তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজেটে ‘নাখোশ’ বেসিস

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে প্রস্তাবের “আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি” বলে মত প্রকাশ করেছে দেশে সফটওয়্যার নির্মাতাদের শীর্ষ সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস’ (বেসিস)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2022, 12:06 PM
Updated : 11 June 2022, 12:06 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার উপস্থাপিত বাজেটে বিগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২৭৪ কোটি টাকা বাড়লেও এর বিষয়ে “সুস্পষ্ট কোনো ধারণা বা ইঙ্গিত” না থাকার কথা উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান বলেন, “এই অর্থ কোন কোন প্রকল্প বা খাতে ব্যয় হবে এবং তার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং এই খাতের ব্যবসায়ীরা কীভাবে উপকৃত হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।”

পাশাপাশি বাজেটে সংগঠনটির দেওয়া প্রস্তাবনার কোনো প্রতিফলন না মেলার বিষয়ও উঠে এসেছে শনিবার সংগঠনটির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।

“তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আমরা কর অব্যহতির সময়সীমা ২০২৪ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছিলাম, এই বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব পায়নি।”

এর পাশাপাশি দেশের সকল মন্ত্রণালয় ও অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর উন্নয়ন বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ সফটওয়্যার এবং আইটিইএস ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ করার বিষয়টি বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন বেসিস নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান বলেন, “সরকার যদিও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, ২০২২ সালকে তথ্যপ্রযুক্তি বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে, কিন্তু তার সাথে সঙ্গতি রেখে বাজেটে যেন বেসরকারি খাতের অংশীদারীত্ব বাড়ে, সে বিষয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আমাদের চোখে পড়েনি।”

বেসিস পরিচালক আহমেদুল ইসলাম বাবু বলেন, “সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার পণ্যের উপর উচ্চ শুল্কহার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।”

“সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যারের জন্য নতুন করে এইচএস কোড নির্ধারণ করে শুল্ক হার নির্ধারণ করার বিষয়ে আমরা বলেছিলাম, যা আমরা এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্রতিফলিত হতে দেখিনি।”

স্থানীয় সফট্ওয়্যার ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবার উপর ব্যবসায় উৎস পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের প্রস্তাবও বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন বক্তারা।

টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (টিএ) প্রকল্প গ্রহণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা তহবিল তৈরি ও আইটিইএস এর সংজ্ঞায় প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ এ সার্ভিস (প্যাস) ই-সার্ভিসেস এবং সফটওয়্যার অ্যাজ এ সার্ভিস (স্যাস)-কে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবের উল্লেখ করে বেসিসের সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ বলেন, “একইসঙ্গে, অনলাইনে লেনদেন উৎসাহিত করতে ক্রেতা এবং মার্চেন্ট উভয়কে যথাক্রমে তিন এবং দুই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম।”

“কিন্তু এই বিষয়গুলো আইটিইএসের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি”।

ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও টোনারের মতো পণ্যকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের “সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম” উল্লেখ করে এসবের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের ফলে এই খাতের ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা উভয়েরই ব্যয় বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন বক্তারা।

“দেশে দ্রুত ল্যাপটপ তৈরির ইকোসিস্টেম গড়ে তুলে দেশীয় ল্যাপটপ উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকতে হবে, নতুবা এর ফলে আমদানি করা ল্যাপটপের দাম বেড়ে গিয়ে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার একটা আশংকা তৈরি হতে পারে।”

পাশাপাশি, প্রস্তাবিত বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বাজেটে উদ্যোক্তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল ছাড়া অন্য সব ধরনের রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ার উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন বেসিস নেতারা।

‘বেসিসের বাজেট প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান, বেসিস সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ ও বেসিস পরিচালক আহমেদুল ইসলাম বাবু।