কেলেঙ্কারির মধ্যেও নয়শ’ কোটি ডলার ফেইসবুকের পকেটে

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ নথিপত্র নিয়ে চলছে তোলপাড়। এর মধ্যেই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে নয়শ’ কোটি ডলার আয়ের খবর জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের শীর্ষ মাধ্যমটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 10:33 AM
Updated : 26 Oct 2021, 10:33 AM

চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হওয়া প্রান্তিকে আয় হওয়া নয়শ’ কোটি ডলারের বিপরীতে গেল বছর একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি আয় ছিল সাতশ’ ৮০ কোটি ডলার। তুলনা করলে এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় তিন মাসের প্রন্তিকে বেড়েছে একশ’ ২০ কোটি মার্কিন ডলার।

তবে বিবিসি বলছে, অ্যাপলের আইওএস ১৪ অপারেটিং সিস্টেমের সফটওয়্যার আপডেটের প্রভাব পড়েছে ফেইসবুকের আয়ের হিসাবে। ওই আপডেটের কারণে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য।

অন্যদিকে সাবেক কর্মীদের ফাঁস করা নথিপত্র আর তার উপর ভিত্তি করে একাধিক শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জেরে বিভিন্ন দিক থেকে চাপের মুখে পড়েছে ফেইসবুক। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা। পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখছে অস্ট্রেলিয়ার সরকারও।

প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মীদের ফাঁস করা নথিপত্র বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে-- বিদ্বেষপূর্ণ কন্টেন্ট মোকাবেলায় নিয়মিতভাবেই ব্যর্থ হয়েছে ফেইসবুক; যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম মানব পাচার ও দাস ব্যবসায় ব্যবহৃত হচ্ছে জেনেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চাপ সৃষ্টি করার আগ পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

অন্যদিকে, সোমবার ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ এক কনফারেন্স কলে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা যা দেখছি সেটা হল ফাঁস হওয়া নথিপত্র ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের মিথ্যা চিত্রায়নের সমন্বিত চেষ্টা।”

বিবিসি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া ১২ মাসে মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ শতাংশ বেড়ে দুইশ’ ৯১ কোটিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ফেইসবুক। প্রতিষ্ঠানের আয় বড়লেও বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার তুলনায় সেটা খানিকটা কম বলে জানিয়েছে বিবিসি। আর এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে অ্যাপলের নতুন নীতিমালাকে।  

চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকের আয়ে অ্যাপল নীতিমালায় ওই আপডেটের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে ফেইসবুক।  তবে সেটি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

চলতি বছরেই মেটাভার্স প্রকল্পের পেছনে এক হাজার কোটি ডলার খরচ করার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘ফেইসবুক রিয়ালিটি ল্যাবস’-এর অধীনে এই প্রকল্পটিতে অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং অন্যান্য কন্টেন্ট নির্মাণ করছে ফেইসবুক।   

মেটাভার্স প্রকল্প নিয়ে ফেইসবুকের এই তোরজোড় চলছে বিশ্বব্যাপী আইনপ্রণেতা ও নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনার মধ্যেই। ফেইসবুকের বিরুদ্ধে অপ্রতিযোগিতা সুলভ আচরণের অভিযোগ তুলে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক মাধ্যম হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির উপর চাপ বেড়েছে সাবেক কর্মীদের ফাঁস করা নথিপত্রের কারণেও। 

ফাঁস হওয়া নথির ভিত্তিতে ফেইসবুকের বিরুদ্ধে ওঠা যে অভিযোগগুলো মার্কিন আইনপ্রণেতাদের দৃষ্টি কেড়েছে, তার মধ্যে আছে-- ইনস্টাগ্রাম কিশোর বয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্যর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে জেনেও সেটি অগ্রাহ্য করে গেছে ফেইসবুক; ভুয়া তথ্য ও মিথ্যাচার মোকাবেলায় তৎপর না হয়ে ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সোমবার যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন; সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ওই ডেটা অ্যানালিস্ট বলেন, ফেইসবুক যে “বিদ্বেষপূর্ণ পরিস্থিতিতে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাতে কোনো প্রশ্নের সুযোগ নেই।” 

ফেইসবুকের নিরাপত্তা বিষয়ক দলটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমর্থন পায়না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার খাতিরে মুনাফায় সামান্যতম ছাড় দিতেও রাজি নয় ফেইসবুক।”

বিবিসি জানিয়েছে, নতুন ‘অনলাইন সেইফটি বিল’ পরিকল্পনার অধীনে সামাজিক মাধ্যমগুলোর উপর কী কী আইন আরোপ করা যেতে পারে সেটি বিবেচনা করছেন ওই আইনপ্রণেতারা। 

তথ্য ফাঁসের কেলেঙ্কারির মধ্যেও সোমবার ফেইসবুকের শেয়ার দর বেড়েছে ১.৩ শতাংশ। চলতি বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ হারে।