টি-মোবাইল হ্যাকিং: দায় স্বীকার, আক্রান্তের সমালোচনায় হ্যাকার

যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টি-মোবাইল ইউএস ইনকর্পোরেটেডের পাঁচ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের ডেটা বেহাত হওয়ার ঘটনায় মুখ খুলেছে হ্যাকার। হ্যাকিংয়ের দায় স্বীকার করে নিজের পরিচয় উন্মোচন করেছেন এক ব্যক্তি; কড়া সমালোচনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2021, 12:04 PM
Updated : 27 August 2021, 12:04 PM

জন বিনস নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছেন টি-মোবাইল হ্যাকিং ঘটনার মূল হোতা হিসেবে। নিজের দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে টি-মোবাইলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে দেখিয়েছেন তিনি, জানিয়েছেন পুরো হ্যাকিং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত।

বিনসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, টি-মোবাইলের অরক্ষিত রাউটারের জন্য স্ক্যান করে গ্রাহকদের ডেটা চুরি করতে সক্ষম হন তিনি। একটি অরক্ষিত রাউটার ব্যবহার করে ওয়াশিংটন রাজ্যের ডেটা সেন্টারে প্রবেশাধিকার পান তিনি, একশ’র বেশি সার্ভারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জমা ছিলো ওই ডেটা সেন্টারে।

টি-মোবাইলের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ‘বাজে’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ওই হ্যাকার। অ্যাক্সেস পাওয়া ডেটার আকার দেখে নিজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি করেছেন বিনস।

তবে, ওই হ্যাকিং কাণ্ড বিনস একাই ঘটিয়েছেন কি না, সেটি এখনও পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। পুরো প্রক্রিয়ায় কিছু অংশের জন্য হলেও অন্যদের সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিনস।

হ্যাকারদের হাতিয়ে নেওয়া ডেটার মধ্যে ছিলো ব্যবহারকারীদের নাম, জন্ম তারিখ, সামাজিক নিরাপত্তা নাম্বার, সিম কার্ড এবং সেলফোনের সেলুলার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার। সাইবার আক্রমণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো ইতোমধ্যেই সমাধান করে ফেলার দাবি করেছে টি-মোবাইল।

হ্যাকিং কাণ্ডের বিস্তারিত শোনার পাশাপাশি বিনসের অতীত নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। নিজের অতীত নিয়ে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর বক্তব্য দিয়েছেন ওই স্বঘোষিত হ্যাকার। ভিডিও গেইমের জন্য চিটকোড বানিয়ে হ্যাকিং জীবনের শুরু-- জানিয়েছেন বিনস। মার্কিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে রেষারেষির লম্বা ইতিহাস আছে বলে দাবি তার।

বিনসের দাবি, সিআইএ, এফবিআই এবং মার্কিন বিচার বিভাগসহ বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা তার উপর নজরদারি চালাচ্ছে। সংস্থাগুলো তাকে নিয়ে কী কী তথ্য সংগ্রহ করেছে সেটি উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে মার্কিন আদালতে মামলাও করেছিলেন তিনি। ওই মামলায় বিনস অভিযোগ করেছেন-- মার্কিন সরকারের এক তথ্যদাতা এফবিআইয়ের মালিকানাধীন ওয়েবসাইট থেকে স্টিঙ্গার মিসাইল কিনতে তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলো, অতিপ্রাকৃত এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে তার উপর আক্রমণ চালানো হয়েছিলো; এমনকি এফবিআইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণ, অত্যাচার এবং নজরদারির অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি।

বিনসের মামলার প্রতিক্রিয়ায় এক এফবিআই প্রতিনিধি জানান, বিনসকে নিয়ে কোনো তদন্ত চালাচ্ছেন না তারা; বিনসকে অপহরণ, অত্যাচার এবং নজরদারির কোনো নথিও নেই তাদের কাছে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বিনস বলেছেন, ‘আলোড়ন’ সৃষ্টির জন্যই হ্যাকিংয়ের কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। এফবিআইয়ের ভেতর থেকে কেউ একজন তার অপহরণ সংক্রান্ত নথি ফাঁস করে দেবে, এমনটাও আশা করছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ‘আলোড়ন’ সৃষ্টির চেষ্টা করলেও বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বিনসের উত্তরণের সম্ভবনা কম। টি-মোবাইলের হ্যাকার হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে নিজের উপর আরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিনস। তবে টি-মোবাইল হ্যাকিংয়ের যে প্রক্রিয়ার বিবরণ তিনি দিয়েছেন, সেটি সত্যি প্রমাণিত হলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়বে টি-মোবাইল।