জনমতে প্রভাব বিস্তারে সার্চ ইঞ্জিন নির্ভরতা চীনের

দেশের বাইরে জনমত প্রভাবিত করতে সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদমের সুযোগ নিচ্ছে চীন। উইঘুর মুসলিম এবং করোনা ভইরাসের উৎপত্তি প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রসমর্থিত সংবাদমাধ্যমের কনটেন্ট থাকছে গুগল ও ইউটিউবসহ বিং সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলে শুরুতেই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2022, 11:43 AM
Updated : 29 May 2022, 11:43 AM

উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত ‘শিনজিয়াং’ চীনের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। ওই অঞ্চলটির নাম লিখে সার্চ করলেই চীনের রাষ্ট্রসমর্থিত সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন সার্চ রেজাল্টের শুরুতেই চলে আসছে বলে আবিষ্কার করেছেন ‘ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট’ এবং ‘অ্যালায়েন্স ফর সিকিউরিং ডেমোক্রেসি’ সংগঠন দুটির গবেষকরা।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট জানিয়েছে, টানা ১২০ দিনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন ব্রুকিংসের গবেষকরা। শিনজিয়াংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১২টি বাক্যাংশ লিখে গুগল সার্চ ও নিউজ, বিং সার্চ এবং ইউটিউবে সার্চ করেন তারা। ৮৮ শতাংশ সার্চে ফলাফল হিসেবে আসা কনটেন্টের প্রথম ১০টির মধ্যেই ছিল চীনের রাষ্ট্রসমর্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন।

কেবল উইঘুর মুসলিমদের বেলায় নয়, করোনা ভাইরাসের প্রোপাগান্ডা ছড়াতেও ‘সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন’ বা এসইও কৌশলগুলোর পূর্ণ ব্যবহার করছে চীন।

১৯৪০-এর দশক থেকে ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জৈব অস্ত্র গবেষণার কেন্দ্রে ছিল মেরিল্যান্ডে অবস্থিত ফোর্ট ডেটরিক সামরিক ঘাঁটি। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, সার্চ ইঞ্জিনে ওই সামরিক ঘাঁটির খোঁজ করলেই রেজাল্টে চলে আসছে চীনের প্রোপাগান্ডা। ফোর্ট ডেটরিক করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল– প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার চালাচ্ছে চীন।

ইউটিউবের ফোর্ট ডেটরিক সার্চ করলে “নিয়মিতভাবেই চীনের সরকার সমর্থিত কনটেন্ট চলে আসছে এবং ৬১৯ বার সার্চে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের ভিডিওগুলোর ফলাফলের প্রথম ১০-এর মধ্যেই ছিল।”

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ইউটিউব ও গুগল সার্চ– এ দুটি সেবাই চীনের নিজ ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ। বিং সার্চ চীনে চালু থাকলেও দেশটির আইন মানতে সীমিত পরিসরে কাজ করে সার্চ ইঞ্জিনটি।

গবেষকরা বলছেন, চীন যে এসইও কৌশল অবলম্বন করছে সেটি থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে যে, দেশের বাইরের জনমত প্রভাবিত করতে পশ্চিমা প্রযুক্তি ব্যবহারে কোনো দ্বিধা কাজ করছে না তাদের মধ্যে। নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে লাগামহীন ভাষা ব্যবহারের জন্য পরিচিতি আছে চীনের কূটনীতিকদের। চীনের এসইও কৌশলেও সেই প্রবণতার প্রতিফলন হচ্ছে বলে মনে করেন গবেষকরা।

প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, চীন বিদেশী পাঠকদের জন্য ‘প্রোপাগান্ডা প্রচারের মাধ্যমে’ ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের যুতসই আবহ তৈরি করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

এ প্রসঙ্গে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের গবেষক জেসিকা ব্র্যান্ডট বলেন “চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া নিয়ে সমস্যা হলো, রশদ বা দর্শকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই তাদের ওপর। তাই, তারা তাদের পছন্দের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে বিপুল পরিমাণ প্রোপাগান্ডামূলক কনটেন্ট তৈরি করতে পারে।”

আর এমন প্রোপাগান্ডামূলক কনটেন্টের সংখ্যা বেশি হওয়ায় চীন সার্চ ইঞ্জিনে প্রচারণা কৌশলের সুযোগ নিয়ে নতুন কনটেন্ট নিয়মিত আপডেট করতে পারছে।

অন্যদিকে, গুগল সবসময়েই বাকস্বাধীনতার ভারসাম্য বজায় রেখে ‘পরিকল্পতিভাবে প্রভাব বিস্তার এবং সেন্সরশিপ অপারেশন’ মোকাবেলার চেষ্টা করে বলে দাবি করেছেন সার্চ জায়ান্টের নীতিমালাবিষয়ক ব্যবস্থাপক নেড আড্রিয়ানসি।

গবেষণায় যে বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি বহুল প্রচলিত নয়। তাই হয়তো চীনের রাষ্ট্রীয় কনটেন্ট সার্চ রেজাল্টের শুরুতেই চলে আসছে বলে মন্তব্য করেছে প্রতিষ্ঠানটি।