অনলাইনে ভুয়া তথ্য প্রচারের ‘অন্যতম বড় মাধ্যম’ ইউটিউব

নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ভুয়া তথ্যের প্রচার বন্ধে যথেষ্ট তৎপর নয় ইউটিউব– শীর্ষ ভিডিও স্ট্রিমিং সেবাটির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে তথ্য যাচাই করে এমন ৮০টি সংগঠন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2022, 02:47 PM
Updated : 13 Jan 2022, 02:47 PM

গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী সুজান ওজসিকি’র কাছে চিঠি লিখেছে ওই সংগঠনগুলো। চিঠিতে ইউটিউবকে, “বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া তথ্যের সবচেয়ে বড় মাধ্যমগুলোর একটি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তারা।

টিকা বিমুখ করে এমন কনটেন্ট এবং নির্বাচনী ভুয়া তথ্য প্রচারের মতো বিষয়গুলোতে ইউটিউবের আরো শক্ত পদক্ষেপের দাবি তুলেছে সংগঠনগুলো। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য যাচাইকারী দল ও যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ‘ফুল ফ্যাক্ট’সহ ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংগঠন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ইউটিউব নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ভুয়া তথ্য প্রচার বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ সংগঠনগুলোর। তাদের ভাষায়– “নীতিবর্জিত লোকজনকে প্ল্যাটফর্মটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে” ইউটিউব।

কনটেন্ট ইংরেজি ভাষার না হলে এবং উন্নয়নশীল দেশ থেকে হলে, সেক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়ে বলে বলছে বিবিসি’র প্রতিবেদন। চিঠিতে ইউটিউবের নীতিমালায় ধরা পড়েনি, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন বাস্তবিক উদাহরণ টেনেছে সংগঠনগুলো। সংগঠনগুলোর অভিযোগ, যথেষ্ট নয় ইউটিউবের নীতিমালা; ক্ষেত্রবিশেষে এটি সম্পূর্ণ অকার্যকর।

চিঠিতে সংগঠনগুলো চারটি দাবি তুলেছে–

প্ল্যাটফর্মে ভুয়া তথ্যের ব্যপারে অর্থবহ স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি।

ভিডিও সরাসরি ডিলিট করার বদলে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক তথ্যের সংযোজন।

ব্যবহারকারী বারবার দোষী সাব্যস্ত হলে সেক্ষেত্রে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ।

ইংরেজি বাদে অন্য ভাষাতেও ভুয়া তথ্য প্রচার বন্ধের চেষ্টা বৃদ্ধি।

এ ছাড়াও, ইউটিউব যেন “সক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীদের কাছে ভুয়া তথ্য প্রচার না করে অথবা অনির্ভরযোগ্য চ্যানেলকে প্রাধান্য না দেয়” সেজন্য অ্যালগরিদমে পরিবর্তনের দাবি করেছে তথ্য যাচাইকারী সংগঠনগুলোর জোট। 

ইউটিউব “ভুয়া তথ্যের প্রচার কমিয়ে আনতে, নির্ভরযোগ্য কনটেন্টের সঙ্গে মানুষের সংযোগ বাড়াতে এবং নীতিমালা লঙ্ঘনকারী ভিডিও মুছে দিতে” ইতোমধ্যেই আরো বিনিয়োগ করা শুরু করেছে বলে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের কাছে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র এলেনা হার্নান্দেজ।

কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ভাইরাস এবং টিকা প্রসঙ্গে ইউটিউবসহ ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভুয়া তথ্যের প্রচার বেড়েছে।  মহামারী প্রসঙ্গে ভুয়া তথ্য ছাড়াও, রাজনৈতিক মিথ্যাচার আর ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে সামাজিক মাধ্যমগুলো। সমালোচকদের অভিযোগ, ভুয়া তথ্যের প্রচার বন্ধে যথেষ্ট তৎপরতা দেখায়নি সামাজিক মাধ্যমগুলো, যা ফলে সহিংসতা, রক্তপাত এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বাস্তব জীবনে।

গেল বছরেই নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকে কোভিড-১৯ মহামারীর টিকা নিয়ে সকল মিথ্যাচার ও ভুয়া তথ্যের ভিডিও মুছে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিল ইউটিউব।

এই প্রসঙ্গে ‘ফুল ফ্যাক্ট’ প্রধান নির্বাহী উইল ময় বিবিসি’কে বলেন, “ভুয়া তথ্য মানুষের জীবন নষ্ট করে। বিশ্বের অন্যান্য তথ্য যাচাইকারীর মতো ফুল ফ্যাক্টও ইউটিউবে ক্ষতিকর কনটেন্টের উদাহরণ দেখেছে।” 

“অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ইউটিউবও এতোদিন নিজের হোমওয়ার্কে নিজেই নম্বর দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ভুয়া তথ্যের মোকাবেলা বা এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কতোটা স্বচ্ছতা বজায় রাখবে সেই সিদ্ধান্ত আর ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না”-- যোগ করেন তিনি।