‘ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে’ জাকারবার্গের সোশাল মিডিয়া সাম্রাজ্য

ভেঙে কয়েক টুকরো হওয়ার হুমকিতে পড়েছে জাকারবার্গের সোশাল মিডিয়া সাম্রাজ্য; স্থানীয় বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থাকে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে মার্কিন আদালত, ধোপে টেকেনি ফেইসবুকের ‘অনুরোধ’।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 10:01 AM
Updated : 12 Jan 2022, 10:01 AM

‘মেটা’ তথা সাবেক ফেইসবুকের বিরুদ্ধে করা অ্যান্ট্রিট্রাস্ট মামলায় সামাজিক মাধ্যম কেন্দ্রীক প্রযুক্তি সেবার বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য ও বেআইনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ তুলেছে ‘ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)’। বাজারে মেটা’র একচ্ছত্র আধিপত্য ভাঙতে অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপকে আলাদা করার প্রস্তাব তুলেছেন সংস্থাটির আইনজীবীরা।

এফটিসি’র অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা খারিজ করার জন্য ফেডারেল আদালতের কাছে ‘অনুরোধ’ করেছিল ফেইসবুক। সেই ‘অনুরোধ’ এবার নাকচ করে দিয়েছেন বিচারক, এফটিসির হাতে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকায় সবুজ সংকেত দিয়েছেন মামলা চালিয়ে যাওয়ার।

গেল বছরের জুন মাসেই এফটিসি’র অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছিলেন ওই একই বিচারক। সংস্থাটির আইনজীবীরা সামাজিক যোগাযোগের খাতে ফেইসবুক ‘মনোপলি’র যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি বলে সে সময় রায় দিয়েছিলেন ফেডারেল জজ জেমস বোসবার্গ।

প্রাথমিক অবস্থায় ওই রায় ফেইসবুক তথা মেটা’র পক্ষে গিয়েছিল মনে হলেও আদতে অভিযোগ গঠন ও তথ্য-প্রমাণ গোছানোর আরো সময় পেয়েছিল এফটিসি। নতুন প্রধান লিনা খানের সমর্থনে অগাস্ট মাসে নতুন করে অভিযোগ সাজিয়ে আদালতে দাখিল করেন এফটিসির আইনজীবীরা। ওই অভিযোগ বাতিল করতে আবারো বোসবার্গের শরণাপন্ন হয়েছিল ফেইসবুক। তবে, এবার আর ধোপে টেকেনি প্রতিষ্ঠানটির অনুরোধ; এফটিসি অভিযোগে “উল্লেখযোগ্য সংশোধন ও সংযোজন” করায় মামলা চালিয়ে যেতে পারবে বলে রায় মিলেছে।

আদালতের রায় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি এফটিসি। তবে এক বিবৃতিতে মেটা দাবি করছে, “তথ্য প্রমাণ দিয়েই এফটিসি’র অভিযোগের মৌলিক দুর্বলতা উন্মোচিত হবে” বলে আত্মবিশ্বাসী তারা। শুনানিতে বোসবার্গ যে এফটিসি’র সামনের কাজগুলোকে “বেশ কঠিন” বলে আখ্যা দিয়েছেন, সেদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে মেটা।

প্রযুক্তি শিল্পের সরব সমালোচনার জন্য পরিচিতি আছে বর্তমান এফটিসি প্রধান লিনা খানের। সিএনএন বলছে, এই মামলাটি দিয়েই পর্যবেক্ষক সংস্থাটির প্রধান হিসেবে নিজের উপস্থিতির জানান দিয়ে অবস্থান শক্ত করার সুযোগ পাবেন খান। প্রযুক্তি বাজারে ‘বিগ টেক’ হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনপ্রণেতা এবং বাজার পর্যবেক্ষকদের নজরে এনে আইনি বিপাকে ফেলার পেছনে আলাদা কৃতিত্ব রয়েছে তার।

২০১৭ সালে ‘ইয়েল ল’ জার্নাল’-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বাজারে অ্যামাজনের আধিপত্যের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। পরবর্তীতে মার্কিন কংগ্রেসের একটি সাবকমিটি’র সদস্য হিসেবে ১৬ মাসের তদন্তে সহযোগিতা করেন খান। ২০২০ সালে আলোর মুখ দেখেছে ওই তদন্তের প্রতিবেদন। আর তদন্তের ফলাফল– বাজারে একচেটিয়া ক্ষমতা চালাচ্ছে অ্যামাজন, অ্যাপল, গুগল এবং মেটা। 

খান অতীতে কথিত ‘বিগ টেক’-এর সমালোচনা করেছেন বলে এফটিসি’র নতুন অভিযোগে তার ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত ছিল না– এই অভিযোগ তুলে এফটিসির মামলা খারিজ করে দিতে বিচারক বোসবার্গের কাছে ‘অনুরোধ’ করেছিল মেটা।  জুলাই মাসে খানকে ফেইসবুক সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে আলাদা রাখতে বলে এফটিসি’র কাছে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন ফেইসবুকের কর্মকর্তারা। তাতে পিছ পা হননি খান, অগাস্ট মাসে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেন তিনি।  

কিন্তু মঙ্গলবারের রায়ে বোসবার্গ বলেছেন, ভোট দিলেও খান “বাদী পক্ষের ভূমিকায় আছেন, বিচারিক ক্ষমতায় নয়।”

তবে, বোসবার্গ এফটিসি’র মূল অভিযোগগুলোর একটি নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সিএনএন। এফটিসি’র অভিযোগ ছিল, তৃতীয় পক্ষের কাউকে প্রতিষ্ঠানের ডেটায় প্রবেশাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতাবিমুখ আচরণ করেছে ফেইসবুক। কিন্তু বোসবার্গের মতে, অভিযোগগুলো যে ঘটনার ভিত্তিতে করা হচ্ছে তা অনেক পুরনো এবং একই ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন কোনো আশঙ্কা দেখাতে পারেনি এফটিসি; তাই নাকচ করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগটি। 

একটি অভিযোগ বাতিল হলেও চাপ কমছে না ‘মেটা’র উপর থেকে। মামলায় হারলে সবচেয়ে লাভজনক দু’টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হারাতে পারে বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমটি; ভেঙে পড়তে পারে মার্ক জাকারবার্গের সোশাল মিডিয়া সাম্রাজ্য।