কোভিড নিয়ে মিথ্যাচার: ‘চীনা নেটওয়ার্ক’ মুছে দিলো ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম

কোভিড নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে এক ‘চীনা নেটওয়ার্ক’ মুছে দিয়েছে মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড। বলা হচ্ছে, এক ভুয়া ‘সুইস জীববিজ্ঞানীর’ বরাত দিয়ে কোভিড মহামারী প্রসঙ্গে ভুল তথ্যের প্রচারণা চালানো হচ্ছিল সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। ওই ভুয়া প্রচারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলো মুছে দিয়েছে মেটা; আর মূল হোতা হিসেবে আঙুল উঠেছে চীনের দিকে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2021, 08:47 AM
Updated : 2 Dec 2021, 08:47 AM

মেটা বলছে, কোভিড নিয়ে ভুয়া তথ্যের ওই প্রচারণা আদতে “ব্যর্থ হয়েছে”। ওই প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের ইরেজি ভাষার ব্যবহারকারী এবং তাইওয়ান, হংকং এবং তিব্বতের চীনা ভাষার ব্যবহারকারীরা।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওই ভুয়া প্রচারণার উৎস ছিল চীন এবং দাবি করা হচ্ছিল,  কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানের হস্তক্ষেপ করছে মার্কিন সরকার। এক্ষেত্রে তথ্যসূত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে উইলসন এডওয়ার্ডস নামের এক কথিত সুইস জীববিজ্ঞানীকে।

চীনের রাষ্ট্রসমর্থিত সংবাদমাধ্যমগুলো জুলাই মাসে ওই কথিত জীববিজ্ঞানীর বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করে। কিন্তু, অগাস্ট মাসে বেইজিংয়ের সুইস দূতাবাস থেকে জানানো হয়, এডওয়ার্ডস যে সুইজারল্যান্ডের নাগরিক তার কোনো প্রমাণ নেই। সুইস কর্তৃপক্ষের বিবৃতির পর অনলাইন থেকে কথিত জীববিজ্ঞানীকে তথ্যসূত্র হিসেবে উপস্থাপন করে প্রকাশিত খবর এবং কমেন্ট মুছে দেওয়া শুরু করে চীনের সংবাদপত্রগুলো।

মেটা জানিয়েছে, ফেইসবুক অগাস্ট মাসেই মুছে দিয়েছে উইলসন এডর্ওয়ার্ডসের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট। তদন্তের অংশ হিসেবে মুছে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট আরও পাঁচশ’ ২৪টি ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট, ২০টি পেইজ, চারটি গ্রুপ এবং ৮৬টি  ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট।

এই প্রসঙ্গে মেটা’র ‘বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবেলা’ বিভাগের প্রধান ডেভিড আগ্রানোভিচ রয়টার্সকে বলেন, “আমরা ওই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা, ‘শিচুয়ান সাইলেন্স ইনফর্মেশন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড’ এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে চীনের সরকারি অবকাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছি।”

রয়টার্স এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ‘শিচুয়ান সাইলেন্স ইনফর্মেশন টেকনোলজি কোম্পানি’। রয়টার্সের অনুরোধে সারা দেয়নি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্টেশন অফ চায়না’।

শিচুয়ান সাইলেন্স ইনফর্মেশন টেকনোলজি এবং চীন সরকারের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগসূত্র খুঁজে পায়নি মেটা। তবে, সাইলেন্স ইনফর্মেশন নিজস্ব ওয়েবসাইট নিজেদের পরিচয় দিয়েছে ‘নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিকিউরিটি’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে। নিজস্ব ওয়েবসাইটে চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এবং ‘সিএনসার্ট’-কে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা সেবা দেওয়ার দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনের জরুরী সাইবার নিরাপত্তা দল হিসেবে কাজ করে ‘সিএনসার্ট’।

সামাজিক মাধ্যমে কথিত সুইস জীববিজ্ঞানী উইলসন এডওয়ার্ডসের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে মিলেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। ফেইসবুকে তার অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছিল ২৪ জুলাই। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ১০ ঘন্টার মাথায় ওই ব্যক্তি একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস খুঁজতে চীন ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) যে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছে, তাদের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে মার্কিন সরকার।

মেটা বলছে, এডওয়ার্ডসের অ্যাকাউন্টটি যিনি চালাচ্ছিলেন, ওই ব্যক্তি নিজের অবস্থান গোপন রাখতে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন এবং অ্যাকাউন্টটিকে বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিত্ব দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন।

প্রাথমিক অবস্থায় বিভিন্ন ভুয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার ও প্রচার করা হয়েছে তার পোস্ট। পরবর্তীতে প্রকৃত ব্যবহারকারীরাও পোস্টটি শেয়ার করতে থাকেন। কিন্তু, ওই ব্যবহারকারীরা অন্তত ২০টি দেশে অবস্থিত চীনের সরকারি অবকাঠামোর অংশ হিসেবে পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে মেটা।

“এই প্রথমবারের মতো আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ড চিহ্নিত করতে পেরেছি যেখানে একদল সরকারি কর্মচারী সমন্বিতভাবে প্রচারণার পরিধি বাড়ানোয় ভূমিকা রেখেছে”-- উঠে এসেছে মেটা’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনে এই ‘চীনা নেটওয়ার্ক’ বিশ্বাসের জায়গা করে নিতে পেরেছে-- এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে মেটা।

রয়টার্স বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডব্লিউএইচও’র উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন বলে জুলাই মাসে খবর প্রকাশ করে চীনের সংবাদমাধ্যমগুলো। ওই প্রতিবেদনগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছিল ওই ভুয়া সুইস জীববিজ্ঞানীকে।

দুই বছর পরেও সারস-কোভ-২ ভাইরাসের উৎস এখনও একটি রহস্যই রয়ে গেছে গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কাছে। অন্যদিকে, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও আরও বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে পাল্টাপাল্টি আক্রমণের রশদ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিড ভাইরাসের উৎস বিতর্ক।