মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছেছে বোয়িংয়ের ক্যাপসুল

প্রথমবারের মতো ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (আইএসএস)’ যুক্ত হয়েছে বোয়িংয়ের নভোযান ‘স্টারলাইনার ক্রু ক্যাপসুল’। এই মানবহীন অভিযানকেই দেখা হচ্ছে মহাকাশে নভোচারী পাঠানোর পরীক্ষামূলক পর্ব হিসেবে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2022, 02:33 PM
Updated : 22 May 2022, 02:33 PM

বোয়িংয়ের ক্যাপসুলটি আইএসএস-তে অবতরণ করেছে শুক্রবার।

বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডার ‘কেপ ক্যানাভেরাল ইউএস স্পেস ফোর্স বেইজ’ থেকে উৎক্ষেপণের প্রায় ২৬ ঘন্টা পর আইএসএস-এ গিয়ে যুক্ত হয় ফানেল আকৃতির ‘সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার’।

স্টারলাইনার ক্যাপসুল একটি ‘অ্যাটলাস ভি’ রকেটের মাধ্যমে রওনা হয় বৃহস্পতিবার। ‘বোয়িং’ ও ‘লকহিড মার্টিন’-এর যৌথ প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়ান্সের (ইউএলএ)’ নকশায় তৈরি হয়েছে রকেটটি।

ত্রুটিপূর্ণ ‘থ্রাস্টার’-এর কারণে প্রথম দুইবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তৃতীয় চেষ্টায় উৎক্ষেপণের ৩১ মিনিট পর নির্ধারিত কক্ষপথে পৌছায় নভোযানটি।

বোয়িং জানিয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ ‘থ্রাস্টার’ দুটির কারণে বাকি অভিযানে কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী নাসাকে নভোচারী পাঠানোর জন্য একটি নভোযান দেওয়ার কথা থাকলেও, ব্যয়বহুল নির্মাণ ত্রুটির কারণে এটি প্রায় দুবছরের বেশি সময় পিছিয়েছে।

থ্রাস্টার ত্রুটির পাশাপাশি উৎক্ষেপণের পরপরই স্টারলাইনার-এর তাপ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ পর্যাবেক্ষণের কথা জানিয়েছিল বোয়িং। সেই সময় ক্যাপসুলের তাপমাত্রা স্থিতিশীল ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।

“অরবিটে স্টারলাইনার পরিচালনার জন্য এসব ত্রুটি ‘শেখারই অংশ।” --নাসার ওয়েবকাস্ট চলাকালীন বলেছেন বোয়িংয়ের ধারাভাষ্যকার স্টিভ সিসলফ।

বোয়িংয়ের এই অভিযানে একমাত্র যাত্রী হিসেবে ছিল ‘রসি দ্য রকেটিয়ার’ নামে এক ‘গবেষণা পুতুল’। নীল রঙের একটি ‘ফ্লাইট সুট’ পরানো এই পুতুলকে, যাত্রা চলাকালীন ক্রু কেবিনের তথ্য সংগ্রহ করতে একটি কমান্ডার সিটের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি, স্পেস স্টেশনে ৩৬৩ কেজির একটি কার্গো পাঠিয়েছে বোয়িং।

নভোযানটি আইএসএস-এ যুক্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সময় ৮.২৮ মিনিটে। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ভারতীয় মহাসাগর উপকূলের প্রায় ৪৩৬ কিলোমিটার ওপর দিয়ে উড়ে যায় নভোযান। --অভিযান চলাকালীন নাসার এক সরাসরি ‘ওয়েবকাস্ট’-এ বলেছেন ধারাভাষ্যকাররা।

নাসার ‘বাণিজ্যিক ক্রু প্রোগ্রাম’-এর অংশীদার দুটির মহাকাশে নভোযান পাঠানোর প্রথম ঘটনা এটি। তারা একই সময়ে স্পেস স্টেশনের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিল।

বোয়িংয়ের জন্য এ সাফল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিজেদের জেটলাইনার ব্যবসা ও স্পেস ডিফেন্স ইউনিটে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য আনতে পারেনি শিকাগো-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালের নির্মাণ ত্রুটির পর এক স্টারলাইনার পরিকল্পনার পেছনেই খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি ডলার।

স্টারলাইনার-এর পরিচালনা ব্যবস্থায় ক্রমাগত সমস্যা থাকায় গত গ্রীষ্মে দ্বিতীয়বারের মতো উৎক্ষেপণ পিছিয়েছিল বোয়িং।

ক্যাপসুলটি আইএসএস থেকে পৃথিবীতে ফিরবে বুধবার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের মরুভুমিতে একটি প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণের কথা রয়েছে ক্যাপসুলটির।

অন্যদিকে, এপ্রিলে চারজন নভোচারী পাঠানোর পর স্পেস স্টেশনে আরেকটি ‘ক্রু ড্রাগন’ ক্যাপস্যুল পাঠিয়েছে স্পেসএক্স। বর্তমানে স্পেস স্টেশনে নাসার তিনজন, ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি’র একজন ইতালীয় এবং রাশিয়ার তিনজন নভোচারী রয়েছেন।

“এতে স্টেশনে কোনো ক্ষতি হবে না। আইএসএস-এ রাশিয়ার অংশ আগের মতোই রয়েছে।” --শনিবার সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস-এর পরিচালক জেনারেল দিমিত্রি রোগোজিন।

২০২০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মহাকাশে পুনরায় মানুষ পাঠানো শুরুর পর এখন পর্যন্ত নয়টি নভোযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে।

মহাকাশে নভোচারী পাঠানোর জন্য নাসাকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন ৯’ রকেট এবং ‘ক্রু ড্রাগন’ ক্যাপসুলের উপর। এর আগে স্পেস শাটল প্রোগ্রাম সমাপ্তির পর কেবল রাশিয়ান সয়ুজ নভোযানের মাধ্যমে মহাকাশে নভোচারী পাঠাচ্ছিল নাসা।