ডিডিওএস সাইবার আক্রমণের শিকার ইউক্রেইন

আবারো সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে ইউক্রেইন । ইউরোপীয় দেশটির সরকার বলছে “এবারের আক্রমণ হয়েছে একেবারে ভিন্ন মাত্রায়”।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2022, 09:04 AM
Updated : 24 Feb 2022, 09:04 AM

এর আগে বুধবার, ইউক্রেইনের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং সরকারি বিভাগের ওয়েবসাইট অফলাইনে চলে যায়।

ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি কোম্পানি নেটব্লকস এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, 'সাম্প্রতিক ডিডিওএস হামলার সঙ্গে এই ঘটনার মিল রয়েছে।”

ডিডিওএস আক্রমণ কী?

ডিডিওএস আক্রমণের ক্ষেত্রে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো সার্ভারে, ‘ডেটা রিকোয়েস্ট’ আকারে একসঙ্গে এতো বেশি ইন্টারনেট ট্রাফিক পাঠানো হয় যে সার্ভারটি তা সামাল দিতে না পেরে অচল হয়ে যায় এবং এর ফলে অফলাইনে চলে যায় ওই ওয়েবসাইট বা ইন্টারনেটনির্ভর সেবাটি। আগে একটি উৎস থেকে এই আক্রমণ চালানো হতো এবং সেটির নাম ছিল ডিওএস বা ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস আক্রমণ।

এই একই কাজ যখন বিভিন্ন উৎস থেকে একযোগে চলে তখন আক্রমণের তীব্রতা অনেক বাড়ানো সম্ভব হয় এবং বিভিন্ন উৎস আক্রমণের কাজটি ভাগ করে নেয় বলে একে বলা হয় ডিডিওএস বা ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস’ আক্রমণ।

‘আক্রমণ চলছেই’

“আমাদের দেশের ওপর আরেকটি গণ ডিডিওএস আক্রমণ শুরু হয়েছে।” টেলিগ্রামে লিখেছেন ইউক্রেইনের ডিজিটাল রূপান্তর মন্ত্রী, মিখায়লো ফেদোরভ।

নেটব্লকসের দেওয়া তথ্যের সূত্র টেনে বিবিসি’র প্রতিবেদন বলছে, বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া আক্রমণ পর দিন তীব্র আকার ধারণ করে।

বিবিসিকে এক গবেষক বলেছেন, “ইউক্রেইনের সামরিক ও ব্যাংকিং ওয়েবসাইটগুলো সাইবার হামলার পরপরই দ্রুততর সময়ের মধ্যে ফিরেছে, এর কারণ হতে পারে প্রস্তুতি এবং সামলে নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে।

“তারপরও আক্রমণ চলমান রয়েছে। ইউক্রেইনের নিরাপত্তা পরিষেবায় বিলম্ব এবং বিভ্রাট চলছেই, যা তীব্রতার কথাই বলে।”

গত সপ্তাহে একই ধরনের একটি আক্রমণ দেশের কয়েকটি ওয়েবসাইট অফলাইনে চলে যায়।

ক্রেমলিনের সরাসরি নির্দেশে রাশিয়ান হ্যাকাররা এই হামলার জন্য দায়ী বলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাশিয়ার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন সাইবার কর্তৃপক্ষ।

তবে মস্কো এর সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে এবং সর্বশেষ হামলার জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি পর্যায়ে কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি।

জানুয়ারী মাসেই ইউক্রেইন সরকার আরেকটি ডিডিওএস আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে। প্রায় ৭০টি সরকারী ওয়েবসাইটকে অকেজো করে দেওয়া ওই ঘটনায় বেশ কিছু সাইট পাল্টে সেখানে আরও ভয়াবহ পরিণতির জন্য ইউক্রেইনবাসীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।

বেশিরভাগ সাইট কয়েক ঘন্টার মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে।

হাইব্রিড যুদ্ধ

ইউক্রেইনের কাছ থেকে সাহায্যের আহ্বানের পর মঙ্গলবার ইউরোপ জুড়ে একটি সাইবার র‌্যাপিড-রেসপন্স টিম (সিআরআরটি) মোতায়েন করার কথা জানায় ইইউ।

ছয়টি স্বেচ্ছাসেবী দেশের বিশেষজ্ঞদের দলটি এই সর্বশেষ হামলার বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সহায়তা করছে কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।

রাশিয়ার তথাকথিত “হাইব্রিড ওয়ারফেয়ারের” বিষয়টি বিভিন্নভাবেই প্রচারিত হয়েছে যেটি আসলে প্রচলিত সামরিক অভিযানের সঙ্গে সাইবার আক্রমণকে জুড়ে দেওয়ার ঘটনা।

২০০৮ এবং ২০১৪ সালেও রাশিয়ান অনুপ্রবেশের সময় জর্জিয়া এবং ক্রাইমিয়ায় ডিডিওএস আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল।

বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলার জন্য রাশিয়ান সরকারী সমর্থনপুষ্ট হ্যাকারদের দোষারোপ করেছে ইইউ, যুক্তরাজ্য এবং ইউক্রেইন। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য এদের দায়ী করা হয়।

মস্কো এই হামলার পেছনে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে এ ধরনের দাবিকে ‘রুশোফোবিক’ বা রাশিয়াভীতি বলে অভিহিত করেছে।