ডিজিটাল রূপান্তরের মূলে ক্লাউড: মাইক্রোসফট বাংলাদেশের নতুন প্রধান

মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন মো. ইউসুপ ফারুক। দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হয়ে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তিনি, প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের উত্থান অনেকটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে এই প্রযুক্তি কর্মীর।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2021, 08:23 AM
Updated : 15 Dec 2021, 09:32 AM

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে একটি দেশে প্রতিষ্ঠানের  সার্বিক কর্মকাণ্ডের গুরুদায়িত্ব কাধে নেওয়ার পর বাংলাদেশ ও মাইক্রোসফটের ভবিষ্যত অগ্রগতির প্রশ্নে বাজির ঘোড়া হিসেবে ক্লাউড প্রযুক্তিকেই দেখছেন ফারুক। সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে নানা বিষয়ে তার ভাবনা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়।

অগ্রাধিকারে তিন বিষয়

অগ্রাধিকার প্রশ্নে শুরতেই ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্য আর ক্লাউডভিত্তিক ব্যবসায়িক গণ্ডির প্রসারণ আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তিনি।

মেয়াদের শুরুতেই অগ্রাধিকার পাওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে ইউসুপ ফারুক বলেন, “বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমি আমাদের বৈচিত্র্যময় পার্টনার ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করা, ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা এবং বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে ক্লাউডের ব্যবহার বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশেষ নজর দিচ্ছি।”

বাংলাদেশের জন্য শেখার সুযোগ

“মাইক্রোসফটের বিস্তৃত পার্টনার নেটওয়ার্ক” ও প্রমাণিত ব্যবসায়িক কৌশলগুলোকে বাংলাদেশের জন্য শেখার সুযোগ হিসেবে দেখছেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশের নতুন প্রধান। “এগুলো বাংলাদেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্লাউড, ডিজিটাল রূপান্তর ও আধুনিক কর্মক্ষেত্র গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে”--বলেন তিনি। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না নেমে বরং তাদের সফল্যের দিকে “বিশেষ নজর” দেওয়ার কথা বলতেও ভুললেন না।

বাংলাদেশ নিয়ে পরিকল্পনা?

বাংলাদেশের ছোট-বড়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষ সাধারণ ব্যবহারকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দিতে চাইছে মাইক্রোসফট।

বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের প্রধান হিসেবে আলাদা কোনো পরিকল্পনা বা লক্ষ্য আছে কী না, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রাহকদের “ডিজিটাল প্রযুক্তি দেওয়ার নিশ্চয়তা”র কথাই বললেন।

“আমরা এটি বৈশ্বিকভাবে করতে চাই, আর সবচেয়ে বড় কথা আপনার সাফল্যের ওপর মূলত আমাদের সফলতা নির্ভর করে। এটি আমাদের ব্যবসায়িক মডেলের মূল বিষয়। আর এটিই দীর্ঘমেয়াদে আস্থা তৈরি করবে।”

এর পাশাপাশি আছে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর বিষয়টি। লক্ষ্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন বদলানোর বাস্তবতায় সহযোগিতা ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চায় মাইক্রোসফট। ডিজিটাল রূপান্তরে মাইক্রোসফটের অংশীদারদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালক বললেন “আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সংক্রান্ত ভাবনা, সমাধান এবং সেবার মাধ্যমে আমরা একসঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের চাকা সচল রাখতে পারবো এবং আগামী দিনের প্রযুক্তির জন্য নতুন পথও তৈরি করতে পারবো।”

অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের জন্য মাইক্রোসফটের পরিকল্পনা কেমন?

“বাংলাদেশ এবং অন্যান্য অঞ্চলের জন্য আমাদের পরিকল্পনা বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।”  ক্লাউডের উপর বাড়তি জোর দিচ্ছে মাইক্রোসফট। আর এই প্রযুক্তির উপর ভর করেই “পার্টনার ইকোসিস্টেম”কে আরও শক্তিশালী করতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি।

“প্রকৃতপক্ষে, সরাসরি অথবা প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশিদারিত্বের মাধ্যমে মাইক্রোসফটের ৯৫ শতাংশেরও বেশি বাণিজ্যিক আয়ে অংশিদারদের অবদান রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের ডিজিটাল রূপান্তরে মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে ক্লাউড।”

বারবার ক্লাউডের উপর জোর দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ইউসুপ ফারুক বললেন, “ক্লাউডের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে তাতে আশা করা যায়, বৈশ্বিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক চাকরির সংখ্যা ২০২০ সালের চার কোটির কিছু বেশি থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে ২০২৩ সালে ১৯ কোটিতে যাবে।”

বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে ক্লাউড কেন্দ্রিক চলমান কাজ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের অংশীদাররা ডিভাইস, অ্যাপ্লিকেশন ও ক্লাউড-টু-এজ সমাধান তৈরি করে যাচ্ছে। ক্লাউড-টু-এজ সমাধান তৈরিতে আমরা অংশীদারদের সাথে আমাদের যাত্রা অব্যাহত রাখতে চাই, যা ভবিষ্যতে আরও সম্ভাবনা তৈরি করবে। ”

এতে বাংলাদেশ-মাইক্রোসফট উভয়ই উপকৃত হবে কীভাবে?

এ প্রশ্নেও ক্লাউডের দিকেই আবারও নজর টানলেন ইউসুপ ফারুক। বাংলাদেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড প্রযুক্তি গ্রহণে বেশ এগিয়ে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ওই একই পথে এগোচ্ছে।

বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখানকার কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই ক্লাউড-ভিত্তিক পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আছে এবং ইতোমধ্যেই যারা এসব প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে তাদের কাছ থেকে শেখার অনেক অভিজ্ঞতাও রয়েছে। ক্লাউডে সফল হওয়ার লক্ষ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিগত কৌশল তৈরি ও বাস্তবায়নে সহায়তা করতে আমাদের ক্লাউড অ্যাডপশন ফ্রেমওয়ার্কটি তৈরি করা হয়েছে। এটি সর্বসেরা প্র্যাকটিস, ডকুমেন্টেশন ও সরঞ্জাম সরবরাহ করছে, যা ক্লাউড আর্কিটেক্টস, আইটি প্রফেশনাল ও ব্যবসায়িক নীতি-নির্ধারকদের সফলভাবে তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন।