ফেইসবুকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ১৫ হাজার কোটি ডলারের মামলা

ফেইসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন রোহিঙ্গা। ফেইসবুক নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে রোহিঙ্গা বিরোধী বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রচারকে প্রশ্রয় দিয়েছে-- এই অভিযোগে ১৫ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে তারা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2021, 08:34 AM
Updated : 8 Dec 2021, 07:30 AM

২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানে অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে বলে অনুমান করা হয়। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ-- নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর সহিংসতা চালানোর মনোভাবকে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে প্রশ্রয় দিয়েছে শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমটি।

রোহিঙ্গাদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি নাম পাল্টে ‘মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড’ হওয়া ফেইসবুক এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। রোহিঙ্গারা বলছে, “বছরের পর বছর বিদ্বেষমূলক ও বিপজ্জনক ভুয়া তথ্যের প্রচার” নিজ প্ল্যাটফর্মে চলতে দিয়েছে ফেইসবুক। 

ফেইসবুকের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছেন মামলার বাদীপক্ষের যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিনিধিরা। আইনজীবীদের পাঠানো ওই চিঠি দেখার সুযোগ হয়েছে বিবিসি’র। চিঠিতে ফেইসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে --

  • ফেইসবুকের অ্যালগরিদম রোহিঙ্গা বিরোধী বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে বাড়িয়ে তুলেছে।

  • মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত মডারেটর এবং তথ্য যাচাইকারী নিয়োগে “বিনিয়োগ” করতে ব্যর্থ হয়েছে ফেইসবুক। 

  • রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ডাক দেওয়া পোস্ট এবং অ্যাকাউন্ট মুছে দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 

  • সংবাদমাধ্যম এবং দাতব্য সংস্থাগুলো সতর্ক করলেও “সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে” ব্যর্থ হয়েছে ফেইসবুক।

যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিকোতেও ফেইসবুকের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবীরা। “দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ছোট একটি দেশের বাজারে আরও ভালোভাবে ঢোকার জন্য রোহিঙ্গাদের জীবন” জলাঞ্জলী দিতেও ফেইসবুকের বাধেনি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।   

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানে উঠে আসা ২০১৩ সালের একাধিক ফেইসবুক পোস্ট আদালতের কাছে তুলে ধরেছেন আইনজীবীরা। তার একটিতে বলা হয়েছে, “হিটলার যেভাবে ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, আমাদেরও তাই করতে হবে।”

আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দাও যেন আল্লাহ’র সঙ্গে তারাতারি দেখা করতে পারে ওরা।”

মিয়ানমারে ফেইসবুকের নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটির বেশি। এর বড় একটা অংশের জন্য সংবাদ পাওয়া এবং শেয়ার করার একমাত্র উপায় সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মটি।

রোহিঙ্গা বিরোধী সহিংসতা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধের জন্য যথেষ্ট না করার অভিযোগ ২০১৮ সালেই স্বীকার করে নিয়েছিল ফেইসবুক। সামাজিক মাধ্যমটির নিজ খরচে প্রস্তুতকৃত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘনের “উপযুক্ত পরিবেশ” সৃষ্টি করেছিল প্ল্যাটফর্মটি।    

রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয় মিয়ানমারে। টানা কয়েক দশক ধরে দেশটির সরকার ও সাধারণ নাগরিকদের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়ে আসছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীটি।   

২০১৭ সালে একাধিক পুলিশ পোস্টে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থীদের সশস্ত্র আক্রমণের পর রোহিঙ্গাদের উপর সহিংস আক্রমণ ও দমনপীড়ন চালানো শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী; ওই ঘটনায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা।

ওই ঘটনার জেরে, ২০১৮ সালেই ফেইসবুক “ধীর গতির এবং অকার্যকর” বলে তিরস্কার করেছিল জাতিসংঘ। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ব্যবহারকারীদের কন্টেন্টের দায়ভার সিংহভাগ ক্ষেত্রে ফেইসবুকের ঘাড়ে বর্তায় না। তবে নতুন মামলাগুলোতে দাবি করা হয়েছে-- মিয়ানমারের আইন ফেইসবুককে এমনভাবে রক্ষা করে না-- তাই, এই মামলায় সেটি কার্যকর হওয়া উচিত।