বিবিসি জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগের এই অভিনব কায়দার প্রয়োগ ঘটানো হয়ে অ্যালফাবেট এক্স-এর ‘প্রজেক্ট তারা’র অধীনে। অ্যালফাবেট এক্স আদতে সার্চ জায়ান্ট গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেডের অধীন গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থা। বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে সংস্থাটি, অনেক ক্ষেত্রেই থাকে কঠোর গোপনীয়তা।
নিজেদের সর্বশেষ সাফল্য নিয়ে অ্যালফাবেট এক্স দল এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে, সর্বশেষ পরীক্ষাটি রিপাবলিক অফ কঙ্গোর শহর ব্রাজাভিল এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর শহর কিনশাসার মধ্যে “বেশ একগুঁয়ে একটি সংযোগ শূন্যতা” পূরণ করেছে।
উল্লেখ্য, নাম প্রায় একই হলেও রিপাবলিক অফ কঙ্গো এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো আদতে দুটি আলাদা দেশ। ১৯৬০ সালে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দখলদারিত্ব থেকে প্রায় একই সময়ে স্বাধীনতা পায় দেশ দুটি।
ব্রাজাভিল এবং কিনশাসা, দুই শহরের মধ্যকার দূরত্ব কেবল পাঁচ কিলোমিটার হলেও মাঝের নদীর কারণে প্রচলিত পদ্ধতিতে ফাইবার কেবল দিয়ে দুই শহরের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা জটিল ও ব্যয়বহুল ছিলো। ইন্টারনেট কেবল নদীর পাড় ঘুরিয়ে নেওয়ায় ব্রডব্যান্ড সংযোগের খরচ বেড়ে গিয়েছিলো পাঁচ গুণ বেশি।
এই সমস্যার আংশিক সমাধান করেছে অ্যালফাবেট এক্স-এর আলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা বা দ্য ওয়্যারলেস অপটিকাল কমিউনিকেশন (ডব্লিউওসি) সিস্টেম।
অ্যালফাবেট এক্স-এর গবেষক দল জানিয়েছে, ডব্লিউওসি সিস্টেম ব্যবহার করে তারা ২০ দিনে দুই শহরের মধ্যে প্রায় সাতশ টেরাবাইট ডেটা সরবরাহ করতে পেরেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রজেক্ট তারার কাজ চলছে তিন বছর ধরে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা চালু করতে ইকোনেট গ্রুপ এবং লিকিইউ টেলিকমের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করছে অ্যালফাবেট এক্স, এমনকি কেনিয়ায় বাণিজ্যিক বাজারজাতকরণ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডব্লিউওসি সিস্টেমের কাজের ধরন অনেকটাই ফাইবার কেবলের মতো, মূল পার্থক্য হচ্ছে কোনো কেবল কেসিং নেই এখানে। খালি চোখে অদৃশ্য এবং খুব সরু আলোর তরঙ্গের মাধ্যমে ডেটা পাঠায় এই প্রযুক্তি। ফাইবার কেবলের ভিতরেও আলোর তরঙ্গের মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান হয় প্রায় একই ভাবে।
ডব্লিউওসি সিস্টেম এসেছে ‘ফ্রি স্পেস অপটিকাল কমিউনিকেশন’ প্রযুক্তি থেকে। বায়ুমণ্ডলে ভাসমান একাধিক বেলুনের মধ্যে লেজার ব্যবহার করে ডেটা পাঠানোর প্রকল্প ‘প্রজেক্ট লুন’ থেকে ওই প্রযুক্তির উৎপত্তি। বাণিজ্যিক কোনো সম্ভাবনা না থাকায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রজেক্ট লুন বন্ধ করে দেয় অ্যালফাবেট।
এই প্রযুক্তি যে এখনও নিঁখুত নয়, সেটি স্বীকার করছেন এর নির্মাতা। বিশেষ করে কুয়াশা, মেঘ বা আলোর তরঙ্গের মাঝ দিয়ে পাখি উড়ে যাওয়া ছাড়াও বৈরি আবহাওয়ায় কারণে বাধাগ্রস্থ হতে পারে ডব্লিউওসি সিস্টেম।
তবে লেজার ট্রান্সমিশনের শক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে ওই জটিলতা মোকাবেলা করা সম্ভব বলে উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। অনেকটাই টেলিস্কোপের মতো কাজ করে ডব্লিউওসি সিস্টেম; আয়না, আলো, সফটওয়্যার আর হার্ডওয়্যার--এই চার মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় আলোর গন্তব্যস্থল। প্রতিবেদন বলছে, মাঝখান দিয়ে পাখি উড়ে যাওয়ার ফলে সংযোগের ব্যাঘাত এড়ানোর উপায়ও খুঁজে পেয়েছেন এর নির্মাতারা।
এই প্রসঙ্গে ব্লগ পোস্টে অ্যালফাবেট এক্স বলেছে, “যদিও স্যান ফ্রান্সিসকোর মতো কুয়াশাচ্ছন্ন শহর কখনোই ডব্লিউওসির জন্য আদর্শ জায়গা ছিলো না, পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে তারার সংযোগের জন্য আদর্শ আবহাওয়া আছে।”
কেনিয়া, ভারত, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রেও এই প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে অ্যালফাবেট এক্স।