মেটাভার্স তৈরিতে কাজ করছে যে প্রতিষ্ঠানগুলো

সম্প্রতি নিজের নাম পাল্টে ‘মেটা’ রেখেছে ফেইসবুক। প্রতিষ্ঠানটির মনোযোগ যে এখন মেটাভার্সের দিকে, সেটিই ফুঁটে উঠেছে এর মধ্য দিয়ে। কিন্তু মেটাভার্স নিয়ে শুধু ফেইসবুক নয়, কাজ করছে আরও অনেকেই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2021, 01:07 PM
Updated : 1 Nov 2021, 01:07 PM

মেটাভার্সের ধারণাটিই হলো এমন একটি অনলাইন দুনিয়ার যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা এ ধরনের স্থানে কন্টেন্ট শুধু দেখা নয়, তাতে পুরোপুরি নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলতে পারবেন, ঘুরে বেড়াতে পারবেন ওই ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্য দিয়ে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, এটি পুরোপুরি হাতের নাগালে আসতে হয়তো এক দশকেরও বেশি সময় লাগবে এবং প্রযুক্তি জায়ান্টদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে।

জুনে মেটাভার্স নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড’ (ইটিএফ) গঠন করেছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রাউন্ডহিল ইনভেস্টমেন্ট। ফেইসবুক নিজেদের রিব্র্যান্ডিংয়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই আরেকটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব মেটাভার্স ইটিএফ গঠন করেছে বলেও জানা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, আদতে কোন প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে মেটাভার্স নিয়ে? কারা ভূমিকা রাখছে বা রাখতে পারবে এতে?

রোব্লক্স

মেটাভার্স নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় প্রথমেই আসবে রোব্লক্সের নাম। এ বছরই পাবলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ার বাজারে পা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোব্লক্সের দৃষ্টিতে মেটাভার্স এমন একটি স্থান যেখানে লাখো মানুষ থ্রিডি অভিজ্ঞতায় শিখতে, কাজ করতে, খেলতে, সৃজনশীল এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।

রোব্লক্স ব্যবহারকারী ও ডেভেলপারদের ডিজিটাল বিশ্ব তৈরির ব্যবস্থা করে দিতে চাইছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কেনাকাটা ও ব্যবসার মতো কাজও করা যাবে তাদের প্ল্যাটফর্মে। প্ল্যাটফর্মটিতে এখই ‘রোবাক্স কারেন্সি’ নামে ভার্চুযাল অর্থ রয়েছে। সেটি খরচ করেই সব করতে হয় সেখানে।

মাইক্রোসফট

মেটাভার্স পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে নেই মাইক্রোসফটও। চলতি বছরেই মাইক্রোসফট প্রধান নির্বাহী সাত্যিয়া নাদেলা জানান, ‘এন্টারপ্রাইজ মেটাভার্স’ তৈরিতে কাজ করছে তার প্রতিষ্ঠান, সেখানে বাস্তব ও ডিজিটাল দুনিয়া এক হয়ে যাবে।

গেইমিং কনসোল এক্সবক্স এবং জনপ্রিয় গেইম মাইনক্র্যাফট মালিক মাইক্রোসফটের গেইমিং শিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। এক্সবক্স প্রধান ফিল স্পেন্সার “একটি মেটাভার্স বা মিক্সড-রিয়ালিটি” গঠন পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেছেন অতীতে।

ফেইসবুক

সাম্প্রতিক সময়ে মেটাভার্স শব্দটিকে সবার সামনে নিয়ে এসেছে ফেইসবুক। পরিকল্পনা জানানো থেকে শুরু করে নাম পরিবর্তন-- অনেক কিছুর মধ্য দিয়েই গোটা বিষয়টিকে বারবার তুলে ধরছে প্রতিষ্ঠানটি।

ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকেই ‘মেটা প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবসা শুরু করবে ফেইসবুক। তবে, নিজেদেরকে মেটাভার্স প্রতিষ্ঠানের বদলে সামাজিক মাধ্যম হিসেবেই দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।

তিনশ’ কোটি ব্যবহারকারীর প্ল্যাটফর্মটি অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তিতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছে এবং কোয়েস্ট হেডসেটের মাধ্যমে প্রবেশযোগ্য ভিআর পরিবেশ হরাইজন তৈরি করছে।

এনভিডিয়া

মেটাভার্স নিয়ে কাজ করছে কম্পিউটার চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া-ও। থ্রিডি বিশ্বকে একটি ‘শেয়ারড ভার্চুয়াল ইউনিভার্সে’ আনতে নিজেদের ‘অমনিভার্স’ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের ভাষ্যে, বাস্তব বিশ্বের কারখানা ও ভবনের সিমুলেশন তৈরির মতো কাজে ব্যবহৃত ‘অমনিভার্স’ মেটাভার্স তৈরির পরীক্ষামূলক ধাপ হতে পারে।

ইউনিটি

মূলত ভিডিও গেইম নির্মাণে ব্যবহৃত সফটওয়্যার তৈরি করে থাকে ইউনিটি সফটওয়্যার ইনকর্পোরেটেড। মেটাভার্স তৈরিতে টুল ও প্রযুক্তি বিক্রি করতে পারে এ প্রতিষ্ঠানটিও।

স্ন্যাপ

স্ন্যাপচ্যাট মালিক স্ন্যাপ দীর্ঘ সময় ধরেই ‘কাস্টোম অ্যাভাতার’ ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি ফিল্টার তৈরি করে আসছে। এর মধ্য দিয়ে ব্যবহারকারীদের হাতে বাস্তব বিশ্বের উপর কল্পজগতের পর্দা চাপানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এ বছরই এটি নিজেদের প্রথম অগমেন্টেড রিয়ালিটি চশমা নিয়ে এসেছে। আপাতত ডেভেলপাররা সেটি চশমার নানাবিধ অভিজ্ঞতা তৈরির জন্য ব্যবহার করতে পারছেন।

অটোডেস্ক

অটোডেস্ক ‍মূলত ক্লাউড সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। ভবন ও পণ্যের নকশার কাজে অটোডেস্কের প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকেন স্থপতি ও প্রকৌশলীরা। গেইমিং ও বিনোদনের ভার্চুয়াল জগত তৈরিতেও প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।

টেনসেন্ট

আয়ের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও গেইমিং প্রতিষ্ঠান চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। এপিক গেইমস এবং অ্যাক্টিভিশন ব্লিজা্র্ডের মতো মূল সারির গেইমিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেয়ার রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে এ বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি নিজ সামাজিক সাইট কিউকিউ-এর জন্য মেটাভার্স-সংশ্লিষ্ট ট্রেডমার্কের নিবন্ধন করিয়েছে।

এপিক গেইমস

মেটাভার্সের নাম নিলে এপিক গেইমসের নাম নিতেই হবে। ফোর্টনাইট নির্মাতা এ প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মূল শুটিং গেইম থেকে সরে দাঁড়িয়ে নাচ, ভার্চুয়াল কনসার্ট ইত্যাদির আয়োজন করে দেখিয়েছে। ব্যবহারকারীরা অর্থ খরচ করে নিজ নিজ অ্যাভাতারকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজিয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবহারকারীদের হাতে প্রতিষ্ঠানটি তুলে দিয়েছে নিজ দ্বীপ ও গেইম তৈরির সুযোগ।

‘আনরিয়াল’ নামের নিজস্ব গেইমিং ইঞ্জিনও রয়েছে এপিক গেইমসের। এটি ব্যবহার করে গেইম তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানের ভিজুয়াল ইফেক্ট তৈরি করা হয়।

অ্যাপল ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় মাপের সমালোচক বলা চলে এপিক প্রধান টিম সুইনি-কে। তার মতে, মেটাভার্স একটি অংশগ্রহণমূলক উন্মুক্ত স্থান হওয়া উচিত।

অ্যামাজন

ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। মেটাভার্স দৌড়ে সম্ভাব্য খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।

আরও খবর