চিঠিতে ওই নারী কর্মীকে বরখাস্তের কারণ হিসেবে “মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্টে”র কারণ দেখিয়েছে আলিবাবা।
“আলিবাবা ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে” এমন পরিস্থিতির কথা বলে ওই নারী অগাস্ট মাসে তার অভিযোগ জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। অভিযোগ অনুসারে, এক পেশাগত সফরে ওই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত জ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে বরখাস্ত করলেও আলিবাবা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলা তুলে নিয়েছে। অভিযুক্ত অপর ব্যক্তি, আলিবাবার মক্কেল “সম্ভবত” এখনও পুলিশের তদন্তাধীন আছেন।
ব্যাপক প্রচার পাওয়া এই মামলাটি চীনের কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ওই নারী কর্মী সরকার সমর্থক সংবাদপত্র দাহে ডেইলিকে গত মাসের শেষের দিকে তাকে বরখাস্ত করার বিষয়টি জানান। প্রতিবেদনে পত্রিকাটি তার বরখাস্তের চিঠিও প্রকাশ করেছে।
আলোচিত ঘটনা এবং আলিবাবা মামলাটি পরিচালনা না করার বিষয়ে ওই নারী মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে আলিবাবা।
চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, তার মুখ খোলার বিষয়টি “তীব্র সামাজিক উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং আলিবাবার ওপর উপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে”।
তবে, অভিযোগকারী বলছেন, “আমি কোন ভুল করিনি, এবং অবশ্যই এই পরিণতি মেনে নেব না।” তিনি প্রয়োজনে “অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য” আইনি উপায় ব্যবহারের কথা বলেছেন।
চীনের বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
অভিযোগে কী ছিলো?
অভিযোগকারী ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ১১ পৃষ্ঠার একটি নথিতে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি করে পানাসক্ত অবস্থায় হোটেলে নিজ কক্ষে অজ্ঞান হওয়ার পর ধর্ষণের শিকার হন।
বিষয়টি ‘চীনের টুইটার’ নামে পরিচিত ওয়েইবোতে প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
অভিযোগ অনুসারে ওই নারীর জ্যেষ্ঠ সহকর্মী তার অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য হাংঝৌতে আলিবাবার প্রধান কার্যালয় থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে জিনান শহরে যেতে বাধ্য করেন।
রাতের খাবারের সময় সহকর্মীদের সঙ্গে মদ্যপানের জন্য জোর করার অভিযোগও করেছেন তিনি।
অভিযোগ অনুসারে, ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ক্লায়েন্ট তাকে চুম্বন করেন। তারপরে তিনি পরের দিন তার হোটেলের ঘরে বিবস্ত্র অবস্থায় জেগে ওঠার কথা স্মরণ করতে পারেন এবং আগের রাতের কোনও স্মৃতি তার ছিল না।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুসারে জ্যেষ্ঠ সহকর্মী সন্ধ্যায় চারবার তার ঘরে গিয়েছেন।
হাংঝৌতে ফিরে আসার পর, ওই নারী ঘটনাটি আলিবাবার মানবসম্পদ বিভাগ এবং ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনাকে জানান এবং তিনি ওই জ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে বরখাস্ত করার দাবি জানান।
মানবসম্পদ বিভাগ প্রাথমিকভাবে ওই দাবিতে সম্মত হলেও পরে আর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রতিক্রিয়া হয়েছে তীব্র
ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর আলিবাবা তীব্র জনরোষের মুখে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি এর পরে মি. ওয়াং নামে পরিচিত ওই অভিযুক্ত কর্মীকে বরখাস্ত করে। আলিবাবা বলছে, এই অভিযোগে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় দুজন নির্বাহীও পদত্যাগ করেছেন।
এরই মধ্যে আলিবাবা একটি মেমো জারি করে যার বক্তব্য হলো, প্রতিষ্ঠানটি “জোর পূর্বক মদ্যপান সংস্কৃতির কট্টর বিরোধী”।
ঘটনার শিকার নারী পানাসক্ত থাকাকালে তার সঙ্গে “ঘনিষ্টতা হয়েছে” বলে স্বীকার করেছেন ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই ক্লায়েন্ট।
আলিবাবায় কাজ করা জ্যেষ্ঠ সহকর্মী ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না হলেও ওই ক্লায়েন্টকে গ্রেপ্তারের অনুমোদন দিয়েছে আদালত। তাকে তার প্রতিষ্ঠানও বরখাস্ত করেছে।
এই মামলা চীনের অনলাইন জগতকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এক দল বলছেন জ্যেষ্ঠ সহকর্মী সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
এই মামলাটি চীনের পেশাজীবীদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে #মিটু আন্দোলনের সমার্থক হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মন্তব্য উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।