সরাসরি ভোক্তার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় টেসলা

শুধু বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নয়, বিদ্যুতও বিক্রি করতে চায় টেসলা। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের কিছু ব্যক্তির কাছে তো বটেই। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক এক নথিতে উঠে এসেছে তথ্যটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2021, 09:09 AM
Updated : 28 August 2021, 09:09 AM

টেক্সাস পাবলিক ইউটিলিটি কমিশনে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও তা সরাসরি জনসাধারণের কাছে বিক্রির জন্য আবেদন করেছে টেসলা। তবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বিস্তারিত ওই আবেদনে উল্লেখ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

আবেদনে টেসলা বলেছে, যাদের আগে থেকেই টেসলা গাড়ি রয়েছে, তাদের ব্যাপারটি মাথায় রেখে সরাসরি ভোক্তার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় তারা।   

এ ব্যাপারে টেসলাকে মন্তব্য করার জন্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর অনুরোধে সাড়া দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। টেসলার ওই নথির খবর প্রথমে প্রকাশিত হয় ‘টেক্সাস মান্থলি’তে।

টেসলা গোটা বিশ্বে পরিচিত বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই। তবে, প্রতিষ্ঠানটির আলাদা একটি ‘সৌর শক্তি ইউনিট’ রয়েছে। ওই ব্যবসার মূল লক্ষ্য আবাসিক ও অন্যান্য ভবনে ‘সোলার প্যানেল’ স্থাপন করে দেওয়া। সোলার প্যানেল স্থাপনের পর তা টেসলার ‘পাওয়ারওয়ালস’ ব্যাটারির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, যাতে দিনে সংরক্ষিত অতিরিক্ত শক্তি রাতে ব্যবহার করা যায়।

এ ছাড়াও ‘মেগাপ্যাক’ নামের স্বল্প পরিচিত একটি ব্যবসা রয়েছে টেসলার। ওই ব্যবসার আওতায় প্রতিষ্ঠানটি বড় আকারের ব্যাটারি তৈরি করে থাকে যা ‘ইউটিলিটি-স্কেল’ পরিমাণে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করতে পারে। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার হর্নসডেলে এরকম বড় ব্যাটারির প্রথমটি তৈরি করেছিল টেসলা। পরে অন্যান্য স্থানেও নিজেদের পণ্য নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।

“ব্যাটারি স্টোরেজ বৈশ্বিক বৈদ্যুতিক গ্রিডকে রূপান্তর করে দিচ্ছে এবং বিশ্বের টেকসই শক্তিতে যাওয়ার একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। হর্নসডেলের মতো বড় ব্যাটারি সংরক্ষণ প্রকল্পের বৈশ্বিক চাহিদা সামাল দিতে, টেসলা সুনির্দিষ্টভাবে ‘ইউটিলিটি-স্কেল’ প্রকল্পের জন্য নতুন একটি ব্যাটারি পণ্যের নকশা করেছে ও তৈরি করেছে।” – ২০১৯ সালে এক ব্লগ পোস্ট লিখেছিল টেসলা।

ব্লুমবার্গ এ বছরের শুরুতে জানিয়েছিল, টেক্সাসের অ্যাংলেটনে টেসলা অধীনস্থ গ্যামবিট এনার্জি স্টোরেজ এলএলসি অনেক নিরবেই একশ’ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার শক্তি সংরক্ষণ প্রকল্প গড়ে তুলছে। ব্যাটারিটির আকার এতোটাই বড় যে, তা যে কোনো গ্রীষ্মকালীন উত্তপ্ত দিনে ২০ হাজার ঘরে বিদ্যুতের যোগান দিতে পারবে। শহরটি হিউস্টনের ৪০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।

সিএনএন বলছে, এতোদিন টেসলা নিজেদের মেগাপ্যাকের সেবা শুধু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছে। সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রির চেষ্টা করেনি। তবে, তা যে বদলে যেতে চলেছে, সে ইঙ্গিতই মিলেছে সাম্প্রতিক নথির মধ্য দিয়ে।

ইলেকট্রেক এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে অনেক আগে থেকে সংশ্লিষ্ট থাকলেও, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি ব্যবহারের দিক থেকে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছে টেক্সাস। তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া ও ফ্লোরিডা।

সৌর এবং বায়বীয় শক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুতও তৈরি করে থাকে টেক্সাস। তবে, সে বিদ্যুতের জন্য সংরক্ষণ সুবিধার প্রয়োজন তাদের, কারণ সব সময় এভাবে বিদ্যুৎ তৈরির সুবিধা থাকে না। বায়বীয় শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য সব অঙ্গরাজ্যকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে, সৌরশক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে নিজ দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অঙ্গরাজ্যটি। এ তালিকার প্রথমে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া।

কিন্তু এতোকিছু থাকার পরও ফেব্রুয়ারিতে বড় মাপের ব্যর্থতার মুখে পড়েছিল টেক্সাসের বিদ্যুৎ গ্রিড। এ সমস্যার জন্য আংশিকভাবে দায়ী অবশ্য ভিন্ন একটি বিষয়। টেক্সাসই যুক্তরাষ্ট্রের একক অঙ্গরাজ্য যা দেশটির জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। ফলে সংকটের মুহূর্তে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারেনি তারা। ওই ঘটনার পর কিছু বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে।

সিএনএন বলছে, গত শীতের মতো সমস্যার মুখে পড়া এড়াতে টেক্সাসের যে আরও বৈদ্যুতিক স্টোরেজের প্রয়োজন সে বিষয়ে এপ্রিলে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক।

সে সময় মাস্ক বিনিয়োগকারীদের বলেছিলেন, “টেক্সাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিলো … কিন্তু গ্রিডের শক্তির ধাক্কা সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতা না থাকায় তাদের শক্তি বন্ধ রাখতে হয়েছে। কোনো শক্তি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিলো না।”

টেক্সাসে আগে থেকেই ইলন মাস্ক ও তার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানের দৃঢ় উপস্থিতি রয়েছে। বর্তমানে অঙ্গরাজ্যটির অস্টিনের বাইরে দ্বিতীয় গাড়ি নির্মাণ কারখানা তৈরি করছে টেসলা। মাস্ক নিজেও আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের আবাসস্থল পরিবর্তন করেছেন, তার নতুন ঠিকানা এখন টেক্সাস।

এ ছাড়াও গত বছর কোভিড-১৯ মহামারীর মুখে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে কারখানা খোলা রাখা নিয়ে বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন মাস্ক। সে সময় তিনি হুমকি দিয়েছিলেন টেসলা প্রধান কার্যালয় টেক্সাসে সরিয়ে নেওয়ার। যদিও পরে তা আর করেননি তিনি।

শুধু টেসলারই নয়, দক্ষিণ টেক্সাসে দৃঢ় উপস্থিতি রয়েছে মাস্কের মহাকাশ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সেরও। ওই অঞ্চলে উৎপাদন কারখানা থেকে শুরু করে, উৎক্ষেপণ ও অবতরণ প্যাডও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।