চীনের সঙ্গে ‘গোপন সমঝোতায়’ ছিলেন অ্যাপলের টিম কুক

অ্যাপলকে তিন লাখ কোটি ডলার বাজার মূল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন প্রধান নির্বাহী টিম কুক। এই অগ্রগতির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় কুকের ‘সক্ষমতা’। কিন্তু সাম্প্রতিক এক সংবাদ প্রতিবেদন বলছে, এতোদিন আদতে চীনের সঙ্গে ‘গোপন সমঝোতায়’ ছিলো অ্যাপল ও টিম কুক।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2021, 07:17 AM
Updated : 11 Dec 2021, 07:17 AM

বেনামী গোপন সূত্র আর অভ্যন্তরীণ নথিপত্রের বরাত দিয়ে প্রযুক্তি প্রকাশনা ‘দ্য ইনফর্মেশন’ বলছে, চীনের ‘ন্যাশনাল ডেভেল্পমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন’-এর সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল অ্যাপল। এক হাজার দুইশ’ ৫০ শব্দের ওই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, চীনের বিভিন্ন খাতে ২৭ হাজার পাঁচশ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার কথা ছিল অ্যাপলের।

ইনফর্মেশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে ওই সমঝোতা স্মারকে। চীন-জাপান সীমান্তের কয়েকটি ছোট দ্বীপের মালিকানা নিয়ে রেষারেষি রয়েছে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে। চীনের কাছ থেকে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে দুটি ‘অদ্ভুত’ অনুরোধ পেয়েছিল অ্যাপলের ম্যাপস টিম। ম্যাপ থেকে জুম আউট করার পরেও বিতর্কিত মালিকানার দ্বীপগুলো যেন বড় দেখায় সেই ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছিল চীন।

‘দ্য ইনফর্মেশন’র প্রতিবেদন অনুসারে, পরবর্তীতে অ্যাপল শুধু চীনের ওই অনুরোধ মেনেই নেয়নি, এখনও চীনের ভূখণ্ড থেকে কেউ অ্যাপলের ম্যাপসে দ্বীপগুলো দেখতে চাইলে আশপাশের সবকিছুর থেকে আকারে বড় করে দেখানো হয় দ্বীপগুলো।

২০১৬ সালে চীন ভ্রমণে গিয়ে ওই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন কুক। কুকের ওই চীন ভ্রমণ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলেও ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল চীন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় আসা। দেশটির সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল অ্যাপলের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। বিভিন্ন খাতে পাঁচ বছরে ২৭ হাজার পাঁচশ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চীন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছান কুক; মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে চীন সরকারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বন্ধ করা।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ জানিয়েছে, দ্য ইনফর্মেশনের দাবিগুলো যে সঠিক, সেদিকেই ইঙ্গিত করছে ‘কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চে’র গবেষণা ডেটা। অক্টোবর মাসে সংস্থাটি জানিয়েছিল, ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের বাজারে শীর্ষ স্মার্টফোন বিক্রেতার আসন দখল করেছে অ্যাপল। অন্যদিকে, চীনের ভূখণ্ডে ‘রিসার্চ অ্যাড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ নির্মাণ করার পাশাপাশি এখন চীনের ব্যবহারকারীদের ডেটা চীনের ভূখণ্ডেই সংরক্ষণ করতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে, চীনে ডেটা সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্তটি গোপন কিছু নয়।

চীনের সঙ্গে এই ‘গোপন সম্পর্কের’ ফলে বিভিন্ন সময়ে বিপাকেও পড়েছে অ্যাপল। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে গোপনতা প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানটির আন্তরিকতা। চীনের যে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অ্যাপল জোট বেঁধে কাজ করছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংখ্যালঘু উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে-- উঠেছে এমন অভিযোগ। এ ছাড়াও চীনের বাজারের অ্যাপ স্টোর থেকে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ মুছে দিয়ে বিতর্কিত হয়েছে অ্যাপল।