হলোপোর্টেশন: আইএসএসে দেখা গেল ‘গায়েবী’ ডাক্তার

এ যেন বাস্তবেই সায়েন্স ফিকশন গল্প। মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্যসেবার পরামর্শ দিয়েছেন এক ডাক্তার। সশরীরে আইএসএসে যাননি তিনি, বরং সর্বাধুনিক হলোগ্রাম প্রযুক্তি ওই ডাক্তারকে আইএসএসে নিয়ে এসেছিল অশরীরী অবস্থায়।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2022, 12:46 PM
Updated : 18 April 2022, 12:46 PM

হলোগ্রাফিক প্রযুক্তির এই ব্যবহারকে ‘হলোগ্রাম’ আর ‘টেলিপোর্টেশন’ শব্দ দুটির মিশেলে ডাকা হচ্ছে ‘হলোপোর্টেশন’ নামে। এই হলোপোর্টেশনের মাধ্যমে পৃথিবীতে বসেই আইএসএসে হাজির হয়েছিলেন নাসার ফ্লাইট সার্জন ডাক্তার জোসেফ স্মিড।

স্মিডের সঙ্গে ট্রন্সডাইমেনশনাল যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন ‘এইক্সিয়া অ্যারোস্পেস’ এর প্রধান নির্বাহী ফের্নান্দো দে লা পেনা এবং স্মিডের আরও কয়েকজন সহকর্মী।

হলোপোর্ট যাত্রা প্রসঙ্গে স্মিড বলেন, “মহাকাশ ভ্রমণের একটি আনকোড়া নতুন উপায় এটি যেখানে মানব দেহ পৃথিবীতে থেকেই স্বত্তা মহাকাশে ভ্রমণ করতে পারবে। আমাদের দেহ সেখানে থাকবে না, তবে মানব অস্তিত্ব অবশ্যই থাকবে।”

‘হলোপোর্টেশন’ আনকোড়া নতুন কোনো প্রযুক্তি ভাবনা নয়। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট বলছে, বেশ ক’বছর আগেই এই প্রযুক্তি ভেবে রেখেছিল সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফট। তবে উইন্ডোজ নির্মাতার মূল লক্ষ্য ছিল এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী খাতে নতুন বিপ্লব আনা। সেই ভাবনাকে আক্ষরিক অর্থেই  নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে নাসা।

প্রথমবারের মতো ‘ভার্চুয়াল ট্রান্সপোর্টশন’-এর মাধ্যমে পৃথিবীর গণ্ডি ছাড়িয়ে মহাকাশে গেছে কোনো মানুষের অস্তিত্ব। সিনেট জানিয়েছে, গেল বছরের অক্টোবর মাসে ডাক্তার স্মিডকে মহাকাশে নিতে প্রথমে সর্বোন্নত মানের থ্রিডি মডেল তৈরি করা হয়েছিল, তারপর সেই মডেলের ডেটা সংকুচিত করে পাঠানো হয়েছে আইএসেএসে। সেই সংকুচিত ডেটা থেকে আবার থ্রিডি মডেল তৈরি হয়েছে আইএসএসের ল্যাবে, এবং এর সবই ঘটেছে ‘রিয়াল টাইম’ বা তাৎক্ষণিকভাবে।

ছবি: ইএসএ নভোচারী থমাস পেসকেট-এর তোলা ছবি।

আর নভোচারীরা ব্যবহার করেছেন মাইক্রোসফটের তৈরি মিক্সড রিয়ালিটি হেডসেট, ‘হলোলেন্স’। হলোলেন্সের মাধ্যমেই নভোচারী ও ডাক্তার স্মিড একে অন্যকে সামনাসামনি দেখতে পেয়েছেন, একে অন্যের সঙ্গে আলাপ করতে পেরেছেন। মাঝে হাজার মাইলের দূরত্ব থাকলেও স্মিড এবং দে লা পেনার সঙ্গে দ্বিমুখী সম্মুখ আলোচনা চালিয়ে গেছেন ‘ইউরোপিয়ার স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)’-এর নভোচারী টমাস পেসকেট। এমন হলোগ্রাফের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিনজনই।

এ প্রসঙ্গে নাসা এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই প্রযুক্তি ব্যক্তিগত মেডিকেল কনফারেন্স, সাইকিয়াট্রিক কনফারেন্স, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং ভিআইপিদের মহাকাশ স্টেশনে নিয়ে নভোচারীদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে ব্যবহার করবো।”

নাসা এই প্রযুক্তির সঙ্গে আরও ‘অগমেন্টেড রিয়ালিটি’ ফিচার সমন্বয়ের পরিকল্পনা করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিনেট। এর মাধ্যমে আইএসএসে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন হলোপোর্টোররা। ভ্রমণের সবই পাবেন হলোপোর্টেশন প্রযুক্তির ব্যবহারকারীরা, কেবল নিজ হাতের স্পর্শের অনুভূতি বাদে।

সংশ্লিষ্টদের আশা, নভোচারীদের টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া সম্ভব হবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ ছাড়াও, ভবিষ্যতে দূর মহাকাশ ভ্রমণেও বড় ভূমিকা রাখবে এই প্রযুক্তি। প্রচলিত রেডিও ওয়েভ নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সময়ক্ষেপণ হয় অন্তত ২০ মিনিট। কিন্তু হলোপোর্টেশনের মাধ্যমে পুরো সময়টাই মহাকাশযানে অশরীরী উপস্থিতি থাকবে হলোপোর্টারদের।