র‌্যানসমওয়্যারের ৭৪% অর্থ যাচ্ছে রাশিয়ার হ্যাকারদের পকেটে

র‌্যানসমওয়্যার হামলায় মুক্তিপণ হিসেবে নেওয়া অর্থের একটা বড় অংশ যাচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে জড়িত হ্যাকারদের পকেটে। রাশিয়া বরাবর সাইবার অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে গেল বছরে ৪০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ক্রিপ্টো মুদ্রা গেছে রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন হ্যাকারদের পকেটে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2022, 10:50 AM
Updated : 15 Feb 2022, 10:50 AM

“ক্রিপ্টোকারেন্সি ভিত্তিক অর্থ পাচারের একটা বড় অংশ” রাশিয়ার ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে হাতবদল হয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সাম্প্রতিক গবেষণার কাজটি করেছে ক্রিপ্টোমুদ্রাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেইনঅ্যানালিসিস। ব্লকচেইনে লেনদেনের উন্মুক্ত রেকর্ড বিশ্লেষণ করে পরিচিত হ্যাকারদের দলগুলোর ডিজিটাল ওয়ালেটে অর্থের লেনদেন অনুসরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্টের ভিত্তিতে রাশিয়াভিত্তিক হ্যাকারদের দলগুলো চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

  • র‌্যানসমওয়্যারের কোড এমনভাবে লেখা হয় যে ভুক্তভোগীর কম্পিউটার রাশিয়া বা সিআইএস অন্তর্ভূক্ত কোনো দেশের হলে ফাইলের কোনো ক্ষতি করে না র‌্যানসমওয়্যারগুলো।
  • দলগুলো রাশিয়ার ভাষায় পরিচালিত ফোরামগুলোতে রাশিয়ার ভাষাতেই যোগাযোগ করে।
  • দলটি ‘ইভিল কর্প’ সংশ্লিষ্ট। সাইবার অপরাধীদের দলটিকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র।

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে রাশিয়া এবং আশপাশের সিআইএসভুক্ত দেশগুলোতে অনেকগুলো সাইবার অপরাধী দল সক্রিয় আছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর সংগঠন ‘কমনওয়েলথ অফ ইনডিপেনডেন্ট স্টেট (সিআইএস)’।

তবে, গবেষণায় কেবল হ্যাকারদের দলনেতাদের ওয়ালেটের লেনদেন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। মূল দলের কর্মকাণ্ডের বাইরেও বিভিন্ন সাইবার অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নেয় ওই হ্যাকাররা। ক্ষেত্রবিশেষে ভাড়া দেওয়া হয় হ্যাকিংয়ের নানা টুল। তাই এককভাবে কাজ করা হ্যাকারদের অবস্থান বা বড় গ্যাংগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি চেইনঅ্যানালিসিস।

আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যসেবা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলোনিয়াল পাইপলাইনে র‌্যানসমওয়্যার হামলার মতো বড় কয়েকটি ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের সাইবার অপরাধ মোকাবেলার চেষ্টা বেড়েছে ২০২১ সালে। রোমানিয়া, ইউক্রেইন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং কুয়েত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সন্দেহভাজন হ্যাকারদের। হ্যাকারদের ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে কয়েক লাখ ডলার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০২১ সালেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সংবাদকর্মীদের কাছে দাবি করেছিলেন, তার কাছে থাকা তথ্য বলেছে, “রাশিয়ার সেই দেশগুলোর তালিকায় নেই যারা নিজেদের ভূখণ্ড থেকে ব্যাপক পরিমাণ সাইবার আক্রমণ দেখছে।”

কিন্তু, জানুয়ারি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে হ্যাকারদের দল ‘আরইভিল’-কে ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পারস্পারিক সহযোগিতার বিরল নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে ঘটনাটিকে।

চেইনঅ্যানালিসিসের প্রতিবেদন বলছে, র‌্যানসমওয়্যার থেকে আসা সকল আয়ের ৯.৯ শতাংশ যাচ্ছে ‘ইভিল কর্প’-এর পকেটে। হ্যাকারদের দলটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র পরোয়ানা জারি করে রাখলেও দলটির সদস্যরা রাশিয়ায় অবাধে চলা ফেরা করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

বিবিসি’র নভেম্বর মাসের এক তদন্তে উঠে এসেছিল, ‘ইভিল কর্প’-এর নেতৃস্থানীয়দের একজন হিসেবে বিবেচিত ইগর টুরাশেভ মস্কোর ‘ফেডারেশন টাওয়ার’-এর একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। রাশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ঠিকানাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভবনটিকে।

চেইনঅ্যানালিসিসের প্রতিবেদন বলছে, ওই টাওয়ারে অবস্থিত ক্রিপ্টো মুদ্রা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে অর্থ পাচার করছে হ্যাকাররা; ডিজিটাল ওয়ালেটের ক্রিপ্টো মুদ্রাকে পরিণত করা হচ্ছে মূল ধারার মুদ্রায়।

“যে কোনো প্রান্তিকে মস্কোর ক্রিপ্টো মুদ্রা কেন্দ্রিক ব্যবসা গুলোর ২৯ থেকে ৪৮ শতাংশ তহবিল আসছে বেআইনি অথবা ঝুঁকিপূর্ণ ঠিকানা থেকে।”-- বলেছেন গবেষকরা।