২০১৪ সালে পেপাল ছেড়ে ফেইসবুকের মেসেজিং সেবার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মার্কাস। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল মুদ্রা প্রকল্পের হাল ধরেন তিনি। ফেইসবুকের ডিজিটাল মুদ্রা ‘ডিয়েম’ এবং ওয়ালেট অ্যাপ ‘নোভি’র নির্মাণ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মার্কাস। এমন পরিস্থিতিতে তার প্রস্থান মেটা প্ল্যাটফর্মসের আর্থিক প্রযুক্তি বিভাগটিকে বিপাকে ফেলবে বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
ফেইসবুক ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে বেশ কিছু দিন ধরেই। এ লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে নিজস্ব ডিজিটাল ওয়ালেট ও মুদ্রাও তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু, সাম্প্রতিক ‘ফেইসবুক ফাইলস’ কেলেঙ্কারীর জেরে বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিজিটাল মুদ্রা খাতে ব্যবসা করার জন্য ফেইসবুক (বর্তমান মেটা প্ল্যাটফর্মস) ‘নির্ভরযোগ্য’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ নয় বলে আপত্তি তুলেছেন পশ্চিমা আইনপ্রণেতা ও বাজার পর্যবেক্ষকদের অনেকেই।
সহকর্মী স্টেফানি ক্যাসরিয়েল তার স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন মার্কাস। এক ফেইসবুক পোস্টে নিজের প্রস্থান নিয়ে মার্কাস বলেছেন, “নোভি উন্মুক্ত করার পর যদিও অনেক কিছুই করার আছে -- এবং লেনদেনে ও আর্থিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমি বরাবরের মতোই উৎসাহী -- আমার উদ্যোক্তা সত্ত্বা সেটি ভুলে থাকতে বলছে আমাকে।”
মার্কাসের ফেইসবুক পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় ফেইসবুক কাণ্ডারী মার্ক জাকারবার্গ বলেন, “তোমার নেতৃত্ব না থাকলে আমরা ডিয়েম নিয়ে এতো বড় পদক্ষেপ নিতাম না। আমি কৃতজ্ঞ যে তুমি মেটা’কে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পরিণত করেছ যেখানে আমরা বড় বাজি ধরতে পারি।”
সম্প্রতি নাম পাল্টে ‘মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড’ হয়েছে ফেইসবুক। প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বিতর্ক ও সমালোচনা থেকে দূরত্ব তৈরি করতেই হঠাৎ নাম পাল্টে রিব্র্যান্ডিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা প্রযুক্তির প্রচলন নিয়ে উঠে পড়ে লাগলেও বাজার নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনা ও চাপের মুখে ডিয়েম মুদ্রার বৈশ্বিক প্রচলনের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজার পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা এই বাজারে প্রবেশ করলে আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করার চেষ্টা করবে মেটা প্ল্যাটফর্মস, অনলাইনে অপরাধ কর্মকাণ্ডের সুযোগ আরও বাড়বে, আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে ব্যবহারকারীদের গোপনতা ও আর্থিক নিরাপত্তা।
রয়টার্স জানিয়েছে, শুরুতে ‘লিবরা’ নামে পরিচিত প্রকল্পটির বর্তমান লক্ষ্য হলো মার্কিন বাজারের জন্য একটি ডিজিটাল মুদ্রা উন্মুক্ত করা, ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের অস্থিতিশীলতা এড়াতে যার বাজার মূল নির্ধারণ হবে মার্কিন ডলারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।
যুক্তরাষ্ট্র ও গুয়াতেমালায় নোভি ওয়ালেট অ্যাপের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে ফেইসবুক। কিন্তু নভেম্বর মাসেই একাধিক মার্কিন আইনপ্রণেতা বলেছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘বিশ্বাস করা যায় না’ ফেইসবুককে; পরীক্ষামূলক কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। প্রতিক্রিয়ায় মেটা প্ল্যাটফর্মস বলছে, আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী তারা।