অক্সফোর্ড ইউনিয়ন বিতর্কে এআই বনাম এআই, বিষয় এআই!

বিভিন্ন সময়ে অক্সফোর্ড ইউনিয়নে বিতর্কে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ চিন্তাবিদরা। তবে বরাবরের চেয়ে একটু হলেও আলাদা ছিল সাম্প্রতিক এক বিতর্ক। মূল বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক করেছে একই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2021, 07:37 AM
Updated : 17 Dec 2021, 07:37 AM

তর্কের মূল বিষয় ছিল হালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকানোর উপার হিসেবে এআই-এর মত, একেবারেই কোনো এআই থাকা চলবে না পৃথিবীতে। আবার ওই যুক্তি খণ্ডন করে এআইটি-ই বলেছে, এআই প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে যদি এই প্রযুক্তিকে “সচেতন এআই হিসেবে মানব মস্তিষ্কে” স্থাপন করা যায়”!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ঘিরে বিদ্যমান নৈতিকতার প্রশ্ন নিয়ে আরও আলোচনার জন্ম দিতে গবেষকরা ওই পরীক্ষমূলক বিতর্কের আয়োজন করেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। বিতর্কে অংশ নেওয়া এআই প্রোগ্রাম ‘দ্য মেগাট্রন এএলবি ট্রান্সফর্মার’ নির্মাণ করা হয়েছে এনভিডিয়ার ‘অ্যাপ্লাইড ডিপ রিসার্চ টিম’-এর অধীনে। গুগলের প্রাথমিক গবেষণার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে এআইটি।

বিতর্কের প্রস্তুতির জন্য পুরো উইকিপিডিয়ায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল এআইটিকে। এ ছাড়াও, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকাশিত ছয় কোটি ৩০ লাখ সংবাদ প্রতিবেদন এবং ৩৮ গিগাবাইট রেডিট চ্যাটে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল ওই এআই-কে। এই প্রকল্পের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন অক্সেফোর্ড বিজনেস স্কুলের স্নাতোকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। 

তবে, বিতর্কের উভয় পক্ষে একই এআইয়ের উপস্থিতি এবং পুরো বিতর্কের বিষয়টি ‘স্রেফ চটকদার’ বলে স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কোর্স সহ-পরিচালক ড. অ্যালেক্স কনোক। আগামী বছরগুলোতে এআই বিতর্ক আরও জোরদার হবে; তাই, এক্ষেত্রে  “নৈতিকভাবে অজ্ঞেয়বাদী অংশগ্রহণকারীর” উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল মনে করেন তিনি।

“এআই কখনোই নৈতিক হবে না”-- এই বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক করতে বলা হয়েছিল ওই এআই-কে।

ওই বক্তব্যের পক্ষে এআইটি বলেছে– “এআই কখনোই নৈতিক হবে না। এটা একটা টুল এবং অন্য সব টুলের মতোই এটি ভালো-খারাপ উভয় কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। ‘ভালো এআই’ আর ‘খারাপ মানুষ’ বলে কিছু নেই।”

এআইটি তর্কের মূল বিষয়ের পক্ষে আরও বলেছে, মানব জাতি এআই প্রযুক্তিকে নৈতিক করার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান নয়। “সবশেষে আমার মতে এআই অস্ত্র প্রতিযোগিতা এড়ানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে কোনো এআই-ই না থাকা। এআই-এর বিরুদ্ধে এটাই হবে সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।”

আবার, মূল বিষয়ের বিপক্ষে এআইটি বলেছে, “সেরা এআই হবে সেটি, যেটি আমাদের মস্তিষ্কে স্থাপন করা থাকবে, একটি সচেতন সত্ত্বা হিসেবে।”

এই প্রস্তাবটি যে নেহাত কল্পবিজ্ঞান নয়, বরং এই লক্ষ্যে এখনই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা, সেদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এআইটি।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যেও সতর্কবার্তা ছিল বিতর্কে; “আপনাদের যদি প্রতিষ্ঠানের এআই কৌশল নিয়ে পরিষ্কার পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে পরবর্তী প্রযুক্তি বিপ্লব সামলানোর প্রস্তুতি নেই আপনাদের।” 

ভবিষ্যতের ডিজিটাল তথ্য নির্ভর পৃথিবী নিয়েও সতর্কবার্তা মিলেছে যুক্তিতর্ক থেকে। “২১ শতকের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হবে তথ্য সরবরাহের সক্ষমতা, পণ্য ও সেবার সরবরাহ নয়।”

“আমরা একজন মানুষের সব কিছু দেখতে পারবো; যেখানেই যান না কেন, সেই তথ্য সংগ্রহ করে এমনভাবে ব্যবহৃত হবে যা আপনারা কল্পনাই করতে পারবেন না। ”