বিটকয়েন মাইনিংয়ে বছরে জমছে ৩০ হাজার টন ই-বর্জ্য

বিটকয়েন মাইনিং থেকে প্রতিবছর যে ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-বর্জ্য) উৎপন্ন হয়, ওজনের হিসাবে তার তুলনা করা যেতে পারে নেদারল্যান্ডসের মতো একটি দেশ থেকে উৎপন্ন তথ্য-প্রযুক্তি সরঞ্জামের গোটা বছরে তৈরি হওয়া বর্জ্যের সঙ্গে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে-- বছরে ৩০ হাজার সাতশ’ টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে বিটকয়েন মাইনিং থেকে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2021, 09:12 AM
Updated : 21 Sept 2021, 10:18 AM

সম্প্রতি ‘রিসার্চ, কনসার্ভেশন অ্যান্ড রিসাইক্লিং’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।

বিবিসি বলছে, প্রতিটি বিটকয়েন লেনদেন ২৭২ গ্রাম ই-বর্জ্য তৈরি করে। এর তুলনায় একটি আইফোন ১৩’র ওজন ১৭৩ গ্রাম।

বিটকয়েন লেনদেন যাচাই-বাছাই ও লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন মাইনাররা। এই কাজে যে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হয়, সেটা নিয়ে বিতর্ক চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। ক্রিপ্টোকারেন্সি বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করছে এই খাত থেকে উৎপাদিত ই-বর্জ্য।

বিবিসি জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিটকয়েন মাইনিংয়ের পেছনে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হয়, তা ফিলিপাইনের মতো একটি দেশের বাৎসরিক বিদ্যুৎ খরচের চেয়ে বেশি। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের ফলে উৎপাদিত গ্রিন হাউজ গ্যাসের বিষয়টিও যোগ হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সার্বিক বিতর্কে।    

অন্যদিকে দ্রুত কার্যক্ষমতা হারায় বিটকয়েন মাইনিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার। গবেষকদের অনুমান, মাইনিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ডিভাইসের গড় আয়ু ১.২৯ বছর। অর্থাৎ, দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় ক্রিপ্টোমাইনিংয়ের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার হার্ডওয়্যার। 

এর ফলে যে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তা নেদারল্যান্ডসের মতো একটি দেশের বাৎসরিক “ছোট আইটি এবং টেলিকমিউনিকেশন” বর্জ্যের সঙ্গে তুলনীয় বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা। ই-বর্জ্যের এই শ্রেণিতে পড়ে মোবাইল ফোন, ব্যক্তিগত কম্পিউটার, প্রিন্টারের মতো ব্যবহারের অযোগ্য প্রযুক্তি পণ্যগুলো।

উৎপাদন ব্যয় বিচারে বিটকয়েন মাইনিংয়ে সবচেয়ে বেশি খরচ বিদ্যুৎ বিলের পিছনে। তাই মাইনারদের কাছে কদর বেড়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বিশেষায়িত প্রসেসরের। ‘অ্যাপ্লিকেশন-স্পেসিফিক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (এএসআইসি)’-এর দিকে ঝুঁকেছেন মাইনারদের একটা বড় অংশ।  

কিন্তু এএসআইসি চিপের সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হলো, এই চিপগুলো এতোটাই বিশেষায়িত যে মাইনিংয়ে ব্যবহারের উপযোগিতা ফুরিয়ে গেলে “অন্য কোনো কাজে পুনঃব্যবহার করা যায় না, এমনকি ভিন্ন কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যালগরিদমও চলে না এতে”--জানিয়েছেন গবেষকরা।

তবে, বিটকয়েন মাইনিংয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামের মধ্যে “মেটাল কেসিং এবং অ্যালুমিনিয়াম হিট-সিংকগুলো” পুনঃব্যবহারযোগ্য।

পুরো বিশ্বে যতো ইলেকট্রনিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার মধ্যে কেবল ১৭ শতাংশ পুনঃব্যবহারযোগ্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। তবে, ওই একই প্রতিবেদন বলছে, বিটকয়েন মাইনারদের ক্ষেত্রে এই বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। বেশিরভাগ মাইনার যে সব দেশের নাগরিক, সেই দেশগুলোতে ই-বর্জ্য পুনঃব্যবহারের হার আরও কম হতে পারে। ওই দেশগুলোতে যথাযথ নীতিমালার অনুপস্থিতি বা প্রায়োগিক দুর্বলতাও সার্বিক বিতর্কের আরেকটি শাখা।

অন্যদিকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারে চলছে চিপ ঘাটতি। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ই-বর্জ্য উৎপাদনের পাশাপাশি “খুব ঘন ঘন কয়েক লাখ ডিভাইসের হার্ডওয়্যার পাল্টাতে হয় বলে মাইনিং ডিভাইসগুলো অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কম্পিউটার চিপের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে”।

ই-বর্জ্য সমস্যার সমাধানে বিটকয়ের লেনদেন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তুলনামূলক কম কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োজন হয়, এমন কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।