মূল্য পতনের পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে গরীব দেশগুলোর একটি এল সালভাদরে বিক্ষোভ আর যান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে অনুমোদিত মুদ্রা হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছে এই ক্রিপ্টোকারেন্সির।
দেশটিতে স্বীকৃত মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনের প্রচলন শুরু হয়েছে ৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে কমে আসে বিটকয়েনের দাম; প্রতিটি কয়েনের মূল্য ৫২ হাজার ডলার থেকে কমে ৪৩ হাজারে নেমে আসে। বলা হচ্ছে ইতোমধ্যেই ৩০ লাখ ডলার খুইয়েছে দেশটি।
বিবিসি জানিয়েছে, বাজারমূল্যে ধসের কারণে প্রথম দিনেই দেশটি বিটকয়েন খাতে ৩০ লাখ ডলার খুইয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দেশটিতে বিরোধী দলের এক নেতা।
দেশটির প্রেসিডেন্টে নাইব বুকেলে যেভাবে বিটকয়েনের পরীক্ষামূলক প্রচলনের পরিকল্পনা করেছিলেন, বাস্তব পরিস্থিতি তেমন নয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।
সরকারি ডিজিটাল ওয়ালেট ‘চিভো’ ব্যবহারে আগ্রহীদের নিবন্ধনের চাপ নিতে না পেরে ‘অফলাইন’ করে রাখা হয়েছিলো একাধিক সার্ভার। ব্যবহারকারীদের জন্য ওই ডিজিটাল ওয়ালেটটি নিজস্ব সেবায় এখনও যোগ করেনি অ্যাপল এবং হুয়াওয়ের মতো একাধিক প্ল্যাটফর্ম।
দিনের শুরুর সার্ভার জটিলতা কাটিয়ে দিনের শেষ নাগাদ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যোগ হয় ডিজিটাল ওয়ালেটটি। স্টারবাকস এবং ম্যাকডোনাল্ড'সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও বিটকয়েন গ্রহণ শুরু করে।
এল সালভাদর সরকার দেশটির নাগরিকদের প্রত্যেকের ডিজিটাল ওয়ালেটে ৩০ ডলার সমমূল্যের বিটকয়েন দিয়েছে । সরকারের দাবি, প্রতিবছর বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের লেনদেনে ফি হিসেবে বাড়তি খরচ হয় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার; লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিটকয়েন ব্যবহার করে এই বাড়তি খরচ এড়াতে পারবেন দেশটির নাগরিকরা।
তবে বিশ্বব্যাংক এবং দেশটির সরকারের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবিসি বলছে, এই বাড়তি খরচের পরিমাণ ১৭ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি নয়।
অন্যদিকে বিটকয়েনের প্রচলন নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে টুইট করেছেন, “আমাদের অতীত দৃষ্টান্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রথম বিশ্বের দিকে অগ্রসর হওয়ার অধিকার এল সালভাদরেরও আছে”।
এমন পরিস্থিতিতে স্বীকৃত মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনের প্রচলনের প্রথম দিনেই বাজারমূল্যে ২০ শতাংশ মূল্যহ্রাস, এল সালভাদরের জন্য ইতিবাচক ঘটনা নয়-- মন্তব্য বিবিসি’র।
“প্রেসিডেন্ট বুকেলে, তার সরকার এবং বিকয়েন পরীক্ষার জন্য দিনটা বেশ বাজে ছিলো”-- মন্তব্য করেছেন এল সালভাদরের বিরোধী দলীয় নেতা জনি রাইট সোল।
“নাগরিকদের বেশিরভাগ ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়ে খুবই কম জানেন। কিন্তু আমরা এটা জানি যে এই বাজারটি খুবই নাজুক। আজকে তারই প্রমাণ পাওয়া গেলো।”-- যোগ করেন তিনি।
বিটকয়েন একটি দেশের জাতীয় মুদ্রা হওয়ার উপযোগী নয় বলেও মন্তব্য করেছেন রাইট। “পার্লামেন্টে বিটকয়েন আইন পাশ হয়েছে প্রায় কোনো বিতর্ক ছাড়াই”। মাত্র পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছিলো এতে।
রাইট সোল আরও বলেন, “রাষ্ট্র এই লেনদেনগুলোর পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে এবং ঝুঁকির দায় নিচ্ছে; কিন্তু দিন শেষে আমরা যারা ট্যাক্স দেই, তারাই রাষ্ট্র”।
দেশটিতে বিটকয়েনের একমাত্র সমালোচক নন রাইট সোল। ৭ সেপ্টেম্বর এল সালভাদরের সুপ্রিম কোর্টোর সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন প্রায় এক হাজার নাগরিক। আতশবাজি ও টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
আর্থিক অনিশ্চয়তা ছাড়াও, বেআইনি লেনদেনে বিটকয়েন ব্যবহারের আশঙ্কাও করছেন অনেকে।