ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করবেন না: মার্কিন পুলিশকে ফেইসবুক

নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ভুয়া অ্যাকাউন্টের ব্যবহার একেবারেই মেনে নিতে পারে না ফেইসবুক; তাই অপরাধ তদন্তের অংশ হিসেবে ভুয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার বন্ধ করতে বেশ কড়া ভাষাতেই লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি)’র কাছে আপত্তি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2021, 08:21 AM
Updated : 20 Nov 2021, 09:22 AM

সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক ওই আপত্তিতে প্রশ্ন উঠেছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার বন্ধে ফেইসবুকের নীতিগত অবস্থান রাজনৈতিক মিথ্যাচার, অনলাইন প্রতারণা, কিশোর বয়সীদের উপর বিরূপ প্রভাব বা মানব পাচারের মতো ঘটনার বেলায় কোথায় থাকে!

ঘটনার শুরু ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে। মার্কিন পুলিশ বিভাগ অপরাধ তদন্তে একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বেঁধে ব্যবহারকারীদের ডেটা বিশ্লেষণ করছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দৈনিকটি। আর তাতেই এলএপিডি’কে শাসিয়েছে ফেইসবুক।

ফেইসবুকের নীতিমালায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা এবং তার ব্যবহার নিষিদ্ধ। সামাজিক মাধ্যমটির দাবি, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে “এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা যেখানে মানুষ একে অন্যকে বিশ্বাস করতে পারে।”

দাবির পক্ষে ফেইসবুকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রয় অস্টিন বলছেন, “এলএপিডি শুধু যে তাদের শিক্ষামূলক ভিডিও-তে ফেইসবুককে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে অফিসারদের সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্বুদ্ধ করছে তাই নয়, নথিপত্র ইঙ্গিত করছে যে এলএপিডি’র নীতিমালা কর্মকর্তাদের ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ‘তদন্তকাজ চালানোর’ অনুমতি দেয়।”

“এমন নীতিমালার আইনি গ্রহণযোগ্যতা বিচার হয়তো এলএপিডি’র উপর বর্তায়, কিন্তু আমাদের প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় অফিসারদের অবশ্যই ফেইসবুকের নীতিমালা মানতে হবে। পুলিশ বিভাগের এমন সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত যেখানে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে।”

বিবিসি’র প্রতিবেদন বলছে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ব্রেনান সেন্টার অফ জাস্টিস’-এর অনুরোধে উন্মুক্ত করা নথিপত্র বলছে, ২০১৯ সালে ‘ভয়েজার ল্যাবস’র সামাজিক মাধ্যম নজরদারি সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে সন্দেহভাজনদের তথ্য সংগ্রহ করেছিল ‘লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি)’।

ভয়েজার ল্যাবসের দাবি, বিপুল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে অপরাধ তদন্তে সহযোগিতা করতে পারে তাদের সফটওয়্যার, এমনকি অপরাধীর উদ্দেশ্য ও মূল বিশ্বাসও চিহ্নিত করতে পারে সফটওয়্যারটি।

এলএপিডি বলছে, গ্যাং কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড তদন্ত করতে এবং ডাকাতি ও হত্যা মামলার প্রমাণ সংগ্রহে সফটওয়্যারটি বেশ কাজে এসেছে।

ফেইসবুক বলছে, অন্যদের উপর নজর রাখা বা আসল ব্যবহারকারীকে নকল করা তাদের প্ল্যাটফর্মটির মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। “মানুষ যেন অন্যদের আসল পরিচয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং শেয়ার করতে পারে”, সেটাই মূল লক্ষ্য বলে দাবি ফেইসবুকের।

তবে, সংশ্লিষ্টরা কপটতার আঁচ পাচ্ছেন ফেইসবুকের আচরণে। আইনগতভাবে বৈধ নজরদারি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবি রবার্ট পটারের মতে অধিকারকর্মী বা সংবাদকর্মীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া নাম ব্যবহার করলে তা ন্যায়সঙ্গত বলেই বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন, প্রতারণা, এবং তরুণদের উপর বিরূপ প্রভাব নিয়ে টু শব্দটি না করা ফেইসবুকের এখন এইসব টনটনে নীতি আর বাণী প্রসবে অবাক হয়েছেন তিনি।

“এই বিষয়টি আসলেও কৌতুহল জাগানিয়া যে, বিপুল সংখ্যক প্রশ্নবিদ্ধ যোগাযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ফেইসবুক। শিশু পাচার থেকে শুরু করে, কোভিড নিয়ে মিথ্যাচার এবং উগ্রপন্তী সন্ত্রাসীদের যোগাযোগর মাধ্যম হিসেবে” বিভিন্ন সময়ে নাম শোনা গেছে ফেইসবুকের।-- বিবিসি’কে বলেন পটার।

“অথচ চীন বা রাশিয়ার কী হচ্ছে সেটার চেয়ে এলএপিডি তাদের প্ল্যাটফর্ম অপব্যবহার করছে--এটা নিয়েই তাদের মাথা ব্যথা বেশি মনে হচ্ছে।” --যোগ করেন তিনি।

বারবার সততা ও স্বচ্ছতার কথা বললেও অগাস্ট মাসেই নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের গবেষকদের নিষিদ্ধ করেছে ফেইসবুক।

ফেইসবুক ওই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছির, গবেষকদের ব্যবহৃত ব্রাউজার এক্সটেনশনটি তাদের প্ল্যাটফর্মের জন্য একটি নিরাপত্তা হুমকি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, গণতন্ত্র রক্ষায় এবং সামাজিক মাধ্যমটির কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ধরে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের কাজ।

“আপনি যদি প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত সকল নেতিবাচক চরিত্রের উপর একসঙ্গে চাপ প্রয়োগ না করেন, তবে প্ল্যাটফর্মটির ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারের উপর চাপ প্রয়োগ করার কোনো ভিত্তি নেই আপনার।”-- এলএপিডি’র কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেইসবুকের অবস্থানের সমালোচনা করে বলেন পটার।

“আপনি একটি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম চালান বলে বিশেষ কিছু নন। একটি চার্চে ছদ্মবেশি পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে যদি কোনো নিয়ম না থাকে, তবে সামাজিক মাধ্যম কেন আলাদা সুবিধা পাবে?”-- প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।