ভারতে ‘আধিপত্য বিস্তারী অবস্থানের সুযোগ নিয়েছে’ গুগল

ভারতে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের আধিপত্য বিস্তারী অবস্থানের সুযোগ নিয়েছে গুগল। নিজের “বিশাল আর্থিক পেশী” ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষতি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, - দেশটির অ্যান্টিট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের দুই বছরের তদন্তে উঠে এসেছে এ তথ্য।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2021, 02:28 PM
Updated : 18 Sept 2021, 02:28 PM

কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার (সিসিআই) জুনের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, “অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প সংস্করণ চালিত ডিভাইস তৈরি ও বিক্রি বিষয়ে ডিভাইস উৎপাদকদের সক্ষমতা ও উদ্দীপনা” কমিয়ে দিয়েছিল গুগল।

অন্যদিকে, গুগল জানিয়েছে, অ্যান্ড্রয়েড কীভাবে আরও প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের দিকে নিয়ে গেছে তা ব্যাখ্যা করতে” তারা সিসিআই এর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

প্রত্যক্ষ সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, গুগল এখনও তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পায়নি। আর সিসিআই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

গোটা বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেক সূত্র জানিয়েছে, সিসিআই-এর জ্যেষ্ঠ সদস্যরা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করবেন এবং ক্ষতিপূরণের মতো চূড়ান্ত নির্দেশের আগে গুগলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবেন। ভারতের আদালতে আপিলেরও সুযোগ পাবে গুগল।

ভারতে লেনদেন অ্যাপ থেকে শুরু করে স্মার্ট টেলিভিশন বাজার ইত্যাদি প্রশ্নে একাধিক তদন্তের মুখে রয়েছে গুগল। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশেও তদন্তের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরীয় নিয়ন্ত্রকরা প্রতিষ্ঠানটিকে অ্যান্ড্রয়েডের কাস্টমাইজড সংস্করণ ব্লক করার জন্য ১৮ কোটি ডলার জরিমানা করেছে।

তদন্ত চলাকালে গুগল অন্তত ২৪টি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, আত্মপক্ষ সমর্থন করেছে এবং প্রতিযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্থ না করার দাবি তুলেছে বলে উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। গুগলের বিরুদ্ধে এই তদন্তে ৬২টি প্রতিষ্ঠান সিসিআইয়ের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, অ্যাপল, স্যামসাং ও শাওমি’র মতো বড় মাপের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও।

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ভারতের ৫২ কোটি স্মার্টফোনের ৯৮ শতাংশই অ্যান্ড্রয়েড চালিত।

সিসিআই তদন্তটি শুরু করে ২০১৯ সালে। ওই সময় সংস্থাটি জানিয়েছিল, গুগল মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের বিকল্প ব্যবহার না করতে দিয়ে এবং গুগল-অ্যাপস প্রি-ইনস্টল করতে বাধ্য করে ডিভাইস নির্মাতাদের সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।

সাড়ে সাতশ’ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে অ্যাপের বাধ্যতামূলক প্রি-ইন্সটলেশনের “সংখ্যাকে ডিভাইস নির্মাতাদের উপর অন্যায্য প্রয়োগ” হিসেবে পাওয়া গেছে যা ভারতের প্রতিযোগিতা আইন ভাঙছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের প্লে স্টোরের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে সুরক্ষিত রেখেছে।

তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, অ্যান্ড্রয়েড যখন স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে ২০১১ সাল থেকে লাইসেন্সএবল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে “আধিপত্য বিস্তারী অবস্থান উপভোগ” করছে, তখন প্লে স্টোর নীতি দাঁড়িয়েছে “এক-মুখী, দুর্বোধ্য, অস্পষ্ট, পক্ষপাতদুষ্ট এবং খামখেয়ালী”তে।

দুই ভারতীয় নবীন অ্যান্টিট্রাস্ট গবেষণা সহায়ক এবং এক আইনি শিক্ষার্থীর ২১০৯ সালে দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল তদন্তটি।

গুগলের মূল প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত এখনও বড় একটি বাজার। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, দেশটিতে পাঁচ থেকে সাত বছরের তারল্য বিনিয়োগ ও জোট বাঁধার কাজে এক হাজার কোটি ডলার খরচ করবে তারা। মূল প্রবৃদ্ধি বাজারের জন্য গুগলের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি এটি।