সব মোবাইল ডিভাইসে ইউএসবি-সি চার্জার চায় ইইউ

সব স্মার্টফোন এবং ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য সর্বজনীন চার্জিং প্রযুক্তি চায় ইউরোপিয়ার ইউনিয়ন (ইউ)। সব ডিভাইসের জন্য একই প্রযুক্তিগত মান নিশ্চিত করতে নতুন আইনের প্রস্তাব করেছে ইউরোপিয়ার কমিশন (ইসি)। 

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2021, 11:36 AM
Updated : 24 Sept 2021, 11:36 AM

বিবিসি জানিয়েছে, ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-বর্জ্য) উৎপাদন কমিয়ে আনতে চাইছে ইউ। নতুন ফোন কেনার পরও পুরনো চার্জার ব্যবহারে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।   

প্রস্তাবে ইসি বলছে, ইউরোপিয়ার ইউনিয়ন বাজারের সব স্মার্টফোনে ইউএসবি-সি চার্জিং সুবিধা থাকতে হবে। 

তবে এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে অ্যাপল বলছে, উদ্ভবনী প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হবে এতে। লাইটনিং চার্জিং পোর্টের মূল নির্মাতা অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি আইফোনগুলোতেও তাদের নিজস্ব ‘লাইটনিং কানেক্টর’ ব্যবহৃত হয়।

“আমরা শঙ্কিত যে এক রকমের কানেক্টর নিয়ে এমন কড়া নীতিমালার প্রয়োগ উদ্ভবনী প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার বদলে বাধাগ্রস্থ করবে যা পরবর্তীতে ইউরোপ এবং বিশ্বের সব ক্রেতার ক্ষতি করবে”--বিবিসিকে বলেছে অ্যাপল। অ্যাপল ২০৩০ সালের মধ্যে সব ডিভাইস ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অন্যদিকে বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এখনও ইউএসবি মাইক্রো-বি চার্জিং পোর্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, ইতোমধ্যে ইউএসবি-সি পোর্টের ব্যবহার শুরু করেছে নির্মাতাদের একটা বড় অংশ।   

২০১৯ সালের একটি গবেষণা বলছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে ২০১৮ সালে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের প্রায় অর্ধেকে ইউএসবি মাইক্রো-বি চার্জিং পোর্ট ছিলো। ইউএসবি-সি পোর্ট ছিলো ২৯ শতাংশ স্মার্টফোনে, আর লাইটনিং কানেক্টর ছিলো ২১ শতাংশ স্মার্টফোনে।   

ইসির প্রস্তবনায় যে ডিভাইসগুলোতে ইউএসবি-সি পোর্ট বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে, সেগুলো হলো: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ক্যামেরা, বহনযোগ্য স্পিকার, এবং হ্যান্ডহেল্ড ভিডিও গেইম কনসোল। 

তবে ওই প্রস্তাবনায় ইয়ারবাড, স্মার্টওয়াচ এবং ফিটনেস ট্র্যাকারের মতো ডিভাইসগুলোর কথা উল্লেখ নেই কারিগরি জটিলতা বিবেচনা করে। এ ছাড়াও, চার্জিংয়ের গতির ক্ষেত্রে ডিভাইস নির্বিশেষে একই মান বজায় রাখার কথা রয়েছে। অর্থাৎ, দ্রুত চার্জ নিতে সক্ষম ডিভাইসগুলো চার্জ হতে হবে একই গতিতে। 

মূল কারণ: ই-বর্জ্য

প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে সর্বজনীন মানের জন্য দাবি তুলে আসছেন ইউরোপের রাজনীতিবিদরা। ওই দাবি বাড়তি গতি পেয়েছে ইউরোপিয়ান কমিশনের গবেষণা থেকে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর শুধু ইউরোপেই নষ্ট ও ফেলে দেওয়া চার্জিং কেবল থেকে ১১ হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়।  

২০২০ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ৪২ কোটি স্মার্টফোন এবং অন্যান্য বহনযোগ্য ডিভাইস বিক্রি হয়েছে। ওই অঞ্চলে প্রতিজন ব্যবহারকারীর মালিকানায় তিনটি করে মোবাইল ফোন চার্জার থাকে, যার মধ্যে দুটির নিয়মিত ব্যবহার হয়।

এই প্রসঙ্গে বাজার বিশ্লেষক সিসিএস ইনসাইটের বেন উড বিবিসিকে বলেন, “একক চার্জিং মান সাধারণ ভোক্তাদের চোখে সাধারণ জ্ঞানের জয় হিসেবে বিবেচিত হবে”। 

“যদিও অ্যাপল নিজস্ব লাইটনিং কানেক্টরের পক্ষে জোরালো যুক্তি দিয়েছে এবং আইফোন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা একশ’ কোটি, ম্যাক এবং আইপ্যাডসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু পণ্য এখন ইউএসবি-সি সমর্থন করে। আশা করা যায়, অ্যাপল অন্য ডিভাইসগুলোতে ইউএসবি-সি পোর্ট জুড়ে দিতে থাকলে এটি কোনো সমস্যাই হবে না”। 

ইসি’র এই প্রস্তবনা কার্যকর হতেও বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রস্তবনাটি নিয়ে আরও তর্ক-বিতর্ক হবে ইউরোপের পার্লামেন্ট এবং জাতীয় পর্যায়ে। প্রস্তাবনায় সংশোধনের দাবিও তুলতে পারেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যরা। সেক্ষেত্রে ইসি সংশোধনে রাজি হওয়ার পরেই আইন হিসেবে কার্যকর হবে এটি। 

বিবিসি জানিয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ প্রস্তাবনা কার্যকর করার আশা করছে ইসি। এরপর ইউনিয়নের সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ের আইন পরিবর্তনের জন্য দুই বছর সময় পাবেন। নির্মাতারাও ২৪ মাস সময় পাবেন। 

“আমরা এই শিল্পকে নিজস্ব সমাধান খোঁজার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছি। সর্বজনীন চার্জারের জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। আমাদের ক্রেতা ও পরিবেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়”--মন্তব্য করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গ্রেথ ভেস্টেগার।