যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ায় ১০ হাজার আইটি কর্মীর পিটিশন

হাজার হাজার রাশিয়ান প্রযুক্তি কর্মী ইউক্রেইনে তাদের সরকারের সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। যুদ্ধের বিরোধিতায় রাশিয়ান নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান আহ্বানে এবার যোগ হলো প্রযুক্তিকর্মীরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2022, 03:56 PM
Updated : 28 Feb 2022, 03:56 PM

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

দুই দিন আগে নাতালিয়া লুকিয়ানচিকোভা নামে এক প্রযুক্তি কর্মী এই পিটিশন চালু করে তার ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করেন। এরই মধ্যে দেশটির সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট ভিকে, সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি ল্যাব এবং অনলাইনে চাকরি খোঁজার প্ল্যাটফর্ম হেডহান্টারসহ রাশিয়ার প্রথম সারির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এসে যোগ দেন এই দাবিতে।

“আমরা, রাশিয়ান আইটি শিল্পের কর্মীরা ইউক্রেইন অঞ্চলে সামরিক অভিযানের সুস্পষ্ট বিরোধিতা করছি” পিটিশনে বলা হয়েছে। “আমরা যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় এমন যে কোনও শক্তি প্রদর্শনকে অযৌক্তিক বলে মনে করি এবং উভয় পক্ষের মানুষের হতাহতের কারণ হতে পারে এমন যে কোনো উদ্যোগের বিপরীতে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।”

“আমাদের দেশগুলো সব সময় একে অপরের কাছাকাছি ছিল। আজ আমরা আমাদের ইউক্রেইনীয় সহকর্মী, বন্ধু এবং আত্মীয়দের নিয়ে উদ্বিগ্ন।”

এই পিটিশনকে রাশিয়ার ভেতরে আগ্রাসন বিরোধীতার সর্বশেষ উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন দৈনিকটি। দেশটির প্রথম সারির কৌতুকাভিনেতা, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার অভিযান শুরুর পরপরই, হাজার হাজার রাশিয়ান সারা দেশে প্রতিবাদ করেছে। এর ফলে দেশটির ৪৭টি শহরে এক হাজার সাতশ’রও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করার খবর দিয়েছে অধিকারকর্মীদের সংগঠন ওভিডি-ইনফো।

রাশিয়ায় স্বতঃস্ফূর্ত গণবিক্ষোভ অবৈধ এবং এর পরিণতিতে জেল ও জরিমানার রেওয়াজ রয়েছে।

ছবি: রয়টার্স

“আমি চাই আমার কণ্ঠ যেন তাদের কানে যায়। শুধু আমিই নই, যারা যুদ্ধ চায় না, তাদের সবাই তাদের বন্ধু এবং পরিচিতদের জন্য ভয়ে আছেন।”-- পিটিশনের উদ্যোক্তা লুকিয়ানচিকোভা লিখেছেন ফেইসবুকে।

“আমি জানি না, এতে আদৌ কাজ হবে কিনা। তবে আমি জানি জোটবদ্ধ হওয়ায় অনেক সময় ফল পাওয়া যায়। এটি মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে যে তারা একা নন।”

রাশিয়ার আইটি সেক্টর দেশটির অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গবেষণা সংস্থা আইডিসির মতে, ২০১৯ সালে ১৩ লাখেরও বেশি নাগরিক এই শিল্পে যুক্ত ছিলেন। রাশিয়ার জিডিপিতে আইটি সেক্টরের অবদান ২.৭ শতাংশ।

হাজার হাজার রাশিয়ান বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী এবং ডেভেলপার মার্কিন প্রযুক্তি খাতেও অবদান রাখছেন। গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সার্গেই ব্রিন এবং ইথেরিয়াম ব্লকচেইন সিস্টেমের স্রষ্টা ভিটালিক বুটেরিন– দুজনেই শিশু বয়সে অভিবাসি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

বুটেরিন বুধবার পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং টুইটারে লেখেন এই যুদ্ধ আদতে “ইউক্রেইনীয় ও রাশিয়ান জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ”।

লুকিয়ানচিকোভা পিটিশনটি তৈরি করার পরপরই এটি রাশিয়ান প্রযুক্তি কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায় এবং সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধু এবং সহকর্মীদের মধ্যে শেয়ার করতে শুরু করে।

রাশিয়ার প্রথম সারির একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রযুক্তি কর্মী আলেকজান্ডার টমাস বলেন, তার বিশ্বাস, স্বাক্ষরকারীরা সবাই রাশিয়ার অধিবাসী বা রাশিয়ান বংশোদ্ভূত। তিনি নিজেও এতে স্বাক্ষর করেছেন।

“এই আবেদনের সঙ্গে কোনও বড় নেতার নাম ছিল না। ফলে, সবাই এতে স্বাক্ষর করেছে এবং টেলিগ্রাম এবং অন্যান্য মাধ্যমে সবার সঙ্গে শেয়ার করে নিয়েছেন।”

লুকিয়ানচিকোভা এবং টমাস দুজনেই কথা বলার আগে শর্ত দিয়েছেন যেন তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা না হয়।

টমাস বলেন, তার বেশিরভাগ বন্ধু ও সহকর্মী প্রযুক্তি বা সাংবাদিকতায় কাজ করেন। তাদের বেশিরভাগই এই হামলার বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন। কেউ কেউ সমাবেশেও যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মূলত ইউক্রেইন ও রাশিয়ার সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করবে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিশোধমূলক নিষেধাজ্ঞা দেশটির ধনী ও অভিজাতদের ক্ষতি করবে না। দিনের শেষে এই নিষেধাজ্ঞার আঘাত আসবে ডাক্তার, শিক্ষক, পেনশনভোগীদের ওপর, যাদের বেঁচে থাকার জন্য তেমন বেশি অর্থ লাগে না।” – টমাস যোগ করেন।