টুইটার অধ্যায়ের ইতি টেনে ‘বিকেন্দ্রীকরণমুখী’ ডরসি

প্রযুক্তি সেবার বাজারে আলোড়ন তুলে টুইটার ছেড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও দুইবারের প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি। ডরসি’র প্রস্থানের পর টুইটারের হিসাবের খাতায় বড় কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত এখনো মেলেনি। কিন্তু প্রযুক্তি খাতে ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার ডরসির ভবিষ্যত এখন কী-- সেদিকেই যেন নজর প্রযুক্তিভক্ত ও বাজার বিশ্লেষকদের। 

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2021, 10:19 AM
Updated : 1 Dec 2021, 10:19 AM

জুন মাসে মায়ামিতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে জ্যাক ডরসি বলেছিলেন, “যদি স্কয়ার বা টুইটারে না থাকতাম, তবে বিটকয়েন নিয়ে কাজ করতাম আমি।” ওই বক্তব্যের প্রথম অংশকে সত্যিতে পরিণত করেছেন তিনি। আলোচিত এই শতকোটিপতির অন্যান্য কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে ইঙ্গিত মিলছে-- বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশকেও সত্যি করার পথেই আছেন টুইটারের সাবেক প্রধান।

সোমবার জ্যাক ডরসি’র টুইটার ছাড়ার ঘোষণা প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অনেকটাই আচমকা ছিল। ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে শুরু করে ইয়োগা, এমনকি ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে আগ্রহের কারণে প্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন ডরসি। দ্বিতীয়বারের মতো টুইটার অধ্যায়ের ইতি টেনে ডরসি এখন স্কয়ার ইনকর্পোরেটেড আর দাতব্য কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিতে চান বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।         

তবে টুইটার ছাড়ার ঘোষণার আগেই ডরসি তার পরবর্তী প্রকল্পের গঠনকাজ শুরু করে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বার্তাসস্থাটি, স্কয়ার ও টুইটার উভয় প্রতিষ্ঠানেই ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের বীজ বপন করে তবেই বিদায় নিয়েছেন ডরসি।

বড় পরিসরে চিন্তা করলে ডরসির পরিকল্পনার মূলে রয়েছে ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ নীতি। এই ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ নীতির মূল বার্তা হচ্ছে, প্রযুক্তি এবং অর্থনীতির লাগাম হাতে গোনা কয়েকজনের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত নয়; বরং ব্যবস্থাপনার ও নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী অথবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে।  

স্কয়ারে এই বিকেন্দ্রীকরণ চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন ডরসি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক প্রকল্প পরিচালনার পাশাপাশি অনুদান দিয়ে অন্যদের সহযোগিতা করছে স্কয়ারের একটি বিভাগ। 

ডরসি বিটকয়েন প্রযুক্তিকে সমর্থন দিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরেই। বিটকয়েনের মাধ্যমে কোনো দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিরাপদ এবং গোপন লেনদেন সম্ভব, এই চিন্তা থেকেই ব্লকচেইন প্রযুক্তি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে।

ডরসি’র বিকেন্দ্রীকরণ চিন্তার প্রভাব পড়েছে টুইটারেও। সম্প্রতি ডরসি’র উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া পারাগ আগরাওয়ালের অধীনে বিকেন্দ্রীক সোশাল মিডিয়া প্রোটোকল নিয়ে কাজ করছে টুইটারের একদল কর্মী। রয়টার্স বলছে, পরিকল্পনা সফল হলে ইমেইল সেবাদাতাদের কার্যপ্রণালীর আদলে একে অন্যের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো।     

ব্লুস্কাই নামের প্রকল্পটি ব্যবহারকারীকে নিজের পছন্দ মতো কন্টেন্ট বাছাই করে নেওয়ার সক্ষমতা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর বৈশ্বিক নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করে ভুয়া প্রচারণা এবং মিথ্যাচার মোকাবেলার ‘দায়ভার’ কমবে; ২০১৯ সালে ব্লুস্কাই প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়ার সময় বলেছিলেন ডরসি।  

টুইটার ও স্কয়ার উভয় প্রতিষ্ঠানেই বিটকয়েনের জন্য আলাদা গুরুত্বের জায়গা তৈরি করেছেন ডরসি। বিটকয়েনকে সম্পদ হিসেবে দেখিয়ে আর্থিক প্রতিবেদনে যোগ করা প্রথম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি স্কয়ার। বিটকয়েন খাতে ২২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

অগাস্ট মাসেই বিটকয়েনের উপর আরও গুরুত্ব দেওয়ার জন্য টিবিডি নামের আলাদা একটি বিভাগ চালু করেছে স্কয়ার। বিটকয়েনের জন্য একটি হার্ডওয়্যার ওয়ালেট, একটি মাইনিং ব্যবস্থা এবং একটি বিকেন্দ্রীক বিটকয়েন লেনদেন ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনাও আছে প্রতিষ্ঠানটির।

পছন্দের কন্টেন্ট নির্মাতাদের বিটকয়েনের মাধ্যমে টিপস দেওয়ার সুযোগ দেয় টুইটার। এমনকি এনএফটি প্রযুক্তিও নিজস্ব সেবার অংশ করে নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখছে প্ল্যাটফর্মটি। 

বাজার বিশ্লেষকরা ডরসি’র সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ২০০৯ সালে স্কয়ার প্রতিষ্ঠা করেন ডরসি। সাম্প্রতিক প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ অ্যাপের বিস্তারের গতি কমে এসেছে আগের তুলনায়। সম্প্রতি দুই হাজার নয়শ’ কোটি ডলার খরচ করে ‘আফ্টার পে’ কিনেছে স্কয়ার। ‘বাই নাও পে লেটার’ প্ল্যাটফর্মটির পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের ধাক্কা স্কয়ার এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

তবে এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলোর ফল পেতে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

“তারা যে ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টার করছে তা সত্যিই ভালো, কিন্তু এতে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ অনেক এবং ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর মতো বিস্তার ঘটানো বেশ কঠিন। তিনি হয়তো স্কয়ারের উপর বেশি মনোযোগ দেবেন আর ক্রিপ্টো তার একটি অংশ হবে।”-- মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ডিএ ডেভিডসনের কর্মী ক্রিস্টোফার ব্রেন্ডলার।