ঔপনিবেশিক শিকল ভাঙায় সিএআর-এর ‘ভুল চাবি’ বিটকয়েন?

আফ্রিকার দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (সিএআর)-তে ‘অনুমোদিত মুদ্রা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিটকয়েন। এর আগে দেশের প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থার পাশাপাশি অনুমোদিত মুদ্রা হিসেবে এল সালভাদরে স্বীকৃতি পেয়েছিল ক্রিপ্টো মুদ্রা ব্যবস্থাটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2022, 08:53 AM
Updated : 28 April 2022, 08:53 AM

হীরা, সোনা এবং ইউরেনিয়ামের মতো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েও বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশগুলোর একটি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।

দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ও সহিংস রাজনৈতিক সংঘাত চলেছে টানা কয়েক দশক ধরে। বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক আছে দেশটির। রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটির বিদ্রোহী দলগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে রাশিয়ার আধা-সামরিক নিও নাৎসি সংগঠন ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’-এর ভাড়াটে যোদ্ধারা।

এমন পরিস্থিতিতেই বিটকয়েনকে অনুমোদিত মুদ্রার স্বীকৃতি দিল দেশটির সরকার। দেশটির রাষ্ট্রপতির দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিটকয়েনকে অনুমোদিত মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা।

এই পদক্ষেপ সিএআর-কে ‘বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী এবং স্বপ্নদর্শী দেশগুলোর ম্যাপে স্থান করে দেবে’ বলে বিবৃতিতে দাবি করেছে দেশটির সরকার।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বিটকয়েনকে অনুমোদিত মুদ্রার স্বীকৃতি দিয়েছিল এল সালভাদর। মধ্য আমেরিকার দেশটির এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছিল, এতে দেশটির অর্থনীতি অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়বে।

বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টো মুদ্রার প্রচলনের ফলে অপরাধীদের অর্থ পাচারের সুযোগ আরও বাড়বে, এমন শঙ্কার কথাও বলেছেন অনেকে। ক্রিপ্টো মুদ্রা মাইনিংয়ের পেছনে যে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, সে বিষয়েও আছে বিতর্ক।

ক্রিপ্টো মুদ্রা ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট সেবা অপরিহার্য হলেও, ‘ওয়ার্ল্ডডেটা’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় ছিলেন।

দেশটি বর্তমানে ‘সিএফএ ফ্রাঁ’ নিজস্ব মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে। আফ্রিকার সাবেক ফরাসী কলোনীর বেশিরভাগ একই মুদ্রা ব্যবহার করে।

সংশ্লিষ্টদের অনেকে বিটকয়েনকে অনুমোদিত মুদ্রার স্বীকৃতি প্রদান সিএফএ’র প্রভাব কমানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির ওপর দীর্ঘদিন নিজের প্রভাব ধরে রেখেছে ফ্রান্স। সেই অবস্থান থেকে ফ্রান্সকে হটিয়ে দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে রাশিয়া।

এ প্রসঙ্গে বার্তাসংস্থা এএফপিকে ফরাসী বিশ্লেষক টিয়েরি ভার্কোলন বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে, পদ্ধতিগত দুর্নীতি এবং রুশ অংশীদাররা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকায় সন্দেহ জাগছেই।”

তবে, সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাজধানী বাঙ্গি’র নাগরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার খবর জানিয়েছে বিবিসি।

অর্থনীতিবিদ ইয়ান ডাওরো বিবিসি-কে বলেন, বিটকয়েন থেকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তর সহজ কাজ এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে লেনদেন করা যায় বলে এতে জীবন সহজ হবে।

‘ব্যবসায়ীদের আর সুটকেস ভর্তি সিএফএ ফ্রাঁ নিয়ে ঘুরতে হবে না,” বলেন তিনি।

এ ছাড়াও, সিএফএ’র ব্যবহার থেকে আফ্রিকা লাভবান হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। মুদ্রা ব্যবস্থাটিকে ঔপনিবেশিক শাষণের অবশিষ্টাংশ এবং এর মাধ্যমে ফ্রান্স সাবেক কলোনিগুলোর ওপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে বলে মনে করেন আফ্রিকার অনেকেই।

তবে, কম্পিউটার বিজ্ঞানী সিডনি টিকায়ার মতে, ক্রিপ্টো মুদ্রা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং অসময়ে নেওয়া।

“বিটকয়েন পুরোপুরি ইন্টারনেট নির্ভর হলেও পুরো দেশে এখনও ইন্টারনেট সংযোগ সেবা নির্মাণাধীন আছে”। দেশের নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং পানীয় জলেও চাহিদা মেটানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।