রাশিয়ান নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে না বাইন্যান্স

রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের নিজস্ব সেবা থেকে বঞ্চিত করতে রাজি নন শীর্ষ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ‘বাইন্যান্স’ প্রধান চ্যাংপেং ঝাও। দেশটির সাধারণ নাগরিক আর রাজনীতিবিদদের একই মাপকাঠিতে ফেলতে রাজি নন তিনি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2022, 11:50 AM
Updated : 3 March 2022, 11:50 AM

“রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই যুদ্ধের পক্ষে নন,” বিবিসিকে বলেছেন বাইন্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী ঝাও।

সম্প্রতি রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলোকে রাশিয়ার নাগরিকদের জন্য সেবা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেইন। ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধে “ক্রিপ্টো সংঘাতে” পরিণত হতে পারে– এমন আশঙ্কার কথাও বলেছেন এক ক্রিপ্টো মুদ্রা বিশেষজ্ঞ।

শীর্ষ ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাশিয়ার রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের জন্যেও ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেনের পথ বন্ধ করে দাওয়ার আহ্বান জানিয়ে রোববার টুইট করেছেন ইউক্রেইনের উপ প্রধানমন্ত্রী মিখাইলো ফেদোরভ।

অন্যদিকে, ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর, প্রাথমিক পর্যায়ে দরপতন হলেও গেল কয়েক দিনে বিটকয়েনের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

বাণিজ্যিক ও আর্থিক অবরোধের মুখে রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী ক্রিপ্টো মুদ্রার দিকে ঝুঁকবেন, এমন সন্দেহ বাজারসংশ্লিষ্টদের। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ ক্রিপ্টো মুদ্রাকে আখ্যা দিয়েছে “পুতিনের ওপর অবরোধ ধ্বংসকারী সুপার-উইপন” হিসেবে।

কিন্তু ঝাও বলছেন, “আমরা কোনো মানুষের বিরুদ্ধে নই।”

“সাধারণ মানুষ আর যুদ্ধ বাঁধানো রাশিয়ান রাজনীতিবিদদের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য করি আমরা। সাধারণ রাশিয়ানদের অনেকেই যুদ্ধ চান না। আমরাও পুরো শিল্প নিয়ন্ত্রণ করি না।”

“আমি নিজে আমাদের অবরোধের তালিকা প্রকাশ করতে পারি, আপনিও তা করতে পারেন… কিন্তু ভেবে দেখুন, কেউ সেটা মানবে না। এতে শুধু ব্যবহারকারীরা আরো ছোট প্ল্যাটফর্মমুখী হবে” -- যোগ করেন তিনি। 

বিবিসিকে ঝাও সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে এ প্রসঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে বাইন্যান্স। বিবৃতিতে কয়েক কোটি “নির্দোষ ব্যবহারকারী”র অ্যাকাউন্ট একতরফভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

“ক্রিপ্টোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বের সবখানের ব্যবহারকারীদের আরো বেশি আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া,” বিবিসিকে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এমন পরিস্থিতিতে একতরফা নিষেধাজ্ঞা এই প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্যকেই ভেস্তে দেবে বলে মন্তব্য প্রতিষ্ঠানটি। সাধারণ ব্যবহারকারীদের অবরোধের প্রভাব থেকে যতোটা সম্ভব নিরাপদ রেখে বাণিজ্যিক ও আর্থিক অবরোধ কার্যকর করা হচ্ছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।

প্রশ্ন মূল্যবোধের

বিবিসি’কে ঝাও বলেন, “আমার মনে হয়, রাশিয়ার কয়েকশ মানুষ আন্তর্জাতিক অবরোধ তালিকাগুলোতে আছে, তাদের বেশিরভাগই রাজনীতিবিদ। আমরা খুব কঠোরভাবে সেই তালিকা মেনে কাজ করছি।”

“কিন্তু পুরো জনসংখ্যাকে অবরোধে ফেলার মতো অবস্থায় নেই আমরা। আমরা রাজনৈতিক নই- আমরা যুদ্ধ বিরোধী এবং আমরা মানুষকে সহযোগিতা করতে চাই। 

রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেনের সেবা থেকে বঞ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ঝাও-এর দেখানো পথে হেঁটেছেন ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেনের আরেক প্রতিষ্ঠান ‘ক্র্যাকেন’-এর প্রধান নির্বাহী জেসি পাওয়েল। “রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের সেবা দেওয়া” বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনিও।

এই পদক্ষেপ বিটকয়েনের “লিবারটারিয়ান বা স্বাধীনতাবাদী মূল্যবোধ” বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 

“অবরোধ এড়াতে, নিজস্ব সঞ্চয় বাঁচানোর জন্য বা ভেঙে পড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাঁচতে অনেকেই সমাধান হিসেবে ক্রিপ্টো মুদ্রার দিকে ঝুঁকছেন।” এই পরিস্থিতি ইতিহাসের প্রথম “ক্রিপ্টো সংঘাতে” পরিণত হতে পারে বলে বিবিসি’র কাছে মন্তব্য করেছেন ‘সেন্টার ফর ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ’-এর পরিচালক টম কিটিং।

ব্লকচেইন ডেটা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ‘চেইনঅ্যানালাইসিস’-এর তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ক্রিপ্টো মুদ্রার মাধ্যমে আটশ ৬০ কোটি ডলারে মুদ্রা পাচার করা হয়েছে।

আর ফাইন্যানশিয়াল টাইমস বলছে, ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার রুবলের বিনিময়ে বিটকয়েন ও অন্যান্য ক্রিপ্টোমুদ্রার বেচা-কেনা বেড়েছে দ্বিগুণ।