ফেইসবুকের পরিচালনা পর্ষদ ছাড়ছেন পিটার টিল

ফেইসবুক ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে পুরনো বিনিয়োগকারীদের একজন। ফেইসবুকের পরিচালনা পর্ষদের সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে বিতর্কিত সদস্যদের একজন পিটার টিল বছর শেষ হওয়ার আগেই তার পদ ছেড়ে সরে দাঁড়াবেন বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2022, 12:41 PM
Updated : 8 Feb 2022, 12:41 PM

পিটার টিল ফেইসবুকের পরিচালনা পর্ষদে আছেন ২০০৫ সাল থেকে। ফেইসবুক প্রতিষ্ঠার এক বছর পরেই বিনিয়োগকারী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মেটা’র বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার বৈঠকের আগ পর্যন্ত তিনি পরিচালকের পদে বহাল থাকবেন। তারপর আর তিনি পরিচালক হিসেবে পুনঃনির্বাচনের জন্য দাঁড়াবেন না বলে জানিয়েছে সিএনএন । বৈঠকের দিন এখনো ঘোষণা করেনি মেটা। সাধারণত মে মাসেই শেয়ার মালিকদের বৈঠকের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।

একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন ৫৪ বছর বয়সী টিল। আর্থিক লেনদেন প্ল্যাটফর্ম পেপাল এবং ডেটা বিশ্লষক প্রতিষ্ঠান পালানটির টেকনোলজিস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এ ছাড়াও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডার্স ফান্ডেরও অংশীদার তিনি। লিংকডইন এবং ইয়েলপ-এর মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিককার বিনিয়োগকারীদের একজন ছিলেন টিল।

বিপরীতমুখী চিন্তাধারার জন্য প্রযুক্তি শিল্পের বিতর্কিত চরিত্র হিসেবে বিবেচিত টিল। তরুণদের কলেজ ফাঁকি দিতে বলা থেকে শুরু করে ভাসমান শহরে বিনিয়োগের মতো কাজের জন্য সমালোচিত হয়েছেন তিনি। তালিকায় আরও আছে ‘জিরো টু ওয়ান’ বইটি লিখে সমালোচিত হওয়ার ঘটনা। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ‘বেস্ট সেলার’ তালিকায় ওঠা বইটিতে টিলের বক্তব্য ছিল, মনোপলি অর্জন করাই ব্যবসা উদ্যোক্তাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

টিলের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এখানেই শেষ হয়নি। ‘ক্লিয়ারভিউ এআই’-এর বিনিয়োগকারীদের একজন ছিলেন তিনি। ফেইশল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়েক কোটি ছবির ডেটাবেইজ বানিয়ে বিতর্কিত হয়েছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও ‘হাল্ক হোগান’ হিসেবে পরিচিত রেসলার টেলি বোলিয়া’র একটি মামলার তহবিল জোগাড় দিয়েছিলেন টিল। ওই মামলার লড়তে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল ‘গকার মিডিয়া’। ব্যক্তিগত জীবনে টিল একজন সমকামী, এবং তার ব্যক্তিগত এই তথ্যটি ২০০৭ সালে ফাঁস করেছিল ‘গকার মিডিয়া’র প্রযুক্তিবিষয়ক ব্লগ ‘ভ্যালিওয়্যাগ’।

সিএনএন বলছে, ফেইসবুকের সবচেয়ে পুরনো বিনিয়োগকারীদের একজন হিসেবে জাকারবার্গের খুব কাছেন মানুষ ছিলেন টিল।

“পিটার আমাদের পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি যা করেছেন তার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বিশ্ব, অর্থনীতি এবং ব্যবসা নিয়ে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন তিনি।”--সোমবারের এক বিবৃতিতে বলেছেন জাকারবার্গ।

অন্যদিকে, নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন টিল। চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে মধ্যবর্তী নির্বাচন। ওই নির্বাচনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন এই ধনকুবের। ২০১৬ সালেও ট্রাম্পের নির্বাচন তহবিলে সাড়ে ১২ লাখ ডলার দিয়ে সিলিকন ভ্যালিতে সমালোচিত হয়েছিলেন টিল।

সিএনএন বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাকারবার্গের উপর টিলের প্রভাব নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন সমালোচকরা। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি জটিলতার মুখে পড়েছে ফেইসবুক। টিলের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে ফেইসবুকের পরিচালনা পর্ষদ সবচেয়ে রক্ষণশীল সদস্যকে হারাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সংবাদমাধ্যমটি।