২০২১: মেটাভার্স থেকে এনএফটি; যে শব্দগুলোর অর্থ জানা দরকারী

প্রযুক্তি শিল্পের জন্য ২০২১-কে ‘অদ্ভুত’ একটা বছর মনে হতেই পারে। নতুন অনেকগুলো শব্দ আর নাম জায়গা দখল করেছে সংবাদের শিরোনামে। ৯০-এর দশকে কল্পবিজ্ঞানের থেকে আসা একটি শব্দ আইনপ্রণেতা, বাজার পর্যবেক্ষক আর গবেষকদের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; কোটি ডলারে বিক্রি হচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্ট যার যৌক্তিক মূল্য প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2021, 10:40 AM
Updated : 21 Dec 2021, 10:40 AM

আসুন, রয়টার্সের প্রতিবেদনের আলোকে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এ বছরের প্রযুক্তি শিল্পে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘বাজওয়ার্ডগুলো’।

মেটাভার্স

বর্তমান পরিস্থিতিতে মেটাভার্স-কে সঙ্গায়িত করা বেশ কঠিন কাজ। মোটা দাগে বললে, মেটাভার্সের ভাবনা হচ্ছে এমন একটি ডিজিটাল দুনিয়া যেখানে ব্যবহারকারী অংশগ্রহণ করতে পারবেন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইস থেকে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি অথবা অগমেন্টেড রিয়ালিটি গিয়ারের বদৌলতে ওই ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারী।

ছবি: রয়টার্স

রয়টার্স বলছে, প্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মেটাভার্সকে বিবেচনা করছেন মোবাইল ইন্টারনেটের উত্তরসূরি হিসেবে। ৯০-এর দশকের কল্পবিজ্ঞান উপন্যান ‘স্নো ক্র্যাশ’-এ ‘মেটাভার্স’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন লেখক নিল স্টিফেনসন।

সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট থেকে শুরু করে মেটাভার্স নিয়ে নিজেদের ভাবনা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানিয়েছে একাধিক অনলাইন ডেটিং সেবার স্বত্ত্বাধিকারী ‘ম্যাচ গ্রুপ’-এর মতো নান প্রতিষ্ঠান।

তবে মেটাভার্স নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগর শীর্ষ মাধ্যম ফেইসবুক। অক্টোবরে নাম পাল্টে ‘মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড’ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর সাবেক কর্মীদের ফাঁস করা নথিপত্রের জেরে বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেরই মাথাব্যাথার কারণ এখন ‘মেটা’।

ওয়েব৩

বর্তমান ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থার পরবর্তী পর্যায় আখ্যা দিতে ব্যবহৃত পরিভাষা হচ্ছে ‘ওয়েব৩’; এর মূল ভাবনাটি ব্লকচেইন প্রযুক্তি নির্ভর যা একটি বিকেন্দ্রীক ইন্টারনেট ব্যবস্থার কথা বলে।

এই কাঠামোতে প্ল্যাটফর্ম এবং অ্যাপ্লিকেশনের মালিকানা সত্ত্ব থাকবে ব্যবহারকারীর হাতে। বর্তমানের প্রচলিত ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে বলা হয় ওয়েব২; ফেইসবুক এবং গুগলের মতো ‘বিগ টেক’ হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ওয়েব২ যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এনএফটি

নন-ফাঞ্জিবল টোকেন বা এনএফটি’র জনপ্রিয়তা এ বছরে ‘বিস্ফোরিত’ হয়েছে বলে বলে মন্তব্য করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। সোজা কথায় বললে এনএফটি হচ্ছে এমন এক ধরনের ডিজিটাল সম্পদ যার অস্তিত্ব সীমাবদ্ধ থাকে কেবল নির্দিষ্ট ব্লকচেইনে। বিপুল সংখ্যক কম্পিউটারের অংশগ্রহণে গঠিত হয় ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক, যে কোনো লেনদেন একসঙ্গে লিপিবদ্ধ করে রাখে নেটওয়ার্কের সবগুলো কম্পিউটার।

সম্প্রতি ছয় কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে বিপ্লি’র তৈরি এ শিল্পকর্মটি। ছবি: রয়টার্স

বছরের শুরুতে সাত কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে মার্কিন শিল্পী ‘বিপল’-এর শিল্পকর্মের এনএফটি। ওই ঘটনার পরই যেন মূলধারায় গুরুত্ব পেতে শুরু করে এই প্রযুক্তি।

ডিসেন্ট্রালাইজেশন

শব্দটি পুরোনো কিন্তু এ বছর এসে যেন নতুন রূপ পেয়েছে ‘ডিসেন্ট্রালাইজেশন’ বা বিকেন্দ্রীকরণ। ক্ষমতা ও পরিচালনার ভার কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকারের অধীনে না থেকে সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে হস্তান্তর হবে– এমনটাই বলে বিকেন্দ্রীকরণ ভাবনা।

পুরো প্রযুক্তি শিল্প আমূল পাল্টে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই বিকেন্দ্রীকরণ চিন্তার; পরিবর্তন আসবে কনটেন্টে মডারেশন থেকে শুরু করে প্রযুক্তি পণ্য ও সেবার বাজার কাঠামোতেও। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মাইক্রোব্লগিং সেবা টুইটারের কথা; সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর জন্য বিকেন্দ্রীক সাধারণ মান ‘ব্লুস্কাই’ নির্মাণের চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ডিএও

‘ডিসেন্ট্রালাইজড অটোনোমাস অর্গানাইজশেন’ বা ডিএও বলতে বোঝায় একটি ইন্টারনেট নির্ভর প্ল্যাটফর্ম যার মালিকানা থাকবে এর ব্যবহারকারীদের হাতে আর ব্যবস্থাটির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ‘স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট’ নামে পরিচিত ছোট ছোট কোড নির্ধারণ করবে দলটির নিয়ম নীতি, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

অল্টকয়েন

বিটকয়েন বাদে অন্য সব ক্রিপ্টোকারেন্সি চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয় শব্দটি। এর মধ্যে আছে বছরের আলোচিত ডিজিটাল মুদ্রা ইথেরিয়াম এবং ইলন মাস্কের বদৌলতে মূলধারায় হঠাৎ গুরুত্ব পাওয়া মুদ্রা ডোজকয়েন। ভবিষ্যত আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ইথেরিয়াম।

এফএসডি বেটা

চলতি বছরে ‘ফুল সেলফ-ড্রাইভিং’ বা এফএসডি সফটওয়্যারের উন্নত সংস্করণ বাজারজাত করেছিল টেসলা। টেসলার বিদ্যুচ্চালিত গাড়িকে নিজ উদ্যোগে লেন পরিবর্তন আর বাঁক নেওয়ার সক্ষমতা দেয় সফটওয়্যারটি।

কড়া সমালোচনা আর বিতর্কর জন্ম দিয়েছে সফটওয়্যারটির নাম। ব্যবহারকারী এবং নিয়ন্ত্রকদের একই মত– নামের সঙ্গে কাজের মিল সেই সফটওয়্যারটির। টেসলার গাড়িগুলোকে সম্পূর্ণ স্বনিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা দেয় না সফটওয়্যারটি।

এফএবিএস বা ফ্যাবস

‘এফএবিএস’ বা ‘ফ্যাবস’ আদতে ‘সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাবরিকেশন প্ল্যান্ট’-এর সংক্ষিপ্তসার। চলতি বছরের বহুল আলোচিত চিপ ঘাটতির মুখে মূল ধারার আলোচনায় উপস্থিতি বেড়েছে শব্দটির। যানবাহন থেকে শুরু করে গ্যাজেটের চিপ ঘাটতির জন্য সার্বিকভাবে ‘ফ্যাবস’গুলোকেই দুষছেন অনেকে।

নেট জিরো

চলতি বছর গ্ল্যাসগেোতে আয়োজিত কপ২৬ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের বদৌলতে জনিপ্রয়তা পেয়েছে ‘নেট জিরো’ পরিভাষাটি। বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখছে না এমন পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা দেশকে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘নেট জিরো’।

জৈব জ্বালানীর ব্যবহার বন্ধ করে এবং গাছ লাগিয়ে বিদ্যমান গ্যাস শোষণ করে নেওয়ার চেষ্টার মাধ্যমে ‘নেট জিরো’ পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দেশের সরকার।