‘অজ্ঞাতনামা’ বিটকয়েন স্রষ্টার ভাস্কর্য উন্মোচন হাঙ্গেরিতে

বিটকয়েনের অজ্ঞাতনামা প্রতিষ্ঠাতাকে সম্মান জানিয়ে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে সম্প্রতি এক ভাস্কর্য উন্মোচন করেছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি কমিউনিটির সদস্যরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2021, 09:45 AM
Updated : 19 Sept 2021, 10:04 AM

বৃহস্পতিবার বুদাপেস্টের বুদা অংশে ‘গ্রাফিসফট বিজনেস পার্কে’ পাথরের স্তম্ভের উপর দেখা গেছে মানব আকৃতির ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যটিকে। পাথরের স্তম্ভে লিখে রাখা হয়েছে বিটকয়েন প্রবর্তকের ছদ্মনাম, ‘সাতোশি নাকামোতো’।

“আমরা সাতোশিকে গোটা ক্রিপ্টোকরেন্সি শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা জনক হিসেবেই দেখে থাকি।” – বলেছেন বিটকয়েন সাংবাদিক ও প্রকল্প প্রধান আন্দ্রাস জিওর্ফ। “তিনি বিটকয়েন সৃষ্টি করেছেন, ব্লকচেইন প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের বাজারের ঈশ্বর।” – যোগ করেন এ সাংবাদিক।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন বলছে, ভাস্কর্যটির চেহারার কোনো সুনির্দিষ্ট অবয়ব নেই। এর বদলে নাকামোতোর চেহারার অংশটি পলিশ করা মসৃণ, ফলে বিটকয়েন প্রতিষ্ঠাতার চেহারায় নিজ চেহারারই অবয়ব দেখবেন বিটকয়েন প্রেমীরা। এর ফলে দীর্ঘ দিন ধরে প্রচলিত উক্তি “আমরা সবাই সাতোশি” –এর রূপই ফুটে উঠেছে ভাস্কর্যটিতে। এ ছাড়াও চেহারাবিহীন ভাস্কর্যটির গায়ে রয়েছে হুডি এবং বুকে রয়েছে বিটকয়েনের লোগো।

ভাস্কর্যটি নির্মাণের ভার পেয়েছিলেন ভাস্কর রেকা গার্গেলি এবং তামাস গিলি। এর নির্মাণ কাজের জন্য কমিউনিটির পক্ষ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অনুদান এসেছে দশ হাজার ডলার। মে মাসেই বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত এক ব্লকচেইন সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা এসেছিল এর ব্যাপারে।

উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বয়ং নাকামোতোও উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জিওর্ফ। তার আশা ছিলো, হয়তো এর মধ্য দিয়ে বিটকয়েন স্রষ্টার পরিচয় জানা যাবে। কিন্তু তিনি এসেছিলেন কি না, তা আর জানা যায়নি।

নাকামোতের পরিচয় অনুসন্ধানের বিষয়টিও বিটকয়েনের মতোই পুরোনো, গুজব ও রহস্যের চাদরে ঢাকা। ২০০৮ সালে ‘বিটকয়েন: আ পিয়ার টু পিয়ার ইলেকট্রনিক ক্যাশ সিস্টেম’ নামের এক গবেষণা প্রকাশিত হয় এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি চক্রের মধ্যে ছড়াতে থাকে সেটি। ওই গবেষণাতেই প্রথমবারের মতো মেলে সাতাশি নাকামোতোর নাম। গবেষণাটি বর্তমানে ‘বিটকয়েন হোয়াইট পেপার’ নামে পরিচিত।            

              

পরে ২০০৯ সালে ৩০ হাজার লাইনের কোড এসে হাজির হয়। বিটকয়েনের শুরুটা সেখান থেকেই। এর পরের বছর নাকামোতো উধাও হয়ে যান ওয়েব থেকে। এক ইমেইল বার্তায় ‘বিটকয়েন কোর’ এর এক ডেভেলপারকে জানিয়ে যান, “অন্য বিষয়ের দিকে ঝুঁকছেন” তিনি।

বহু ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা নাকামোতোর চরিত্রে কল্পনা করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এ তালিকায় রয়েছেন প্রথম ভাগের বিটকয়েন মাইনার হাল ফিনে, অস্ট্রেলিয়ান উদ্যোক্তা ক্রেইগ রাইট, প্রকৌশলী ডরিয়ান এস. নাকামোতো, টেসলা প্রধান ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিরাও। কিন্তু কোনো দাবিই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি। যাদের সঙ্গে মেলানো হচ্ছিল, তারাও দাবি অস্বীকার করেছেন। আবার অনেকে নিজেকে বিটকয়েন স্রষ্টা দাবি করা থেকেও সরে এসেছেন।

ফেব্রুয়ারিতে কয়েনবেইজ ‘ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং’ নথিকরণের পর সেটির একটি অনুলিটি স্মারক হিসেবে পাঠিয়েছিল নাকামোতোর কাছে। এরপর বিটকয়েন প্রতিষ্ঠাতার পরিচয় নিয়ে ফের আগ্রহ বাড়তে থাকে।

কয়েনবেইজ নিজ নথিতে জানিয়েছে, নাকামোতোর পরিচয় প্রকাশ পেলে তা বিটকয়েনের মূল্যে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বৃহস্পতিবার ভাস্কর্য উন্মোচনের দিনটিতে বিটকয়েনের মূল্যমান ছিলো ৪৭ হাজার আটশ’ চার ডলার ৯৮ সেন্ট।

অর্থ বিকেন্দ্রীকরণের এ যুগে বিটকয়েন কলকাঠি নাড়ছে, লেনদেন থেকে সরিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক ও সরকারি সংস্থাকে, ইথেরিয়াম, ডোজকয়েনের মতো অন্য কাঠামোর ক্রিপ্টো আসার রাস্তাও তৈরি করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েনকে মুদ্রা হিসেবে বৈধতা দানকারী প্রথম দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছে এল সালভাদর।