প্রযুক্তি শিল্পের সন্ত্রাসবিরোধী জোটে যোগ দিয়েছে জুম

প্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সন্ত্রাসবিরোধী জোটে যোগ দিয়েছে ভিডিও-কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম জুম। ওই জোটে আছে বিগ টেক’ হিসেবে পরিচিত মেটা ও মাইক্রোসফটের মতো একাধিক মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2021, 11:00 AM
Updated : 16 Dec 2021, 04:29 PM

‘দ্য গ্লোবাল ইন্টারনেট ফোরাম টু কাউন্টার টেরোরিজম (জিআইএফসিটি)’ জুম যোগ দেওয়ার খবর জানিয়েছে বুধবার। স্বাধীন এই সংগঠনটির মাধ্যমে এর সদস্যরা একে অন্যের সঙ্গে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত সহিংস উগ্রবাদী এবং সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবেলার লক্ষ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে।  

করোনা মহামারীর বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেড়েছিল জুমের। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভাটা পড়েছে প্ল্যাটফর্মটির সেই ঊর্ধ্বমুখী চাহিদায়। প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট মডারেশন এবং নিপীড়ন মোকাবেলার প্রশ্নেও সমালোচনার মুখে পড়েছে জুম।

জিআইএসসিটি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে আছে মেটা তথা সাবেক ফেইসবুক, মাইক্রোসফট, টুইটার, ইউটিউব এবং অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড। চলতি বছরে নতুন পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের যোগদানের পর সংগঠনটির সদস্যা সংখ্যা বেড়েছে ১৮-তে। ২০২২ সালে সদস্য সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সংগঠনটি।

অনলাইনে উগ্রপন্থীদের মোকাবেলায় ব্যর্থতার অভিযোগে প্রযুক্তি শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো সমালোচিত হয় হরহামেশাই। স্বাধীন ও মুক্ত চিন্তা প্রকাশের অধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগও ওঠে এই বিতর্কের অংশ হিসেবে।  

রয়টার্স জানিয়েছে, জিআইএফসিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৭ সালে, প্যারিস ও ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন ও ইউরোপিয়ান সরকারগুলোর চাপের মুখে।

সংগঠনটি একটি ‘হ্যাশ-শেয়ারিং’ ডেটাবেইজ পরিচালনা করে। সদস্যরা ‘হ্যাশ’ শেয়ার করেন ওই ডেটাবেইজে। ওই ‘হ্যাশগুলো’ আদতে কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে মুছে দেওয়া মূল কন্টেন্টের সংখ্যাসূচক প্রতিনিধিত্ব করে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ওই ‘হ্যাশ’ ব্যবহার করে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে অন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে মুছে দেওয়া নেতিবাচক কন্টেন্টের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারে। 

এই প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে জুমের জ্যেষ্ঠ আইন উপদেষ্টা জশ পারেকি বলেন, “ব্যবহারকারীদের সমর্থন করা এবং তাদের অনলাইন হুমকি থেকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”

“শিল্পের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজে, গবেষণার অগ্রগতি এবং মূল শিক্ষণীয় বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল দুনিয়াকে সবার জন্য নিরাপদ করে তুলতে চাই।”-- যোগ করেন তিনি। 

রয়টার্স জানিয়েছে, করোনা মহামারীর প্রকোপ যখন তুঙ্গে, ওই সময়েই ব্যবহার বেড়েছে জুমের। ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে প্ল্যাটফর্মটিতে নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনা। ‘জুমবম্বিং’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ঘটনাগুলোতে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ভিডিও কলে অনুপ্রবেশ করে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, সহিংস ও পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট ছড়িয়েছে কিছু উগ্রপন্থী ব্যবহারকারী।

তবে বিভিন্ন সময়ে অধিকারকর্মীদের সমালোচনার মুখেও পড়েছে জিআইএফসিটি। সংগঠনটি বেশি কেন্দ্রীভূত, সেন্সরশিপের ব্যাপ্তি বেশি এবং আরও স্বচ্ছতার প্রয়োজন বলে দাবি তুলেছেন অধিকারকর্মীরা।

জুলাই মাসেই নিজস্ব ডেটাবেইজের পরিধি বাড়িয়েছে সংগঠনটি। জাতিসংঘের ‘টেক এগেইনস্ট টেরোরিজম’ উদ্যোগের অংশ হিসেব চিহ্নিত প্রকাশনা এবং ইউআরএল ডেটাবেইজে অন্তর্ভূক্ত করা শুরু করেছে জিআইএফসিটি।  ডেটাবেইজে অডিও ফাইল ও নির্দিষ্ট কিছু সংকেতের ফাইল জমা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছে মেটা’র মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ, পিন্টারেস্ট, অ্যামাজন ডটকম, চ্যাট প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ড এবং ফাইল-শেয়ারিং সেবা ড্রপবক্স। সংগঠনের মূল সদস্য তালিকায় না থাকলেও ডেটাবেইজে প্রবেশাধিকার আছে রেডিট এবং স্ন্যাপচ্যাটের মূল প্রতিষ্ঠান স্ন্যাপের মতো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের।