‘ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ’ বলছে, আগামী বছরের শুরুর দিকেই অভিষেক হবে ‘ট্রুথ সোশাল’ অ্যাপটির। জানুয়ারি মাসে ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার জেরে এখনও ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ ডনাল্ড ট্রাম্প।
“এই একশ’ কোটি ডলার বিগ টেক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে যে সেন্সরশিপ এবং রাজনৈতিক বৈষম্য বন্ধ করতেই হবে।”-- বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সমঝোতা প্রসঙ্গে বলেন ট্রাম্প।
“আমাদের হিসাবের খাতা যতো বড় হতে থাকবে, ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ বিগ টেকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ততোই শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে।”-- যোগ করেন তিনি।
চলতি বছরের শুরুতেই ট্রুথ সোশালের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প; তার প্ল্যাটফর্মে “রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না” বলে ঘোষণা দিয়েছেন শুরুতেই।
ইতোমধ্যেই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অ্যাকুইজিশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বেঁধেছে ট্রুথ সোশাল। বিবিসি জানিয়েছে, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অ্যাকুইজিশিন প্রতিষ্ঠানটি একটি কথিত “স্পেশাল পারপাস অ্যাকুইজিশিন কোম্পানি (স্প্যাক)’। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষেত্রবিশেষে ‘ব্ল্যাংক চেক কোম্পানি’ বলেও ডাকা হয়।
এ বছরে মার্কিন শেয়ার বাজারে বেশ আলোচিত হয়েছে ‘স্প্যাক’ প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ফাঁকা খোলস’ বলা চলে এদের, মূল লক্ষ্যই হলো ব্যক্তিমালিকাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত হতে সহযোগিতা করা।
তবে, বছর ঘোরার আগেই তেজ হারিয়েছে স্প্যাক প্রতিষ্ঠানগুলো। অংশীদারদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিনিয়োগ অথবা আর্থিক অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
শনিবার “বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে” একশ’ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন মাধ্যশ থেকে পাওয়া খবর এবং সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য এখন চারশ’ কোটি ডলার।
বিবিসি বলছে, বিতর্কিত ঘটনা প্রবাহের মধ্যেও বড় বিনিযোগকারীদের আকৃষ্ট করার এই ঘটনা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সক্ষমতার (আর্থিক খাতে) প্রমাণ।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটর ডিসির ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাঁধান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা। ট্রাম্প ওই ঘটনার মতো আরও সহিংস ঘটনার উস্কানি দিতে পারেন-- এই আশঙ্কা থেকে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষ সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
রয়টার্সের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্টের নতুন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার সুযোগ পেয়েও আগ্রহী হয়নি ওয়াল স্ট্রিটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তবে ট্রুথ সোশালের জন্য বিনিয়োগ আসছে বিভিন্ন ‘হেজ ফান্ড’, পরিবার নিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে।
টুইটার, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ট্রাম্পের ফলোয়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে, আট কোটি ৯০ লাখ, তিন কোটি ৩০ লাখ এবং ২ কোটি ৪৫ লাখ। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্শিয়াল নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন-- এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন ট্রাম্প।
তবে বিবিসি বলছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের আর্থিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। নভেম্বর মাসেই মার্কিন কংগ্রেসের এক কমিটি জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসি’তে অবস্থিত নিজের হোটেলের আর্থিক পরিস্থিতি “অসম্ভবরকম বাড়িয়ে” বলেছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান ওই দাবিগুলোকে বলছে “বিভ্রান্তিকর।”
শুরু থেকেই বিতর্কিত হয়েছে ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ এবং ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অ্যাকুইজিশনের চুক্তি। নভেম্বর মাসেই মার্কিন সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) এই একিভূতকরণ পরিকল্পনায় কোনো আইন লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, সেটা যাচাই করে দেখতে বলেছেন ডেমোক্রেটিক দলের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন।
এই প্রসঙ্গে রয়টার্সকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি এসইসি।
২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাজারে আসার কথা রয়েছে ট্রুথ সোশাল অ্যাপটির। বলা হচ্ছে, ট্রাম্প মিডিয়ার তিন স্তরের পরিকল্পনার প্রথম স্তর এটি। অ্যাপটির পর ‘টিএমটিজি+’ নামের একটি ভিডিও-অন-ডিমান্ড সেবা চালু করার কথা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ভবিষ্যতে ক্লাউড ব্যবসায় অ্যামাজন ও গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বীতার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।