ইতালীয় কোম্পানি যোগাচ্ছে ‘ফোন হ্যাকিংয়ের হাতিয়ার’: গুগল

আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থেকে তথ্য চুরির জন্য ইতালির এক প্রযুক্তি কোম্পানি ‘হ্যাকিং টুল’ বানিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে গুগল।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2022, 09:04 AM
Updated : 24 June 2022, 09:04 AM

বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে গুগল জানিয়েছে, ইতালি এবং কাজাখস্তানে অ্যাপলের তৈরি আইফোন এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর স্মার্টফোন হ্যাক করতে মিলানভিত্তিক ‘আরসিএস ল্যাব’ এর তৈরি হ্যাকিং টুল ব্যবহৃত হয়েছে।

আরসিএস ল্যাবের তৈরি পণ্যের ক্রেতাদের মধ্যে ইউরোপের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোও আছে বলে তথ্য এসেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে। 

গুগলের অভিযোগ, নির্দিষ্ট ডিভাইস ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত মেসেজ ও কন্ট্যাক্ট লিস্টে নজর রাখতে বিশেষায়িত টুল বানিয়েছিল আরসিএস ল্যাব।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্পাইওয়্যারের বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্ভাব্য নতুন আইনের কথা বিবেচনা করে দেখছেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ও বাজার নিয়ন্ত্রকরা।

গুগল বলছে “এই বিক্রেতারা বিপজ্জনক হ্যাকিং টুলের বিস্তার বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে এবং সেই সরকারগুলোকে অস্ত্রসজ্জিত করছে, যাদের নিজ উদ্যোগে এই সক্ষমতা অর্জনের উপায় নেই।”

এ বিষয়ে রয়টার্স ইতালি ও কাজাখস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তাতে সাড়া দেয়নি দুই দেশ।

অ্যাপলের এক মুখপাত্র বলেছেন, ওই হ্যাকিং প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার সার্টিফিকেট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে আরসিএস ল্যাবের দাবি, ইউরোপের আইন মেনেই তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘সহযোগিতা’ করছে।

রয়টার্সকে পাঠানো এক ইমেইলে কোম্পানিটি বলেছে, “আরসিএস ল্যাবের কর্মীদের কেউ সংশ্লিষ্ট ক্রেতার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত বা জড়িত নন।”

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর ডিভাইসের ব্যবহারকারী ভুক্তভোগীদের ইতোমধ্যে স্পাইওয়্যার সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে গুগল।

এ প্রযুক্তি জায়ান্টের ধারণা, আরসিএস স্পাইওয়্যার ভুক্তভোগীর ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি)’-এর সঙ্গে কাজ করত।

এক্ষেত্রে আরসিএস ল্যাবের পেছনে রাষ্ট্রের প্রতক্ষ্য সমর্থনের ‘স্পষ্ট ইঙ্গিত’ মেলার কথাও বলেছেন গুগলের জ্যেষ্ঠ সাইবার নিরাপত্তা গবেষক বিলি লিওনার্ড।

গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে কদর বেড়েছে স্পাইওয়্যার শিল্পের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর জন্য স্পাইওয়্যার অথবা হ্যাকিং টুল নির্মাণ করে- এমন কোম্পানির সংখ্যাও বেড়েছে। নজরদারি বিরোধী অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, ক্ষেত্রবিশেষে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দেশের সরকারকে সহযোগিতা করছে ওই কোম্পানিগুলো।

বৈশ্বিক স্পাইওয়্যার শিল্প গেল বছরেই স্পটলাইটে এসেছে ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যারের কারণে। সংবাদকর্মী, অধিকারকর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর বেআইনিভাবে নজর রাখতে বেশ কয়েকটি দেশের সরকারের পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্ভরতার খবর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

রয়টার্স জানিয়েছে, গোপনে তথ্য চুরির সক্ষমতায় পেগাসাসের সমকক্ষ নয় আরসিএস ল্যাবের টুল। তবে এর গোপনে মেসেজ পড়ার এবং পাসওয়ার্ড চুরি করার সক্ষমতা আছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিটিজেন ল্যাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক বিল মার্কজাক।

নিজস্ব ওয়েবসাইটে আরসিএস ল্যাব নিজেদের পরিচয় দেয় ‘আইনসম্মত আড়িপাতা প্রযুক্তির’ নির্মাতা হিসেবে। পাশাপাশি, ব্যবহারকারীর কণ্ঠবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ এবং ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ নির্মাণের কথাও বলেছে কোম্পানিটি। কেবল ইউরোপ থেকেই প্রতিদিন ১০ হাজার লক্ষ্যবস্তুর ডেটা সংগ্রহের দাবি করেছে তারা।

আরসিএস ল্যাব এর আগে ইতালির বিতর্কিত স্পাই ফার্ম ‘হ্যাকিং টিম’-এর সঙ্গেও কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন গুগলের সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা। বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার হ্যাক করার টুল নির্মাণ করতো ওই প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৫ সালে নিজেই হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ‘হ্যাকিং টিম’। সে সময় কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ফাঁস করে দিয়েছিল হ্যাকাররা।