উন্নয়নশীল বিশ্বে খবরের ‘একমাত্র সূত্র’ হতে চেয়েছে ফেইসবুক

ফ্রান্সেস হাউগেনের পর শীর্ষ সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির আরেকজন সাবেক কর্মী। ফেইসবুক নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে বিদ্বেষপূর্ণ কন্টেন্ট আর মিথ্যাচার মোকাবেলার চেয়ে মুনাফা অর্জনকে বেশি প্রাধান্য দেয় বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনিও। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ফেইসবুকের ‘ইন্টিগ্রিটি টিমে’র সাবেক সদস্য ছিলেন তিনি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 08:40 AM
Updated : 24 Oct 2021, 08:40 AM

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) লিখিত হলফনামা জমা দিয়েছেন তথ্য ফাঁসকারী। বলা হচ্ছে, আলোচিত এর আগে ফ্রান্সেস হাউগেনের উত্থাপিত অভিযোগগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে ওই হলফনামায়।

নতুন তথ্য ফাঁসকারী পরিচয় গোপন রাখলেও তার স্বাক্ষরিত হলফনামার কপি হাতে পেয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম। হলফনামায় ফেইসবুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তবে, যে অভিযোগটি পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর দৃষ্টি কেড়েছে সেটি হল, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্শিয়াল নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপকে ‘না বুঝেই’ প্রশ্রয় দিয়েছে ফেইসবুক।

হলফনামায় ওই তথ্য ফাঁসকারী জানিয়েছেন, ফেইসবুকের প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে রাশিয়া নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টার আশঙ্কার কথা জেনেও তাতে বিচলি হননি ফেইসবুকের কমিউনিকেশনস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট টাকার বাউন্ডস। হলফনামা অনুযায়ী, রাশিয়ার হস্তক্ষেপের আশঙ্কা ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বাউন্ডসের মন্তব্য ছিল, “ব্যাপারটা বদ্ধ ঘরে বাজি ফাটানোর মতো হবে। আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ খেপে যাবেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্য কিছু নিয়ে মাতবেন তারা। আমরা তো বেইজমেন্টেই টাকা ছাপাচ্ছি, ভালোই আছি আমরা।”  

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ জানিয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচন ছাড়াও, জনসমক্ষে ফেইসবুকের দেওয়া বক্তব্য আর অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের মাপকাঠি নিয়েও গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন নতুন তথ্য ফাঁসকারী। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহজলভ্য  ইন্টারনেট সেবা চালু করার কথা বলে ইন্টারনেট ডটঅর্গ প্রকল্প চালু করেছিল ফেইসবুক। কিন্তু নতুন তথ্য ফাঁসকারীর হলফনামা বলছে, ফেইসবুকের আসল লক্ষ্য ছিল সম্পূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রিক।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের অভ্যন্তরীণ আলাপচারিতার নথি অনুযায়ী, ফেইসবুকের আসল লক্ষ্য ছিল “উন্নয়নশীল বিশ্বে খবরের একমাত্র সূত্র” হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে একচ্ছত্র আধিপত্য নিশ্চিত করা যেন গ্রাহক ডেটার নতুন বাজার থেকে লাভবান হওয়া যায়।

ভার্জ বলছে, ফ্রান্সেস হাউগেনের তোলা অভিযোগগুলোর সঙ্গে মিল রয়েছে নতুন তথ্য ফাঁসকারীর বক্তব্যের। হাউগেনও একসময় ফেইসবুকের ‘ইন্টেগ্রিটি টিমে’র হয়ে কাজ করেছেন এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নথি সংগ্রহ করে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সরবরাহ করেছিলেন। হাউগেনের ফাঁস করা নথির মধ্যে আইনপ্রণেতাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে কিশোরবয়সীদের উপর ইনস্টাগ্রামের বিরূপ প্রভাব নিয়ে গবেষণা।

প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং হাউগেন উভয়ে অভিযোগ তোলেন-- কিশোরবয়সীদের মানসিক অবস্থার উপর ইনস্টাগ্রামের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জেনেও মুনাফার লোভে সেটি মোকাবেলায় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না ফেইসবুক।    

৫ অক্টোবর মার্কিন সিনেটে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় হাউগেন আরও অভিযোগ তোলেন-- ফেইসবুকের “নিজস্ব গবেষণায় যা উন্মোচিত হয়েছে এবং সামাজিক বিভক্তি সৃষ্টি এবং বিদ্বেষপূর্ণ কন্টেন্টের প্রচারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়ে বারবার” ইচ্ছা করেই সাধারণ ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করে আসছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ফেইসবুক বলছে, “যথাযথ যুক্তি প্রমাণের সমর্থন ছাড়া একটি সূত্রের ভিত্তিতে বিস্তর অভিযোগ তুলে খবর প্রকাশের বিপজ্জনক নজির এটি।”

ভার্জ জানিয়েছে, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় ফেইসবুকের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমগুলোতে যে বিবৃতি এসেছে তাতে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ নেই এবং প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটন পোস্টের মান বিবেচনায় “নিম্ন মানের”।

ওই বিবৃতিতে ফেইসবুক দাবি করেছে, “এই খবরের মূলভিত্তি একটি মিথ্যা। হ্যাঁ, আমরা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং আমরা মুনাফা কামাই। কিন্তু আমরা মানুষের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যকে অগ্রাহ্য করে সেটা করার চেষ্টা করি, এমন ধারণাটি আসলে আমাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ কোথায় সেটি বুঝতে ভুল হওয়ার ফসল।”