুক্তি খাতে ২০২১ সালকে ক্রিপ্টো মুদ্রার বছর বলা হলেও, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভাটা পড়েছে ক্রিপ্টো উন্মাদনায়। ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে; সেই আঁচ ক্রিপ্টো ছুঁয়ে এসেছে লেগেছে উত্তর কোরিয়ার গায়েও।

একদিকে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কায় ক্রিপ্টো মুদ্রা বেচে দিয়ে নগদ অর্থ তুলে নেওয়া শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে, বাজারের দরপতনে ফলে বাধ্য হয়ে জমিয়ে রাখা ক্রিপ্টো মুদ্রা বেচে দিয়ে মাইনিংয়ের খরচ মেটানোর চেষ্টা করছেন মাইনাররা।

এমন পরিস্থিতিতে আধুনিক সামরিকায়ন ও মারণাস্ত্র নির্মাণের খরচ মেটাতে উত্তর কোরিয়া হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যে ক্রিপ্টো মুদ্রা তহবিল জোগাড় করেছিল তার একটা বড় অংশ বাজারের মন্দায় স্রেফ উবে গিয়েছে। সার্বিকভাবে ক্রিপ্টো তহবিল নিয়ে উত্তর কোরিয়া বড় বিপাকে পড়েছে বলে উঠে এসেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

উত্তর কোরিয়ার জমিয়ে রাখা ক্রিপ্টো তহবিলের ওপর নজর রাখে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ব্লকচেইন বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান চেইনঅ্যানালিসিস। প্রতিষ্ঠানটির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ‘২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৪৯টি হ্যাকিং থেকে ১৭ কোটি ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টো হাতিয়ে নিয়েছিল উত্তর কোরিয়া’।

কিন্তু, ২০২২ সালে ক্রিপ্টো বাজারে ধস নামার পর, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহিত ওই ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার দর নেমে এসেছে সাড়ে ছয় কোটি ডলারে।

সার্বিকভাগে নিজস্ব তহবিলে থাকা ক্রিপ্টো মুদ্রার ৬১ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কেবল ২০২১ সালে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহিত ক্রিপ্টো বিবেচনায় নিলে, বাজার মূল্যের ৮০ শতাংশ হারিয়েছে ওই ক্রিপ্টো তহবিল।

এ প্রসঙ্গে লন্ডনে অবস্থিত উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। পুরো বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।

ভূরাজনৈতিক নানা কারণে কার্যত ‘একঘরে’ হয়ে আছে উত্তর কোরিয়া। পশ্চিমা শক্তির বিপরীতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের দিকে ঝুঁকলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা বিধিনিষেধের কারণে এই প্রকল্পটিও চালু রাখা দেশটির জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ।

আর সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু দিন ধরেই বলে আসছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের খরচ জোগাতে ক্রিপ্টো হ্যাকিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

এই প্রকল্পের পরোক্ষ সহযোগিতা করে বিপাকে পড়েছেন ক্রিপ্টো খাতের কর্মীরাও। ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে ক্রিপ্টো মুদ্রার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সম্ভাব্য উপায় নিয়ে একটি উপস্থাপনা/প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন ইথেরিয়াম ফাউন্ডেশনের তৎকালীন কর্মী ভার্জিল গ্রিফিথ। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনে সহযোগিতার অভিযোগে পরবর্তীতে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার।

ক্রিপ্টো মুদ্রাকে বাজারের প্রচলিত নগদ অর্থে পরিণত করতে গিয়েই সাধারণত বিপাকে পড়েন ক্রিপ্টো হ্যাকাররা। উত্তর কোরিয়াও একই জটিলতার মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছে ভার্জ।

অন্যদিকে, চোরাই পণ্য বিক্রির সময় সাধারণত বাজার দরের চেয়ে কম দামেই সে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয় অপরাধী। অর্থাৎ, চোরাই ক্রিপ্টোর বেলায় প্রথম অবস্থাতেই বাজার মূল্যের চেয়ে কম দাম পাচ্ছিল উত্তর কোরিয়া; বাজার ধসে আরও মূল্য হারিয়েছে তাদের ক্রিপ্টো তহবিল।

তবে, ক্রিপ্টো ধসে সামরিক হুমকি হিসেবে উত্তর কোরিয়ার গুরুত্ব কমছে না বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কেবল ২০১৯ সালেই দেশটি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অন্তত দুইশ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছিল বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।

আরও খবর: