এবার নাম পাল্টাবে ফেইসবুক, ঘোষণা আসছে অক্টোবরেই

নাম পাল্টানোর পরিকল্পনা করেছে ফেইসবুক। সংশ্লিষ্ট গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ জানিয়েছে, মেটাভার্স পরিকল্পনার প্রতিফলন হয় এমন নাম বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমটি; ঘোষণা আসছে চলতি মাসেই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2021, 10:49 AM
Updated : 20 Oct 2021, 10:49 AM

ভার্জ জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর ফেইসবুকের বার্ষিক “কানেক্ট” সম্মেলনে নতুন নাম ঘোষণার পরিকল্পনা করেছেন প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। তবে আরও আগেই ঘোষণা চলে আসতে পারে-- পুরো বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এক গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ভার্জ।

অন্যদিকে ভার্জের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ফেইসবুক বলেছে, “গুজব বা জল্পনা-কল্পনা” নিয়ে মন্তব্য করে না ফেইসবুক।

সম্ভাব্য নাম পরিবর্তনের খবর এমন সময়ে এলো যখন ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে নানা দিক থেকে মার্কিন সরকারের ব্যাপক চাপের মুখে আছে ফেইসবুক। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে অনুসন্ধানে নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, যা অনেক হিসেবেই বিরল ঘটনা।

ভার্জের প্রতিবেদন বলছে, নাম পাল্টে “রিব্র্যান্ডিং”-এর ঘটনা ঘটলে নতুন নামের মূল প্রতিষ্ঠানের অধিনস্থ সেবায় পরিণত হবে ফেইসবুকের সোশাল মিডিয়া অ্যাপ। ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং অকুলাসের মতো আরেকটি সেবায় পরিণত হবে ফেইসবুকের সামাজিক মাধ্যম নির্ভর ব্যবসা; নতুন নামের মূল প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকবে এর সবগুলো।

ব্যবসা প্রসারণ কৌশলের অংশ হিসেবে নাম পাল্টে নতুন ব্র্যান্ডিং করা সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন কিছু নয়। ২০১৫ সালে ‘অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড’ নামের হোল্ডিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিল গুগল। সার্চ আর বিজ্ঞাপন ব্যবসা বাদেও গুগলের স্বচালিত যান প্রকল্প, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি এবং দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রচলন প্রকল্পগুলোর দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণ করে এখন অ্যালফাবেট।

সিলিকন ভ্যালির আরেকটি প্রতিষ্ঠান স্ন্যাপচ্যাট প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে স্ন্যাপ ইনকর্পোরেটেড হয়েছে ২০১৬ সালে। ওই বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের পরিচয় দেওয়া শুরু করেছে ‘ক্যামেরা কোম্পানি’ হিসেবে।

ভার্জের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, নতুন প্রাতিষ্ঠানিক নামটি গোপন রাখা হয়েছে ফেইসবুকের ভেতরেও; এমনকি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেরই জানা নেই এই বিষয়টি।

ফেইসবুক নিজেদের “একটি মেটাভার্স প্রতিষ্ঠান” হিসেবে পাল্টে ফেলতে চাইছে-- জানিয়েছে ভার্জ।

সোজা ভাষায় ব্যাখ্যা করলে, মেটাভার্স হচ্ছে এমন একটি ভার্চুয়াল জগৎ, যেখানে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ডিভাইস থেকে যোগ দিতে পারবেন এবং ওই ভার্চুয়াল পরিবেশে একে অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতা বা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসার সুযোগ পাবেন। অংশগ্রহণকারীরা সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তির জোরে মনে হবে যেন সবাই সামনাসামনি বসেই আলাপ চালাচ্ছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) খাতে বিশাল বিনিয়োগ করেছে ফেইসবুক। মেটাভার্স প্রকল্পের জন্য সম্প্রতি ইউরোপের বাজারে পাঁচ বছরে ১০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের ঘোষণাও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জুলাই মাসে ভার্জকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ বলেছিলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে “আমরা কার্যত এমন একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাবো যাতে মানুষ আমাদের সোশাল মিডিয়া কোম্পানির বদলে মেটাভার্স কোম্পানি হিসেবে দেখে।”

ফেইসবুক নিজেদের নাম পাল্টে নতুন করে ব্র্যান্ডিং শুরু করলে সাম্প্রতিক সমালোচনা ও বিতর্ক থেকে কিছুটা হলেও দুরত্ব সৃষ্টি করতে পারবে বলে মন্তব্য করেছে ভার্জ। সম্প্রতি সাবেক কর্মীদের কারণে বেশ বড় বিপাকে পড়েছে ফেইসবুক।

বিপুল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ নথিপত্র সংগ্রহ করে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ডেটা অ্যানালিস্ট ফ্রান্সেস হাউগেন। পরবর্তীতে ওই নথিপত্রের একটা বড় অংশ মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সরবরাহ করেন তিনি।

নথি বিশ্লেষণ করে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ফেইসবুকের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের বিভিন্ন অসংলগ্নতা। সেলিব্রেটি ও রাজনৈতিক পরিচয়ধারীদের আলাদা খাতির করে প্রতিষ্ঠানটি, সাধারণ ব্যবহারকারীদের উপর প্রযোজ্য নীতিমালা খাটে না ওই ‘বিশেষ’ ব্যক্তিদের উপর। কিশোর বয়সীদের উপর ইনস্টাগ্রামের বিরূপ প্রভাব জেনেও চেপে গেছে ফেইসবুক। এমনকি তাদের প্ল্যাটফর্মটি জাতিগত সহিংসতার পরোক্ষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জেনেও তাতে কোনো মাথা ব্যথা নেই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের।

ফেইসবুকের বক্তব্য আর কর্মকাণ্ডের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে মার্কিন সিনেটেও সাক্ষ্য দিয়েছেন হাউগেন। সিনেট সাবকিমিটিতে হাউগেন অভিযোগ তোলেন, মুনাফা ও ব্যবসা প্রসারের লোভে গ্রাহক নিরাপত্তার ধার ধারে না ফেইসবুক, নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে সহিংসতার উস্কানি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলছে প্রতিষ্ঠানটির অ্যালগরিদম।

হাউগেনের দেখাদেখি জনসমক্ষে তৎপর হয়েছেন ফেইসবুকের আরেক সাবেক কর্মী সোফি ঝ্যাং। ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ নথি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন সিনেটেও সাক্ষ্য দিতে আপত্তি নেই তার। চলতি মাসে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের কাছেও সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে এই দুই সাবেক ফেইসবুক কর্মীর।