বেসিস নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমে ‘ভুতুড়ে’ ইমেইল

“আমি নায়াশা ফ্রিম্যান, আমি বাংলাদেশের …. প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি অ্যাপ উন্নয়নের জন্য চুক্তি করি। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাপটি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। ফলে আমরা চুক্তিটি বাতিল করি। আগাম পরিশোধ করা শতকরা ৫০ ভাগ অর্থও তারা ফেরত দেয়নি। এইরকম একটি অসৎ প্রতিষ্ঠানে যেন কেউ কাজ না দেন সেজন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

প্রযুক্তি সম্পাদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2021, 10:44 AM
Updated : 25 Dec 2021, 01:01 PM

উপরোক্ত বক্তব্য সংবলিত ইংরেজি ভাষায় লেখা একটি ইমেইল পেয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ দেশের প্রায় সবগুলো শীর্ষ অনলাইন, দৈনিক ও মাসিক পত্রিকার প্রযুক্তি সাংবাদিকরা।

বিষয়টি কি কাকতালীয়?

বাংলাদেশে সফটওয়্যার নির্মাতা ও সেবানির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস’ (বেসিস)-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর। এর মাত্র দুই দিন আগে আসা এই মেইলে যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই নির্বাচনে।

কী রয়েছে মেইলে?

মেইলে বিভিন্ন ঘটনার দিন তারিখের সঙ্গে আরও কিছু ‘যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য’ রয়েছে। আছে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ক্লায়েন্ট লিস্ট, একটি অডিও ফাইল যার শিরোনাম ‘হোয়াটসঅ্যাপ অডিও’, একটি ‘টার্মিনেশন লেটার’ এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রের পিডিএফ কপি।

এর মধ্যে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ক্লায়েন্ট লিস্টে প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের তালিকায় কিছু নাম লাল রঙে টাইপ করা, যার মানে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া– উল্লেখ রয়েছে তালিকায়। “তাদের এমনকি ফেইসবুক উপস্থিতিও নেই”।

এই তালিকা এবং চুক্তি বাতিলের চিঠি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে টাইপ করা ফাইল, চাইলে যে কারো পক্ষেই এটি তৈরি করা সম্ভব। আর ‘হোয়াটসঅ্যাপ অডিও’ নামে যে অডিও ফাইলটি রয়েছে, সেটি দু’জন ব্যক্তির ফোনালাপের রেকর্ড নয়, বরং একজন ব্যক্তির রেকর্ড করা অডিও ফাইল। মেইলে উল্লেখ করা বক্তব্যই স্বকণ্ঠে রেকর্ড করেছেন কেউ একজন।

জিম্বাবুয়ে থেকে ফের ইমেইল বাংলায়!

২৪ ডিসেম্বর ভোর ৩টা ২০ মিনিটে ইংরেজি ভাষায় মেইল পাঠানোর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর ওই দিনই বেলা ৩টা ১২ মিনিটে ফের মেইল করেন নায়াশা ফ্রিম্যান। এবার ঝরঝরে বাংলায়। কেবল মেইল নয়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুরোদস্তুর সংবাদ প্রতিবেদন লিখে পাঠিয়েছেন তিনি! দেখে মনে হয়, বাঙালি কোনো সাংবাদিকের হাতেই তা লেখা।

জিমেইল থেকে পাঠানো প্রাতিষ্ঠানিক অভিযোগ

উল্লিখিত মেইল দু’টি এসেছে এনওয়াই ডট ফ্রিম্যান অ্যাট জিমেইল ডটকম ঠিকানা থেকে। বিষয়টি স্বাভাবিক বলে একেবারেই মানতে নারাজ তথ্যপ্রযুক্তি ও আইআইজি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির।

“কোনো দাপ্তরিক বিষয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের ডোমেইন থেকে ইমেইল পাঠানোই রেওয়াজ,” বলেন তিনি।

“ইন্ডাস্ট্রিরই কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত কারণে যোগাযোগ করলে আমি জিমেইল সেবাই ব্যবহার করবো। কিন্তু এইরকম আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বেলায় যোগাযোগ অবশ্যই নিজের ডোমেইন থেকেই মেইল আসা উচিৎ।”

সেক্ষেত্রে আলোচিত এই মেইলটিকে আপনি কতটুকু গুরুত্ব দেবেন? সুমন জবাব দিলেন, “শতকরা শূন্য ভাগ।”

মেইল পাঠিয়েই একেবারে চুপ, প্রেরকের পাত্তা নেই অনলাইনে

অভিযোগের মেইল পাওয়ার পর প্রেরকের সঙ্গে ফিরতি ইমেইলে যোগাযোগ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রযুক্তি বিভাগ।

যোগাযোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ওই মেইলে অনুরোধ করা হয়, নায়াশা ফ্রিম্যানের প্রতিষ্ঠানের ওয়েব ঠিকানা জানানোর জন্য, যাতে করে অভিযোগকারীর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর পরেও জবাব মেলেনি তার দিক থেকে।

অনলাইন সার্চ করে এই নামে মেলেনি কোনো সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট বা লিংকডইন প্রোফাইলের হদিস।

কী বলছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি?

মেইলে উল্লিখিত দেশীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রযুক্তি বিভাগ।

শুরুতেই তার প্রশ্ন, “ভাই, জিম্বাবুয়ের কেউ একজন এইরকম বাংলায় মেইল করছেন, এটা কী বিশ্বসযোগ্য?”

এটা তা’হলে কার লেখা? আর কেনই বা কেউ পাঠাবেন এমন মেইল? সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বললেন, “প্রায় দেড় বছর আগের একটি বিষয় নিয়ে এই সময়ে কারা এমন মেইল পাঠাতে পারেন একটু ভাবলেই সম্ভাব্য কারণ অনুমান করা যায়।”

খারাপ উদাহরণ

একই মেইল যারা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাউছার উদ্দীন। এই মেইল ঘিরে বিভিন্ন প্রশ্নের উদয় তার মনেও হয়েছে বলে জানালেন তিনি। তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত না বলে কেবল উপসংহার টানলেন, একটি ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ সংগঠনের নির্বাচনের আগে একটি খারাপ উদাহরণ হয়েই থাকবে এই মেইল।”