ফোন মাত্রাতিরিক্ত গরম হচ্ছে কেন, প্রতিকারই বা কী?

একই ফোন দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করছেন, অথবা স্মার্টফোনে বেশি সময় দেওয়ার অভ্যাস আছে যাদের, তাদের মুখে প্রায়ই শোনা যায় একটি অভিযোগ, মাত্রাতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে ফোন। বাড়তি তাপ কেবল ব্যবহারকারীর মাথাব্যথার কারণ হয় না, ক্ষতি করতে পারে ডিভাইসের অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যারেও। এমন পরিস্থিতি এড়াতে চাইলে জানতে হবে ফোন গরম হওয়ার কারণ এবং তার প্রতিকার।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2022, 11:22 AM
Updated : 11 April 2022, 11:22 AM

ফোন মাত্রাতিরিক্ত গরম কেন হয়?

ফোনের অভ্যন্তরীণ তাপকে প্রভাবিত করতে পারে এবং মাত্রাতিরিক্ত গরম করে তুলতে পারে এমন অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত, পারিপার্শিক আবহাওয়ার কারণে প্রভাবিত হতে পারে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের তাপমাত্রা। চারপাশের তাপমাত্রা বেশি হলে, স্মার্টফোনের তাপমাত্রাও তার সঙ্গে তাল রেখে বাড়তে থাকবে।

তার ওপর ব্যবহারকারীর যদি গেইমিং, ভিডিও গেইম স্ট্রিমিং, ইউটিউবে একটানা ভিডিও দেখা অথবা ফোনকে হটস্পট হিসেবে ব্যবহারের অভ্যাস থাকে, তবে তার প্রভাবও পড়ে ডিভাইসের ওপর। এ সবগুলো কাজেই বিদ্যুৎ খরচ বাড়ে, বাড়তে থাকে ডিভাইসের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা।

গ্রীস্মের রৌদ্রজ্জ্বল দিনগুলোতে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ব্যবহার করতে হয় ডিভাইস। এতেও বিরূপভাবে প্রভাবিত হয় ডিভাইসের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা। এ ছাড়াও, দীর্ঘ সময় ধরে ডিভাইসের ক্যামেরা ব্যবহার করার ফলেও গরম হয়ে যেতে পারে ডিভাইস।

ফোন বেশি গরম হলে কী হতে পারে?

ডিভাইসের হার্ডওয়্যারের ওপর বাড়তি তাপের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার কথা মাথায় রেখেই নকশা করা হয় বেশিরভাগ স্মার্টফোনের। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে গুগল পিক্সেলের কথা। বাড়তি তাপ মোকাবেলার জন্য একাধিক ফিচার রয়েছে স্মার্টফোনটিতে। ডিভাইস বেশি গরম হলে প্রথমেই নোটিফিকেশন দিয়ে ব্যবহারকারীকে জানান দেয় ডিভাইসটি। শুধু গুগল পিক্সেল নয়, বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই আছে এই ফিচারটি।

আর ফোন যদি চার্জে দেওয়া থাকে, তবে বাড়তি তাপ এড়াতে চার্জিংয়ের গতি কমিয়ে দেয় বেশিরভাগ ডিভাইস। শক্তি খরচ করলে তার ফলে তাপ সৃষ্টি হয়, আর পদার্থবিজ্ঞানের এই নিয়মটির প্রতিফলন ঘটে চার্জিংয়ের সময়ে সৃষ্ট বাড়তি তাপে।

ডিভাইস বেশি গরম হয়ে গেলে গতি কমে আসে গুগল পিক্সেলের। পিক্সেলেরর গতি এতোটাই কমে আসে যে, ব্যবহারকারীর মনে হতে পারে ল্যাগ করছে ডিভাইস। তবে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ৯টু৫ গুগল বলছে, এটি আসলে একটি স্বাভাবিক নিরাপত্তা ফিচার। এ ছাড়াও ফোনের ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া বা ৫জি সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে তাপ কমানোর চেষ্টা করতে পারে ডিভাইস।

কিন্তু এই নিরাপত্তা ফিচারগুলোর অনুপস্থিতিতে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বেশি গরম হয়ে যাওয়া ডিভাইস। স্মার্টফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যাপক পরিমাণ তাপ সহ্য করার উপযোগী করে নির্মাণ করা হলেও একটি নির্দিষ্ট সহ্যসীমা আছে ডিপভাইসগুলোর। সেটি পার হয়ে গেলে বাড়তি তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ফোনের এসওসি চিপ। আর এসওসি চিপের ক্ষতি হলে স্রেফ ফেলে দিতে হবে ডিভাইস।

তাহলে প্রতিকার কী?

তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ফোনের নিজস্ব ফিচারগুলোর ওপর নির্ভর করার পাশাপাশি ব্যবহারকারী নিজেও কিছু সহজ কাজের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতে পারেন। সহজ-সরল হলেও দিন শেষে ডিভাইসের ব্যবহার উপযোগীতা ধরে রাখতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এ কাজগুলো।

  • ডিভাইস সরাসরি রোদের আলোয় রাখবেন না।
  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ফেলে দিন এবং হার্ডওয়্যারের ওপর চাপ ফেলে, প্রয়োজন ছাড়া এমন অ্যাপের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
  • ফোকাস মোড বা একই ধরনের ফিচারগুলো চালু রাখুন।
  • ডিভাইস রিবুট করুন।

আহামরি কিছু মনে না হলেও ডিভাইসের বড় উপকারে আসতে পারে এ কাজগুলো। যেমন, ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের ওপর চাপ ফেলে ইউটিউব এবং গেইমিং অ্যাপগুলো। এতে বাড়তি তাপ সৃষ্টি হয়ে ফোন গরম হতে থাকে।

এস২১ আলট্রা। গুজব সত্যি হলে একই চেহারায় আসবে পরের মডেলটিও। ছবি: স্যামসাং

অন্যদিকে, ফোকাস মোড বা একই ধরনের ফিচারগুলো চালু রাখলে কেবল নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ থাকে ব্যবহারকারীর হাতে। এতে হার্ডওয়্যারের ওপর চাপ সৃষ্টিকারী ‘ওজনদার’ অ্যাপগুলোর ব্যবহার হয় না।

এ ছাড়াও, ফোনের কাভার খুলে ফেলে বাড়তি তাপ কিছুটা হলেও মোকাবেলা করা যেতে পারে। ডিভাইসগুলো বাহ্যিক আঘাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে কাভার ব্যবহৃত হলেও এর কারণে আটকে যেতে পারে বাড়তি তাপ বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা। তাই ডিভাইস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম হচ্ছে মনে হলে ফোন কাভার খুলে রাখা যেতে পারে।