এনএফটিতে নজর বলিউডের, পরিকল্পনায় অমিতাভ ও সালমান

‘নন-ফাঞ্জিবল টোকেন’ বা এনএফটি দৌড়ে পিছিয়ে নেই ভারতও। এনএফটি’র মাধ্যমে একের পর এক ডিজিটাল স্মারক অবমুক্ত করছেন ভারতীয় তারকা ও ক্রিকেটাররা। চাইছেন এ খাতের ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে এখান থেকে আয় করতে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 09:36 AM
Updated : 24 Oct 2021, 09:36 AM

শীঘ্রই বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন ও সালমান খানের এনএফটি-এর দেখা মিলবে বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। নিজের অভিনীত চলচ্চিত্রের পোস্টারে স্বাক্ষর করে তা এনএফটি সম্পদ হিসেবে আনার পরিকল্পনা করেছেন ‘বিগ বি’ খ্যাত অমিতাভ।

অন্যদিকে, টুইটার অ্যাকাউন্টের চার কোটি ৩০ লাখ অনুসারীর সঙ্গে নিজ এনএফটি পরিকল্পনা নিয়ে আড্ডায় মেতেছেন সালমান। ভক্তদের মধ্যে তৈরি করছেন এ নিয়ে উত্তেজনা।

বলিউডের এনএফটি সম্পদ নিয়ে ‘বলিকয়েন’ নামে গড়ে উঠেছে এক এনএফটি বাজারও। “এনএফটি এখন বলিউডে একদম-ই নতুন একটি বিষয়, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে তারা (চলচ্চিত্র তারকারা) এটিকে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখবেন যেখানে তারা তাদের বিদ্যমান কন্টেন্ট ব্যবহার করতে ও আয় করতে পারবেন।” – বলেছেন বলিকয়েনের আয়ান আগনিহট্রি।

বলিকয়েন যাত্রা শুরু করেছে এ মাসেই। প্ল্যাটফর্মটি বর্তমানে ক্রিপ্টো কয়েন বিক্রি করছে। পরে ওই কয়েন ব্যবহার করে তাদের কাছ থেকেই কেনা যাবে এনএফটি।

আগনিহট্রি জানিয়েছেন, যাত্রা শুরুর কয়েকদিনেই বিদ্যমান দুই কোটি বলিকয়েনের মধ্যে ৮০ লাখ বিক্রি করে ফেলেছে তার প্রতিষ্ঠান। এক বলিকয়েনের মূল্যমান দশ সেন্টের সমান।

এনএফটি কী?

এনএফটি মূলত এমন এক ধরনের ডিজিটাল সম্পদ যা ব্লকচেইন ব্যবহার করে ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য সংগ্রহযোগ্য উপকরণের মালিকানার রেকর্ড রাখে। এর আক্ষরিক বাংলা করলে দাঁড়ায় – ‘যে টোকেনে ছত্রাক পড়বে না’। অর্থনীতির ভাষায় ‘ফাঞ্জিবল অ্যাসেট’ বলতে এমন কিছু একককে বুঝায় যা খুব দ্রুত পরিবর্তন করে নেওয়া সম্ভব – যেমন, টাকা বা অর্থ।

যেমন- ১০ টাকার একটি নোটকে চাইলেই পাঁচ টাকার দুটি নোটে রূপান্তর করা সম্ভব এবং এতে করে মূল্যমান কমবে না।

কিন্তু ‘নন-ফাঞ্জিবল’ কোনো কিছুর মাধ্যমে এটি করা অসম্ভব। এর অর্থই হল – এটি এমন অভিনব সম্পদ যা দ্রুত পরিবর্তন করে নেওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের সম্পদ হতে পারে অভিনব কোনো বাড়ি বা মোনালিসা চিত্রকর্মটি। আপনি চাইলে অনুকরণ করে একই রকম আরেকটি তৈরি করে নিতে পারেন, বা চাইলে চিত্রকর্মের ছবি তুলে নিতে পারেন। কিন্তু আসলটির মালিক শুধু একজন-ই হতে পারবেন।

এনএফটি হল ডিজিটাল বিশ্বে “এরকম একটিই আছে” ধরনের সম্পদ যা অন্য যে কোনো সম্পদের মতো কেনা যায় বা বিক্রি করা যায়। কিন্তু এর কোনো নিজস্ব বাহ্যিক আকার নেই যা ধরা বা ছোঁয়া সম্ভব। এই ডিজিটাল টোকেনকে তুলনা করা যায় অনেকটা ভার্চুয়াল বা বাস্তব বিশ্বের কোনো সম্পদের মালিকানার সনদ হিসেবে।

আচমকা এ খাতের জনপ্রিয়তা অনেককেই অবাক করেছে, কিন্তু সে কারণে এ জনপ্রিয়তার প্রবল স্রোতে কোনো ভাটা পড়েনি।

ভারতে ‘এনএফটি’

এনএফটি’র দিক থেকে ভারত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলেই মন্তব্য উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি এক ক্রিকেট ম্যাচের ‘ডিজিটাল আর্ট রিল’ নিলামে তুলছেন ভারতীয় ক্রিকেটার দিনেশ কার্তি। ওই ম্যাচের শেষ বলে ছয় মেরে দলকে জিতিয়ে এনেছিলেন তিনি। গোটা এনএফটির দাম ধরা হয়েছে পাঁচ ইথেরিয়াম। ডলার মূল্যমানে যা দাঁড়াচ্ছে ২০ হাজারের ঘরে। কিন্তু এখনও কেউ দর হাকেনি সেটির জন্য।

“গত এক বছরে পশ্চিমে অনেকটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে এনএফটি যেখানে বাস্কেটবলের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো ভক্তরা ডিজিটাল সংস্করণে সরাসরি কিনেছে, সেখান থেকেই ধারণাটি পেয়েছি আমরা।” – বলেছেন কার্তিক।

অনেকে অবশ্য সফল হয়েছেন এনএফটি-তে। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে ভারতের শীর্ষ ফ্যাশন ডিজাইনার মানিশ মালহোত্রার কথা। সম্প্রতি নিজের কিছু বিখ্যাত সৃষ্টির ডিজিটাল স্কেচ বিক্রি করেছেন তিনি, প্রতিটি চার হাজার ডলারে।

মালহোত্রার ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, তার নকশা করা ‘ব্রাইডাল ওয়্যার’ পোশাকের দাম পড়বে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার ডলার।

হাতে ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, শুধু অনলাইনে দেখা যাবে এমন সামগ্রীর জন্য বড় অঙ্কে খরচ করার বিষয়টি নিয়ে এখনও অনেকেই অবাক। কিন্তু তারপরও আপন গতিতে দৌড়াচ্ছে এনএফটি, ২০২১ এর তৃতীয় প্রান্তিকে এনএফটি’র বৈশ্বিক বিক্রি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০ কোটি ডলারে। বাজার ট্র্যাকার ড্যাপরেডারের তথ্য বলছে, আগের প্রান্তিকের তুলনায় এটি বেড়েছে আটগুণ।

ভারতীয় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ‘ওয়াজিরএক্স’ এর এনএফটি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিশাখা সিংয়ের মতে, তারকাদের এ খাতে অংশগ্রহণের বিষয়টি উত্তেজনা তৈরি করবে। তিনি বলেন, “এটি ইকোসিস্টেমের জন্য ভালো। এটি ডিজিটাল সম্পদের বিশ্বকে বদলে দেওয়ার নতুন খেলার ব্যাপারে আরও সচেতনতা বাড়াতে সহায়তা করবে আমাদের।”