প্রথমবারের মতো আইএসএস-তে ‘নভোপর্যটক’

মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)’ পৌঁছেছেন কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যাওয়া চার নভোচারী। পৃথিবীর কক্ষপথে ‘বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন’ তৈরির লক্ষ্যে প্রথম ‘কার্যকর’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে এ মিশনকে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2022, 01:23 PM
Updated : 10 April 2022, 01:23 PM

‘এএক্স’ নামে পরিচিত এ মিশনটির মূল উদ্যোক্তা হিউস্টন-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এক্সিওম স্পেস’। মিশনটি ফ্লোরিডার ‘কেনেডি স্পেস সেন্টার’ থেকে স্পেসএক্স-এর ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের সাহায্যে উৎক্ষেপণ হয়েছে ৮ এপ্রিল।

স্পেস ডট কমের প্রতিবেদন বলছে, ‘এএক্স-১’ মিশনের চার সদস্যের কেউই সরকারী পেশাদার নভোচারী নন। মহাকাশে পুরোপুরি অসামরিক সদস্য নিয়ে, আইএসএস-এ এটিই প্রথম রকেট উৎক্ষেপণের ঘটনা।

মিশনটির সার্বিক নির্দেশনা দিচ্ছেন নাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী মাইকেল লোপেজ-আলেগ্রিয়া। বর্তমানে তিনি এক্সিওমের বাণিজ্যিক উন্নয়ন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি, মিশনটিতে রয়েছেন পাইলট ল্যারি কনর এবং মিশন বিশেষজ্ঞ আইতান স্টিবে ও মার্ক প্যাথি।

“এতে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হলো”--রকেটটি উৎক্ষেপণের বিষয়ে এক ওয়েববার্তায় বলেছেন এক্সিওম স্পেস-এর ক্রু সিস্টেম প্রধান জন র‍্যাকহাম।

মিশনটির সদস্যরা ১০ দিনের মধ্যে আট দিনই থাকবেন আইএসএস-এ। স্পেসএক্স রকেটের ড্রাগন ক্যাপসুল ‘অরবিটিং ল্যাব’-এ এসে ভিড়েছে ৯ এপ্রিল।

ফ্যালকন ৯ রকেটের প্রথম পর্যায়ের পঞ্চম ফ্লাইট এএক্স-১। উৎক্ষেপণের সাড়ে নয় মিনিটের মধ্যেই রকেটটির বুস্টার সফলভাবে অবতরণ করেছে স্পেসএক্স ড্রোনশিপে। আটলান্টিক মহাসাগরে নিযুক্ত ড্রোনশিপটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এ শর্টফল অফ গ্রাভিটাস’।

“প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় কঠোর পরিশ্রম করে, মিশনটির নকশা করেছি আমরা”--বলেছেন এক্সিওম স্পেসের পরিচালক ডেরেক হাসম্যান।

এএক্স-১ মিশনটির জন্য ব্যপক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সদস্যরা। পেশাদার নভোচারীদের প্রশিক্ষণে যেসব কাজ দেওয়া হয়, তাদের ঠিক একই কাজগুলো করতে হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে স্পেস ডট কম।

নিজেদের অবশ্য পর্যটক নন, বরং নভোচারী বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন মিশনের সদস্যরা।

“সম্প্রতি আপনাদের শোনা উপকক্ষের মিশনগুলো থেকে এ মিশন অনেকটাই আলাদা। আমরা মহাকাশ পর্যটক নই।” --জেফ বেজোসের ‘ব্লু অরিজিন’-এর সুপার সনিক ফ্লাইটকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন লোপেজ-আলেগ্রিয়া।

“আমার ধারণা, মহাকাশ পর্যটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তবে এর সঙ্গে এক্সিওমের কোন সম্পর্ক নেই।”

অন্যদিকে, এই মিশনকে পৃথিবীর কক্ষপথে ‘বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন’ তৈরির প্রথম প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে এক্সিওম স্পেস।

“বাণিজ্যিক ‘মানব মহাকাশ ফ্লাইট’, ‘মহাকাশ পর্যটন’, একে যাই ডাকেন না কেন, এটি শীঘ্রই ঘটছে।”-- নিজস্ব ওয়েবসাইটে লিখেছে এক্সিওম স্পেস।

“২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশনের প্রথম মডিউল উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে এক্সিওমের। প্রথম দিকে মডিউলটির সরাসরি সংযোগ থাকবে আইএসএস-এর সঙ্গে।” --বলেছেন হাসম্যান।

“২০২৪ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশ স্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে এবং আইএসএস অবসরে যাওয়ার পর, আলাদাভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে নিজস্ব বাণিজ্যিক গন্তব্য তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে এক্সিওম।”

এএক্স-১ মিশনটি আইএসএস-এ কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের প্রথম অভিযান হলেও, এটি পৃথিবীর কক্ষপথে সর্বপ্রথম অসামরিক যাত্রা নয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ইনস্পিরেশন৪’ নামের মিশনটিতে চার সদস্যকে তিন দিনের জন্য মহাকাশে পাঠিয়েছিল স্পেসএক্স।