এক সপ্তাহ আগে ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপটিতে তার কয়েকশ মাত্র অনুসারী ছিল। রাতের বেলা পছন্দের গানে লিপ-সিঙ্ক করে ভিডিও পোস্ট করাই ছিল তার কাজ।
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাশিয়া যখন ইউক্রেইন আক্রমণ করে, তখন ঘটনাত্রমে তিনি যুক্তরাজ্যে। সেখানে তিনি গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে।
কিয়েভের উপর রুশ বোমাবর্ষণের খবর তাকে আতঙ্কিত করে দেয়।
এরপর মার্তা যা করলেন তা তাকে বানিয়ে দেয় টিকটক ইনফ্লুয়েন্সার - প্রায় রাতারাতি।
২৩ শে ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ইউক্রেইনের ওপর আক্রমণে যে ভিডিওগুলি মার্তা পোস্ট করেছেন তা কয়েক কোটি ভিউ অর্জন করেছে। এই কাজ করতে গিয়েই কার্যত তিনি টিকটক দর্শকদের জন্য, বিশেষ করে তরুণদের জন্য তিনি হয়ে উঠেছেন ইউক্রেইনের সংবাদের মূল কিউরেটর।
“আমি শুধু সবাইকে জানাতে চাই যে, ইউক্রেইন কেবল ইউক্রেইনীয়দের সমস্যা নয়, এটি প্রতিটি মানুষের সমস্যা।”-- তিনি বলেন।
মার্তা ইউক্রেইনীয়, রাশিয়ান এবং ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন।
ইউক্রেইনের লোকজন চ্যানেলগুলিতে ভিডিও আপলোড করছিলেন। মার্তা সেগুলো সেইভ করতে শুরু করেন।
“আমার ফোনের পুরো মেমরি এখন সব ভিডিও, যা যা আমি পেয়েছি, তাতে ভরে গেছে।" তিনি বলেন।
তারপর তিনি ভিডিওগুলি যাচাই করতে শুরু করেন, একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক জানার জন্য পড়তে শুরু করেন এদের কমেন্ট সেকশন। “আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, লোকজন বলছে যে, ঘটনাগুলো সত্যি এবং ওই মুহূর্তেই এগুলোই ঘটছিল।
তিনি টিকটকে বেশ কিছু ভিডিও পোস্ট করে ঘুমিয়ে পড়েন।
“সকালে ঘুম থেকে উঠেই টিকটক চেক করে দেখি এরই মধ্যে ৯০ লাখ ভিউ পেয়েছে।”
‘উইটনেস’-এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর স্যাম গ্রেগরি। মানবিক সংকটের সময় কীভাবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা হয় তা তিনি দেখেন। তিনি বলছেন, টিকটকের অ্যালগরিদম ভীষণরকম বিষয়ভিত্তিক।
“আপনার আগ্রহের উপর ভিত্তি করে কনটেন্ট আপনার কাছে পরিবেশন করা হয়, আপনার ফিডের উপর নির্ভর করে নয়” -- তিনি বলেন।
"সুতরাং যদি আপনি ইউক্রেইনে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন, তবে আপনি আরও কনটেন্ট দেখাতে যাচ্ছেন যা হয় ইউক্রেইন থেকে বা ইউক্রেইন সম্পর্কে কথা বলছে।
এটি মার্তার মতো লোকদের প্রায় রাতারাতি টিকটক ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। তার ভিডিও প্রায় পৌনে দুই কোটি লাইক পেয়েছে এবং এখন তার অনুসারী দুই লাখ।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যদিও টিকটক ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও খুঁজে বের করার জন্য একটি ভাল পথ হতে পারে, তবে প্ল্যাটফর্মটিতে ভুল তথ্যও ছড়িয়ে পড়েছে।
মার্তা স্বীকার করেছেন যে কনটেন্ট যাচাই করার বিষয়টি বেশ কঠিন। একটি ভিডিও হয়তো ইউক্রেইনেরই, সেখানে লোকজন হয়তো ইউক্রেইনীয় ভাষাতেই কথা বলছেন। তবে সেগুলো ২০১৪ সালে শুরু হওয়া সংঘাতেরও হতে পারে। মার্তা স্বীকার করেছেন, ভিডিও যাচাইয়ের কাজে তিনি বিশেষজ্ঞ নন।
তিনি যেসব ভিডিও শেয়ার করেছেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিবিসিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম গুলো নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু তারপরও, তিনি বিশ্বাস করেন যে কিছু লোক প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে তার মতো সোশ্যাল মিডিয়া উৎস থেকে খবর পেতে পছন্দ করবে।
“আবার কিছু লোক পেশাদার সাংবাদিকদের, এমনকি যাচাইকৃত সূত্রও বিশ্বাস করে না।"
ইউক্রেইন থেকে উঠে আসা এক সাধারণ তরুণীর পরিচয়টি তাকে বড় গ্রাহকবেইজে গ্রহনযোগ্যতা দিয়েছে।
“এর ফলে তারা আমাকে বিশ্বাস করেন, আমার ভিডিওগুলিকে আরও বেশি বিশ্বাস করেন।”
ইউক্রেইনে থাকা পরিবারের জন্য ভয়ে আছেন মার্তা। তিনি তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু এই ভিডিওগুলো প্রচারের মাধ্যমে তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি বিশ্বকে, বিশেষ করে তরুণ শ্রোতাদের সাহায্য করছেন, ঘটনাস্থলে আসলেই কী ঘটছে তা দেখার জন্য।
আর যুক্তরাজ্যে আটকে থেকে কী-ই বা করতে পারেন তিনি?