সাক্ষাৎকারে অ্যারিনা অফ ভ্যালর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ওরিয়েন্টাল ফিনিক্স

হয়ে গেল এরিনা অফ ভ্যালর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালেতে জয়ী দলের সাক্ষাৎকার নিয়ে আজকের আয়োজন-

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2022, 12:56 PM
Updated : 27 Jan 2022, 01:21 PM

আপনার দলের সদস্যদের ও খেলোয়াড়দের নাম বলুন

আমাদের দলের নাম ওরিয়েন্টাল ফিনিক্স। এতে সুগারকিড নামে পরিচিত আসাদুল্লাহ আল গালিব, ছিলেন ম্যানেজার, ডেথলি নামে পরিচিত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ছিলেন দলনেতা। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বিস্ট নামে পরিচিত ফাহরাজ জামিন স্পর্শ, মি.চার্মিং নামে পরিচিত নাফিস আহমেদ, ওয়ার্থলেস নামে পরিচিত আবরার শাহরিয়ার সুবাত, পিকা পিকা নামে পরিচিত ফারদিন হাসান এবং সাইসেন নামে পরিচিত শেখ মতিউর রহমান

আমাদেরকে আপনাদের যাত্রা সম্পর্কে বলুন। গেইমিং-এ কিভাবে এলেন? মোবাইল মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন ব্যাটল অ্যারিনা (মোবা) গেইম খেলতে কিভাবে আগ্রহী হলেন?

উত্তর: অভিযাত্রাটি আমাদের জন্য সহজ ছিলো না। আমরা বিগত চার বছর ধরে মোবা গেইমস খেলছি। কিন্তু এই দলের সমন্বয়ে আমরা দুই বছর ধরে খেলছি। খেলাটির প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা থেকে আমরা মোবা গেইমস খেলি। আমরা লিগ অব লিজেন্ডস, ওয়াইল্ড রিফ্টসহ বিভিন্ন মোবা গেইমস খেলে থাকি। আমরা অ্যারিনা অফ ভ্যালর-এর মতো 5v5 মোবা গেইমস খেলতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করি। মাঝে-মাঝে মোবা গেইমস বেশ খেলা কঠিন মনে হয়, কিন্তু প্রতিযোগী খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সবসময় বড় টুর্নামেন্টগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকি। বিগত দিনে আমরা এই টুর্নামেন্টের মতো এত বড় কোন টুর্নামেন্টে খেলিনি। অন্যান্য দেশে আরও বড় সুযোগ ও টুর্নামেন্টগুলো সবসময় আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আমরা আশাবাদী যে আমরা একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলবো।

আপনার ব্যক্তিগত জীবনে এমন কোন চ্যালেঞ্জ ছিলো যা আপনাকে এ জাতীয় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পথে কিংবা গেইমিং ক্যারিয়ার শুরু করায় বাধা সৃষ্টি করেছিলো?

উত্তর: এটি সত্যি যে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়, কিন্তু সকল প্রশংসা আল্লাহর যে আমরা এ পরীক্ষায় উতরে গেছি। সাইসেন-এর অনেক শারীরিক সীমাবদ্ধতা ছিলো, কিন্তু খেলাটির প্রতি তার ভালোবাসা তাকে শক্তিশালী করে তুলেছে এবং সে টুর্নামেন্টে যোগ দিয়েছে। এই টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে আমরা যে আত্মত্যাগ করেছি তার ফলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। এমনকি আমাদের দলের কোন স্পন্সর বা কোচ ছাড়াই আমরা এই সাফল্য পেয়েছি। আগে যেমনটা বলেছি, আমাদের প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে আমরা এই টুর্নামেন্টের মতো খুব বেশি টুর্নামেন্ট ও ‘ল্যান’ খেলিনি, যার ফলে অনেকবারই আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমাদের দলের সদস্যদের পরস্পরের সাথে দৃঢ় বন্ধনের কারণেই আমরা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি।

ইস্পোর্টস আপনাদের ক্যারিয়ারকে কীভাবে বদলে দিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: খেলাটির প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা থেকে আমরা মোবা গেইমস খেলি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা এর পেছনে সম্পূর্ণ আত্মনিয়োগ করতে পারবো না এবং এটিকে আমাদের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবো না, কারণ এখনও আমাদের সামনে খুব বেশি সুযোগ আসেনি। আমি বরং বলবো ইস্পোর্টস আমাকে একটি পরিবার দিয়েছে এবং আমি যা করতে চাই সেটি করার সক্ষমতা দিয়েছে। আমরা এখন গর্বভরে বলতে পারি যে আমরা ইস্পোর্টস খেলোয়াড় এবং আমরা বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি।

মোবা গেইমস ও অ্যারিনা অফ ভ্যালর চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি কোথা থেকে উৎসাহ পান?

উত্তর: একসাথে খেললে আমরা কখনোই বিরক্ত হই না। আমরা আমাদের মতো করে সময় ব্যয় করতে পারি এবং এর ফলে আমাদের সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মোবা গেইমসের জন্য অনেক ধরনের কৌশল, কর্মপন্থা, নিখুঁত পরিকল্পনা প্রভৃতি দরকার। আমরা নিজেরাই নিজেদের পরিকল্পনা তৈরি করি। আমরা যখন দেখি যে অ্যারিনা অফ ভ্যালর-এর মতো একটি মোবা গেইম আমাদের মতো খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিচ্ছে যাতে আমরা আমাদের নিজস্ব গেইমিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারি, এটি আমাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায়।

বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে বড় ইস্পোর্টস টুর্নামেন্ট জিতে কেমন লাগছে?

উত্তর: আমাদের টিম সত্যিই আনন্দিত, কারণ আমাদের সকল কঠোর পরিশ্রম সফল হয়েছে। অ্যারিনা অফ ভ্যালর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় ‘ল্যান’ টুর্নামেন্ট। এটি ছিলো দারুণ এক অভিজ্ঞতা, এবং টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের দলের সবাই সত্যিই আনন্দিত।

টুর্নামেন্টে আপনাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তিমত্তা কি ছিলো?

উত্তর: টুর্নামেন্টে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো আমাদের দলনেতার কথা মেনে চলা, আমাদের পরিপক্কতা ও দলের সদস্যদের মধ্যকার বন্ধন।

ছবি: অ্যারিনা অফ ভ্যালর বাংলাদেশ

টুর্নামেন্টে ইয়োরোজু্ইয়া, উই ইস্পোর্টস, মার্টারস প্রভৃতির মতো অনেক বড়-বড় নাম ও পুরনো দল ছিলো। এই দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করতে কেমন লেগেছে?

উত্তর: আমরা সবাই একটু স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম কারণ যে কোনো দলই জিততে পারতো। ইয়োরোজু্ইয়া-কে হারানো সম্ভবত আমাদের সেরা মুহূর্ত, কারণ তারা চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলছিলো ও তাদের হারানো সহজ ছিলো না। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিটি খেলায় নিজেদের শান্ত রেখেছি এবং কম ভুল করেছি যার কারণে আমরা ইয়োরোজু্ইয়া, উই ইস্পোর্টস ও মার্টারস-এর মতো বড় বড় দলগুলোর সাথে জয় পেয়েছি। আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ আটটি দলকে সম্মান করি এবং তারা আমাদের সমপর্যায়ের।

আপনি ও আপনার দলের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে কিছু বলুন। আপনারা কীভাবে একসঙ্গে হলেন? কোথায় মিলিত হয়েছিলেন?

উত্তর: এটি অনেক লম্বা গল্প। আমরা অনেকবার আমাদের টিমের সমন্বয় পরিবর্তন করেছি। কিন্তু গত দুই বছর, আমরা একই দলে একসাথে খেলছি। এর মধ্যে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে কিন্তু এর ফলে আমরা আরও শক্তিশালী হয়েছি।

গ্র্যান্ড ফিনালের প্রথম ম্যাচটি ইয়োরোজু্ইয়া-এর বিরুদ্ধে জিতে কেমন লেগেছিলো? তারা অনেকের মতেই বাংলাদেশের সেরা দল।

উত্তর: ইয়োরোজু্ইয়া-এর বিরুদ্ধে খেলা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন ব্যাপার ছিলো। ফাইনালে যাত্রার শুরুতে আমাদেরকে তাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এর ২টি দিক ছিল। প্রথমত, আমরা যদি খেলাটিতে জিতি, সেক্ষেত্রে ট্রফি না জিতে আমরা বাড়ি যাচ্ছি না। কিন্তু আমরা হেরে গেলে, আমাদের মানসিক জোর কিছুটা কমে যেত। নিখুঁত হিসেব-নিকেশ ও সঠিক কৌশলে খেলার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। ইয়োরোজু্ইয়া পুরো খেলায় প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছে কিন্তু শেষের দিকে তারা একটি ভুল করে বসে এবং আমরা সে সুযোগটি নিই ও খেলা জিতে যাই।

উই ইস্পোর্টস আর্মাডা আপনাদের দলকে চট্টগ্রাম শহর কোয়ালিয়ারের ফাইনালে হারিয়েছে, কিন্তু এবার আপনারা তাদেরকে ২-০-তে হারিয়েছেন। এর মধ্যে কী বদলেছে এবং জিতে আপনাদের কেমন লেগেছে আমাদের বলুন।

উত্তর: আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করি যে প্রত্যাবর্তন রাজকীয় হয়। আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে খেলায় কিছু সমস্যা ও ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম ‘ল্যান’ ফাইনালে আমরা আমাদের শতকরা একশ’ ভাগ দিতে পারিনি। ওটা অপ্রত্যাশিত ছিলো, কিন্তু আমরা সেটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। এ ছাড়া আমরা একই প্রতিদ্বন্ধীর কাছে দুইবার হারি না।

গ্র্যান্ড ফিন্যালে’র চূড়ান্ত মুহূর্তগুলো সম্পর্কে কিছু বলুন। জেতার জন্য আপনাদের কি নির্দিষ্ট কোন কৌশল ছিলো? আপনারা কোন কোন বিষয় ও চালের উপর নজর দিয়েছেন?

উত্তর: চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা উই ইস্পোর্টস আর্মাডা-এর মুখোমুখি হয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত আমরা যেহেতু তাদের একবার মোকাবেলা করেছি, আমরা তাদের কৌশল জানতাম এবং তাদের দুর্বল দিকগুলোতে নজর দিয়েছিলাম। তাদের দুর্বলতাগুলো নিয়ে আমরা কাজ করেছি, আমাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছি, এবং ফাইনাল জিতে নিয়েছি। আমাদের এক ও অদ্বিতীয় কর্মপন্থা ছিলো নিজের দলের সদস্যদের উপর আস্থা রাখা।

সার্বিকভাবে আপনার গেইমিং কিংবা অ্যারিনা অফ ভ্যালর খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মজার কিছু শেয়ার করতে চান?

উত্তর: অ্যারিনা অফ ভ্যালর সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ গেইমগুলোর একটি। আমরা এত বেশি মোবা গেইমস খেলেছি যে মাঝে-মাঝে আমরা কিছু শব্দ গুলিয়ে ফেলি, যেমন, “ড্রাগন”-কে “লর্ড” বলে ফেলা।”

আপনার ব্যক্তিগত ও গেইমিং জীবনের স্মরণীয় কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চান?

উত্তর: টুর্নামেন্ট চলাকালে আমাদের সহযোদ্ধাদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো সবচেয়ে আনন্দদায়ক ছিলো। আমরা প্রথমবারের মতো সাইসেন-এর সাথে পরিচিত হয়েছি, এবং দল হিসেবে আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি। জানুয়ারি’র শেষ দিকে বিজয়কে দল হিসেবে উদযাপনের জন্য আমরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।

এই বিজয়ে আপনাদের দলের অনুভূতি কী? আপনাদের পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

উত্তর: এই বিজয় আমাদের অনুপ্রেরণা, আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে এবং বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে। এখন আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা এশিয়ান অলিম্পিকসে ট্রফি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট জেতা। বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করবো।

এশিয়ান অলিম্পিকসে অ্যারিনা অফ ভ্যালর আয়োজন করা হবে, আপনার দল কি এই বড় টুর্নামেন্টটিতে অংশ নেবে?

উত্তর: এশিয়ান অলিম্পিকসে অংশ নেওয়া আমাদের একটি স্বপ্ন। এই ‍টুর্নামেন্ট জেতায় আমাদের যাত্রা কেবল শুরু হলো। এই খেলাটির মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমাদের দেশে ইস্পোর্টস-এর বিকাশে এটিই আমাদের প্রথম পদক্ষেপ।

অ্যারিনা অফ ভ্যালর ভক্ত বা অপেশাদার ইস্পোর্টস দলগুলোর জন্য আপনাদের কোন বার্তা আছে?

উত্তর: ইস্পোর্টস গেইম ও টুর্নামেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বীর মানসিকতা নিয়ে অংশ নিন। আপনার নিজের দল তৈরি করুন এবং দেশের জন্য লড়ুন যাতে আপনি সারা বিশ্বে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। আমাদের সহায়তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আপনারা নিরাপদে ও সুস্বাস্থ্যে থাকুন।

ডিসক্লেইমার

এটি একটি বিজ্ঞাপনী বার্তা; সংবাদ প্রতিবেদন নয়। এর কোনো কনটেন্টের দায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নয়।