‘বোমা ফাটানো’ সাক্ষাৎকারে কী বলেছেন সাবেক ফেইসবুক কর্মী?

সময়টা একদমই ভালো যাচ্ছে না ফেইসবুকের। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত ‘ফেইসবুক ফাইলস’ শিরোনামের সিরিজ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পুরো বিষয়টি গড়িয়েছে মার্কিন সিনেট পর্যন্ত। এর মধ্যেই জনসমক্ষে এসেছেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ গবেষণা ও নথিপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে সরবরাহকারী সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন। 

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2021, 11:51 AM
Updated : 5 Oct 2021, 12:27 PM

মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে হাউগেনের। ঠিক তার আগের দিন মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেছেন তিনি। ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালী নিয়ে একের পর এক বোমা ফাটিয়েছেন হাউগেন; যা ফেইসবুকের জন্য শুধু বড় ধাক্কা নয়, সম্ভবত পাল্টে দেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সাধারণ ব্যবহারকারীদের দৃষ্টিভঙ্গিও।

নিজের পুরো সাক্ষাৎকার জুড়েই ফেইসবুকের নানা নেতিবাচক দিকে আলোকপাত করেছেন হাউগেন। প্রযুক্তি শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতার আছে তার। চাইলেই পুরো বিষয়টি ভুলে চুপচাপ অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে পারতের হাউগেন। সেটি না করে তথ্য ফাঁসকারী হতে গেলেন কেন?

হাউগেন বলছেন, তার পরে যেন কাউকে এমন পরিস্থির মুখে পড়তে না হয়, তার জন্যই এমন পদক্ষেপ। “চিন্তা করে দেখুন যে ফেইসবুকের ভিতরে কী চলছে সেটা আপনি জানেন, কিন্তু বাইরের কেউ বিষয়গুলো জানেন না। আমি ফেইসবুকের ভেতরে থেকে গেলে আমার ভবিষ্যত কী হবে সেটা জানতাম। সেটা হলো, একের পর এক মানুষ ফেইসবুকের ভিতর থেকে এটার মোকাবেলার করার চেষ্টা করতে করতে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছে”।

ফেইসবুক শুধু নিজের স্বার্থই দেখে

“ফেইসবুকে আমি যেটা বারবার দেখেছি সেটা হলো, জনসাধারণের জন্য কোনটা ভালো আর ফেইসবুকের জন্য কোনটা ভালো, তার মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। আর ফেইসবুক প্রতিবারই আরও বেশি মুনাফা অর্জনের মতো নিজের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে”।

সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা ফেইসবুকের

পেশাজীবনে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছেন হাউগেন। ১৫ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন গুগল ও পিন্টারেস্টের মতো প্রতিষ্ঠানে। তার চোখে ফেইসবুকের অবস্থাই সবচেয়ে বাজে। “আমি বেশ কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম দেখেছি। কিন্তু আমি আগে যা দেখেছি, সেই তুলনায় ফেইসবুকের সবকিছুই যথেষ্ট খারাপ”, বলেন তিনি। 

ছবি: রয়টার্স

পরিকল্পিতভাবেই নথিপত্র সরিয়েছেন হাউগেন

ফেইসবুকের বিপুল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ নথিপত্র সংগ্রহ করেছিলেন হাউগেন। বেশ আগেই ফেইসবুক ছাড়ার এবং প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম-আন্তরিকতার অভাব নিয়ে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কেউ যেন তার সরবরাহ করা নথিপত্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে, সেজন্য পরিকল্পিতভাবেই এগিয়েছেন হাউগেন। 

“২০২১ সালের কোনো এক সময়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই কাজটা পদ্ধতিগতভাবে করতে হবে এবং যথেষ্ট (নথিপত্র) বের করে নিতে হবে যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে যে এসব আসল কি না।” 

সমাজব্যবস্থা ‘ছিড়ে ফেলছে’ ফেইসবুক 

অনলাইনে ভুয়া তথ্যের প্রচারণা, মিথ্যাচার, সহিংসতা বন্ধে বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের দাবি করে আসছে ফেইসবুক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব গবেষণা বলছে একদমই উল্টো কথা। সমাজব্যবস্থার উপর প্ল্যাটফর্মটির বিরূপ প্রভাবের প্রমাণ উঠে এসেছে একাধিক সূত্র থেকে।

এ প্রসঙ্গে হাউগেন বলেন, “আমরা এমন একটি তথ্যনির্ভর পারিপার্শিক অবস্থার মধ্যে আছি যেটা ক্ষোভ, বিদ্বেষ এবং মেরুকরণের কন্টেন্ট দিয়ে পূর্ণ, এটা আপনার নাগরিক বিশ্বাসকে ক্ষয় করতে থাকে, একে অন্যের উপর বিশ্বাস নষ্ট করতে থাকে, আমাদের একে অন্যের যত্ন নেওয়ার ক্ষমতা কমাতে থাকে। ফেইসবুকের যে সংস্করণটি এখন আছে সেটা আমাদের সমাজব্যবস্থাকে ছিড়ে ফেলছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিগত সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে।”

সামাজিক দায়বদ্ধতার ধার ধারে না ফেইসবুক

লোক দেখানো কর্মকাণ্ড দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচক আর নীতিনির্ধারকদের খুশি রাখতে পারলে তাতেই খুশি ফেইসবুক, এর বাইরে সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই প্রতিষ্ঠানটির; অন্তত এমনটাই বলছেন হাউগেন।

“ফেইসবুকের যে বিভাগে আমি কাজ করতাম, তার নাম ছিলো ‘নাগরিক শুদ্ধতা (সিভিক ইন্টিগ্রিটি)’। ফেইসবুক যেন সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি হয়ে উঠে, সেটা নিশ্চিত করাই ছিলো ওই বিভাগটির দায়িত্ব। এবং নির্বাচনের ঠিক পর পরই তারা আমাদের বলে যে, আমরা বিভাগটি ভেঙে দিচ্ছি। তাদের ভাবখানা এমন ছিল যেন-- ওহ কী সুন্দর, আমরা নির্বাচন পাড় হয়ে গেছি, কোথাও দাঙ্গা হয়নি, আমরা সিভিক ইন্টিগ্রিটি বন্ধ করে দিতেই পারি”।

“তারা যখন সিভিক ইন্টিগ্রিটি বন্ধ করে দেয়, তখনই আমার মনে হয় যে ফেইসবুক বিপজ্জনক হয়ে উঠা ঠেকাতে যেখানে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন সেখানে সেই বিনিয়োগ করার ইচ্ছা তাদের নেই”। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন চলাকালীন ভুয়া তথ্যের প্রচার ঠেকাতে ফেইসবুক নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে চালু রেখেছিলো বলে জানান হাউগেন। “নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তারা সেটি বন্ধ করে দিয়েছিলো অথবা সেটিংস পাল্টে আগের অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলো, যা সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা মনে হয়েছে”, বলেন তিনি। 

ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে বাড়তি কর্মী নিতে চায়না ফেইসবুক

সাক্ষাৎকারে হাউগেনের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের সাইবার নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দেয়না ফেইসবুক। হাজার কোটি ডলারের প্রতিষ্ঠান হলেও সাইবার নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্বে সঙ্গে নেন না ফেইসবুকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। 

ছবি: সিবিএস

নিজের দলের উদাহরণ দিয়ে হাউগেন বলেন, “আমার কাউন্টার এসপিওনাজ টিমে দশ জনেরও কম কর্মী ছিলো। চীন যখন তাইওয়ানের নাগরিকদের উপর নজরদারি চালায় বা উইঘুরদের উপর নজরদারি চালায়, ছয়-সাতজন মানুষ মিলে সেটা কীভাবে মোকাবেলা করবে? আমাদের হাতে যতো কেইস থাকতো তার এক তৃতীয়াংশ নিয়ে কাজ করতে পারতাম আমরা। আমাদের বসে তালিকা বানাতে হতো যে কাকে আমরা রক্ষা করতে পারবো আর কাকে পারবো না। কিন্তু এমনটা হওয়ার কেনো কারণ নেই। আমরা চাইলেই দশগুণ কর্মী নিতে পারতাম। আমাদের কাছে যে কেইসগুলো ছিলো, সেগুলো মোকাবেলা করতে পারছিলাম না বলে আমরা ইচ্ছা করেই কোনো ডিটেকশন সিস্টেম বানাইনি”।

আর পুরো বিষয়টি নিয়ে অবহিত ছিলেন ফেইসবুকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। “আমি যখনই আমার দুশ্চিন্তাগুলো প্রকাশ করেছি, বলেছি যে আমাদের যথেষ্ট কর্মী নেই, আমাকে সরাসরি বলা হয়েছে যে, ফেইসবুকে আমরা অনেক কিছুর কমতি নিয়েই অসম্ভবকে সম্ভব করি, যা সম্ভব হবে বলে আগে কেউ চিন্তাই করেনি”--যোগ করেন হাউগেন। 

উচ্চপদস্থ কর্তকর্তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব আর অভিজ্ঞতার অভাব

যথেষ্ট কর্মীর অভাব জেনেও নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে ফেইসবুকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এই গড়িমসির পেছনে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব একটি কারণ হতে পারে ইঙ্গিত দিয়েছেন হাউগেন। “এর পেছনে কোনো নেতিবাচক উদ্দেশ্য ছিলো বলে মনে করি না আমি। তবে, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের একটা বড় অংশ ফেইসবুকের প্রথম দিককার কর্মী। তারা হয়তো অন্য কোথাও কখনো কাজই করেননি। তারা জানেনই না যে কতোটা অনুপযুক্তভাবে সম্পদের বন্টন করা হচ্ছে।”

নৈতিকতার প্রশ্নে ফেইসবুক দেউলিয়া

একের পর এক কেলেঙ্কারির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের কর্মীদের অনেকেই ফেইসবুকে কাজ করতে ইচ্ছুক নন। এমন পরিস্থিতিতে ফেইসবুকের নৈতিকতার প্রশ্নে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাউগেন।

“নৈতিকতার মানদণ্ডে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা মার্ক (জাকারবার্গ) ও ফেইসবুকের জন্য এটা স্বীকার করে নেওয়ার সুযোগ যে, আমরা পুরোপুরি ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছি; এর কিছু আমাদের দোষে হয়েছে, আর কিছুর দায় আমাদের নয়; কিন্তু আমরা আমাদের সক্ষমতার এতোটাই বাইরে চলে গেছি যে, আমাদের রিসেট করা উচিত, আমরা দুঃখিত কিন্তু আমরা ভালো করার চেষ্টা করছি।”

“তার (জাকারবার্গ) যেটা করা উচিত, সেটি হলো স্বীকার করে নেওয়া যে আমাদের পুরো প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করতে হবে। আমাদের স্বীকার করতে হবে যে মানুষ আর এখানে কাজ করতে চায় না এবং এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। তারা যদি এটা না করে, তাহলে এটা চলতেই থাকবে এবং বর্তমান অবস্থার আরও অবনতি হবে”।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের উপর ফেইসবুকের প্রভাব ‘ভয়াবহ’

বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফেইসবুকের প্রভাব তাকে “আতঙ্কিত” করে বলে জানিয়েছেন হাউগেন। বিশ্বের বিভিন্ন দুর্গম প্রান্তে ইন্টারনেট সেবা চালু করে গ্রাহক টেনেছে ফেইসবুক। সেই সংযোগের সূত্র ধরে, পরবর্তী কোন দেশটি সংকটের মুখে পড়বে সেটি আঁচ করতে বছর দুয়েক আগে ফেইসবুক কোন দেশগুলোতে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিয়েছে, সেগুলোর দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন হাউগেন।

“তথ্য প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নয়। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণের টাকা কামায় ফেইসবুক। যখনই ফেইসবুক কোনো নতুন ভাষার অঞ্চলে প্রবেশ করে, ইংরেজি বা ফরাসী ভাষার বাজারের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, ওই একই পরিমাণ বা আরও বেশি অর্থ খরচ হয় ওই ভাষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করতে। প্রতিটি নতুন ভাষার জন্য অর্থ খরচ হয়, কিন্তু গ্রাহকের সংখ্যা কমতে থাকে। তাই অর্থনীতির বিচারে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিনিয়োগ ফেইসবুকের কাছে যৌক্তিক মনে হয় না।”

ছবি: রয়টার্স

প্রত্যেকটি ভাষার জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তথ্য যাচাইয়ের জন্য স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের অনুপস্থিতিতে ফেইসবুকের প্ল্যাটফর্মটি ভুয়া তথ্যের প্রচারণায় অহরহ ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর ফলে মানুষ মারাও যাচ্ছে বলে জানান হাউগেন।

“আমি শঙ্কিত যে এটা এমন একটা শক্তি যা পুরো সমাজব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলবে”--যোগ করেন হাউগেন।

লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই অ্যালগরিদমের

ব্যবহারকারী তার টাইমলাইনে কোন কন্টেন্ট দেখবেন সেটি নির্ধারণের জন্য ফেইসবুকের যে অ্যালগরিদমটি রয়েছে সেটি প্রতিষ্ঠানটির প্রচার করা লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে নিজস্ব গবেষণাতেই উঠে এসেছে-- জানিয়েছেন হাউগেন। ফেইসবুকে ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক টানছে বিদ্বেষপূর্ণ কন্টেন্ট। এমন কন্টেন্ট প্রকাশ না করলে প্রয়োজনীয় ইউজার ট্রাফিক পায় না ফেইসবুক, যার উপর প্রতিষ্ঠানটির আয় নির্ভর করে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও এই বিষয়টি জানে এবং এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে বলে উঠে এসেছে ফেইসবুকের নিজস্ব গবেষণাতেই।

হাউগেন বলেন “এখন আমরা যদি রাগী, বিদ্বেষপূর্ণ, মেরুকরণপ্রবণ কন্টেন্ট প্রকাশ না করি, আমরা তাহলে কোনো কিছুই পাই না। আমরা আগে এটা খুব কম করতাম, কিন্তু এখন আমরা যদি এটা না করি তাহলে আমরা ট্রাফিক আর এনগেজমেন্ট পাই না। আর সেটা না পেলে আমাদের চাকরিও থাকবে না।”

“আপনার হাতে যখন এমন একটি ব্যবস্থা থাকবে যেটা রাগ দিয়েই হ্যাক করা যায়, আর প্রকাশকরা যখন ভাববে যে--ওহ আমি যদি আরও বেশি আক্রমণাত্মক, বিদ্বেষপূর্ণ কন্টেন্ট প্রকাশ করি তাহলে বেশি টাকা কামাবো আমি; তখন পুরো বিষয়টি ফেইসবুকের জন্যেও লাভজনক এবং প্রকাশকদের জন্যেও লাভজনক, ফেইসবুক এমন একটা প্রণোদনা ব্যবস্থা তৈরি করে রেখেছে যা মানুষকে একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে”-- বলেছেন হাউগেন। 

অ্যালগরিদম পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে রাজনীতির মাঠে

হাউগেনের ফাঁস করা নথিপত্রের মধ্যে ফেইসবুকের একটি অভ্যন্তরীণ গবেষণা বলছে, অ্যালগরিদম পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে রাজনীতির মাঠে। বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণাত্মক কন্টেন্টে এনগেজমেন্ট বেশি হয় বলে তেমন কন্টেন্টগুলোই ব্যবহারকারীদের টাইমলাইনে বেশি দেখায় ফেইসবুকরে অ্যালগরিদম। এই বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোও জানে এবং ফেইসবুক অ্যালগরিদমের কারণে জটিল পরিস্থিতিতে পড়ছে তারাও। ভোট লড়াইয়ে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে আক্রমণাত্মক কন্টেন্টের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকেও।

হাউগেন বলেন, “ফেইসবুকের কেউ খারাপ চায় না, কিন্তু প্রণোদনা ব্যবস্থাতেই সমস্যা। মানুষ যতো বেশি কন্টেন্টে দেখবে, আলোচনা করবে, ততো বেশি কামায় ফেইসবুক। অনুভূতিকে নাড়া দেয়, এমন কন্টেন্ট বেশি চান ভোক্তারা। তারা যতো আক্রমণাত্মক কন্টেন্টে পান ততো বেশি কন্টেন্ট তারা ভোগ করেন, এনগেজমেন্ট ততো বেশি বাড়ে।”

ইউরোপের রাজনৈতিক দলগুলো এই জটিলতা উপলব্ধি করতে পেরে ফেইসবুককে এই বিষয়ে জানিয়েছিলো বলে নিশ্চিত করেছেন হাউগেন। 

অন্য যে কোনো সামাজিক মাধ্যমের তুলনায় ‘খারাপ’ ইনস্টাগ্রাম। 

হাউগেনের হাত দিয়ে ফাঁস হওয়া গবেষণার মধ্যে যে বিষয়টি মার্কিন সিনেটের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেটি হলো কিশোরবয়সীদের উপর ইনস্টাগ্রামের প্রভাব। হাউগেন বলছেন, “ফেইসবুকের নিজস্ব গবেষণা বলছে, ব্যাপারটা এমন নয় যে ইনস্টাগ্রাম শুধু কিশোরীদের বিপজ্জনক বা তাদের ক্ষতি করছে, বরং এটি অন্য যে কোনো সামাজিক মাধ্যমের তুলনায় খারাপ।


সংশ্লিষ্ট সংবাদ: