কিশোর বয়সী ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে মরিয়া ইনস্টাগ্রাম

কিশোর বয়সী ব্যবহারকারীদের হারানোর ভয়ে শঙ্কিত ফেইসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম। প্রতিষ্ঠানটি কিশোর বয়সী ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে এতোটাই মরিয়া যে, ২০১৮ সালের শুরু থেকে ইনস্টাগ্রামের বৈশ্বিক বাজারজাতকরণ বাজেটের প্রায় পুরোটাই খরচ করা হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে আকৃষ্ট করার জন্য।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2021, 10:36 AM
Updated : 17 Oct 2021, 10:36 AM

অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ও গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে কিশোর বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য ইনস্টাগ্রামের এমন মরিয়া হওয়ার খবর জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস। ওই প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ইনস্টাগ্রামের অভ্যন্তরীণ একটি মেমোতে উল্লেখ ছিলো, “আমরা যদি মার্কিন কিশোর-কিশোরীদের বাজারে অবস্থান হারাই, তবে পুরো পাইপলাইন হাতছাড়া হয়ে যাবে আমাদের।”

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইনস্টাগ্রামের বাজারজাতকরণ খরচ ও কৌশলের প্রায় পুরোটাই কিশোর বয়সীদের ওই প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে। এই খাতে ২০২১ সালে খরচ ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ডলার। কেবল একটি বয়স সীমার ব্যবহারকারীদের এতো বেশি গুরুত্ব দেওয়া বাজার বিশ্লেষকদের চোখেও অস্বাভাবিক বলে জানিয়েছে মার্কিন দৈনিকটি।

বাজারজাতকরণ খরচের একটি অংশ অভিভাবক এবং তরুণদের জন্যেও আলাদা করে রেখেছে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করায় প্রাধান্য দেওয়া সামাজিক মাধ্যমটি। তবে, টিকটক ও স্ন্যাপচাটের মতো অ্যাপগুলোর উপস্থিতিতে কিশোর বয়সী ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতার সম্মুখীন হচ্ছে প্ল্যাটফর্মটি।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো এমন একটি সময়ে, যখন চারদিক থেকেই চাপের মুখে আছে ফেইসবুক ও প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন অন্য সেবাগুলো। অভ্যন্তরীণ নথি ও গবেষণা প্রতিবেদন ফাঁস করে ফেইসবুকের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন।

ফেইসবুকের অ্যালগরিদম সামাজিক বিভক্তি বাড়িয়ে সহিংসতা উস্কে দেয় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমটি মুনাফার লোভে কিশোর বয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইনস্টাগ্রামের বিরূপ প্রভাব অগ্রাহ্য করে-- এমনটাও বলেছেন হাউগেন। আর হাউগেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফেইসবুকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে মার্কিন সিনেট এবং যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।   

হাউগেনের ফাঁস করা নথিপত্র বিশ্লেষণ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছিল, কিশোর বয়সী ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে ইনস্টাগ্রাম। অ্যাপটি কিশোরীদের মধ্যে উদ্বেগ, অস্থিরতা ও শারীরিক গঠন নিয়ে কিশোরীদের হীনমন্যতার অনুভূতিকে আরও জোরালো করে-- এই তথ্য উঠে এসেছে খোদ ফেইসবুকের নিজস্ব গবেষণা থেকেই।

ফেইসবুক দাবি করছে, তাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ও ফলাফল দুটোই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, কিশোর বয়সীদের উপর ইনস্টাগ্রামের ইতিবাচক প্রভাবই উঠে আসে ওই গবেষণা থেকে।

অন্যদিকে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট বলছে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ার ভান করেছেন এক ফেইসবুক মুখপাত্র। “যদিও এটা সত্যি নয় যে আমরা আমাদের বাজারজাতকরণ বাজেটের পুরোটাই কিশোর বয়সীদের পেছনে খরচ করি, আমরা এটা আগেও বলেছি যে কিশোররা হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক যারা নতুন নতুন ট্রেন্ড আগেই ধরতে ও তৈরি করতে পারে। তারা আমাদের বাজারজাতকরণ কৌশলের অংশ হবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”

সেপ্টেম্বর মাসে সমালোচনার মুখে ‘ইনস্টাগ্রাম কিডস’ প্রকল্প স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে ফেইসবুক। ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ইনস্টাগ্রামের আলাদা সংস্করণটি বানানোর পরিকল্পনা করেছিল এই সামাজিক মাধ্যম গ্রুপটি। ইনস্টাগ্রামের দাবি ছিল, বিজ্ঞাপনমুক্ত হবে ‘ইনস্টাগ্রাম কিডস’, অভিভাবকরা সরাসরি নজর রাখতে পারবেন এতে। ফেইসবুক এমন আশ্বাস দেওয়ার পরেও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত সমালোচক এবং বিশেষজ্ঞরা।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি বলছে, ১৩ বছর বয়সী কিশোরদের উদ্দেশ্যে বানানো বিজ্ঞাপনগুলো যে শিশুদের নজরও আকৃষ্ট করবে, সেই বিষয়টি জানতো ফেইসবুক। তবে গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন দৈনিকটি জানিয়েছে, ফেইসবুকের শীর্ষ কর্মকর্তারা সাধারণ কর্মীদের বলেছিলেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ইনস্টাগ্রামে সাইন-আপ করা থেকে দূরে রাখতে যতোটা সম্ভব তা করছে ফেইসবুক; কিন্তু তারপরও প্ল্যাটফর্মটিতে যোগ দিচ্ছে শিশুরা।  

অন্যদিকে, ইনস্টাগ্রাম প্রধান অ্যাডাম মোসেরি বলেছেন, শিশুদের জন্য আলাদা ইনস্টাগ্রাম বানানোই “সঠিক কাজ” বলে বিশ্বাস করেন তিনি। কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে মোসেরি বলছেন, শিশুরা ইতোমধ্যেই অনলাইনে আছে এবং ইনস্টাগ্রামে প্রবেশাধিকারের জন্য নিজের বয়স নিয়ে মিথ্যাচার করে তারা।