প্রযুক্তি সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তা উন্নত করার লক্ষ্যে নতুন নির্দেশিকা তৈরি করবে মার্কিন সরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে কাজ করবে তারা।
Published : 26 Aug 2021, 02:54 PM
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ক্যাবিনেট সদস্যরা। সেখানেই উঠে এসেছে বিষয়টি।
Biden (spaced from the other participants) convenes a cybersecurity meeting and does not answer a question about Afghanistan. pic.twitter.com/nC81cnP5nE
— Tal Kopan (@TalKopan) August 25, 2021
বৈঠকে প্রযুক্তি প্রধানদেরকে “সাইবার সুরক্ষা প্রশ্নে মান বাড়াতে” অনুরোধ জানান বাইডেন। তিনি বলেন, “ফেডারেল সরকার একা এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে পারবে না। আমার বিশ্বাস, সাইবার সুরক্ষার মান বাড়ানোর জন্য আপনাদের শক্তি রয়েছে, সক্ষমতা রয়েছে এবং দায়িত্বও রয়েছে।”
বৈঠকে মার্কিন অীর্থিনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে এমন সাইবার আক্রমণের ব্যাপারে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, আর্থিক শিল্প, এবং কাঠামোভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ওপেন সোর্স সফটওয়্যারসহ নিরাপদ প্রযুক্তি গড়তে এবং প্রযুক্তির নিরাপত্তা মূল্যায়ন করার লক্ষ্যে শিল্প এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে নতুন নির্দেশিকা নিয়ে কাজ করবে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইএসটি)’।
উল্লেখ্য, এনআইএসটি নেতৃত্বাধীন উদ্যোগে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাইক্রোসফট, গুগল, ট্রাভেলারস, সাইবার বীমা প্রতিষ্ঠান কোয়াালিশন এবং অন্যান্যরা।
সাম্প্রতিক সময়ে বড় মাপের কয়েকটি ধারাবাহিক সাইবার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সোলারউইন্ডস কর্পোরেশন, তেল পরিশোধক কলোনিয়াল পাইপলাইন, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান জেবিএস এবং সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান কেসিয়া।
শুধু আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানই নয়, তেল ও খাদ্য সরবরাহে প্রভাব পড়ার কারণে আঘাত পড়েছিল খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও। এর পরপরই বাইডেন প্রশাসনের এজেন্ডার শীর্ষে চলে আসে সাইবার সুরক্ষা।
র্যানসমওয়্যার আক্রমণ, এর জন্য দায়ী রাশিয়া ভিত্তিক দলকে থামানোর জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে চাপ প্রয়োগ এবং প্রায় পাঁচ লাখ সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সাইবার সুরক্ষা পদে নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, “আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।”
হোয়াইট হাউসের এ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন অ্যামাজন প্রধান অ্যান্ডি জেসি, অ্যাপল প্রধান টিম কুক, মাইক্রোসফট প্রধান সাত্যিয়া নাদেলা, অ্যালফাবেট প্রধান সুন্দার পিচাই এবং আইবিএম প্রধান আরভিন্দ কৃষ্ণাসহ বিভিন্ন শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
বৈঠক শেষে অ্যামাজন জানিয়েছে, মানুষের জন্য তারা নিজেদের সাইবার সুরক্ষা প্রশিক্ষণ বিনামূল্যে নিয়ে আসবে, এবং কিছু ক্লাউড কম্পিউটিং গ্রাহকের হাতে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ডিভাইস তুলে দেবে। অক্টোবর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে, নিজেদের সাইবার সুরক্ষা কর্মকাণ্ডের গতি বাড়াতে আগামী পাঁচ বছরে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটির এ খাতে বিনিয়োগ বর্তমান হারের তুলনায় চার গুণ বাড়ছে।
ফেডারেল, অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় সরকারকে কারিগরি সেবায় সহায়তা দিতে এবং সুরক্ষা সিস্টেম আপ-টু-ডেট রাখতে ১৫ কোটি ডলার দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে মার্কিন এ সফটওয়্যার জায়ান্ট।
আইবিএম আগামী তিন বছরে দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে সাইবার সুরক্ষা দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি আরও বৈচিত্র্যময় সাইবার জনশক্তি গড়ে তুলতে ঐতিহাসিক কৃষ্ণাঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জোট বাঁধবে তারা।
এদিকে, আগামী পাঁচ বছরে সাইবার সুরক্ষায় এক হাজার কোটি ডলার খরচ করবে গুগল। তবে, নতুন খাতে কোনো অঙ্ক খরচ হবে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এর পাশাপাশি এক লাখ মার্কিনীকে শিল্প-স্বীকৃত ডিজিটাল সনদ অর্জনেও সহযোগিতা করবে গুগল। ওই সনদ ব্যবহার করে তারা উচ্চ বেতনের চাকরি করতে পারবেন।
রেসিলিয়েন্স সাইবার ইনস্যুরেন্স সলিউশনের প্রধান নির্বাহী ভিশাল হারিপ্রাসাদ জানিয়েছেন, তারা সাইবার সুরক্ষার পরিষ্কার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠায় সরকারের সঙ্গে কাজ করবে, এবং বীমা গ্রহীতাদের ওই মান মেনে চলতে হবে।
“যদি, কোনো প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম মানও মেনে চলে, তারা ইনস্যুরেন্স পাবে, নাহলে পাবে না, তাদের ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে যাতে তারা সীমানায় থাকতে পারে।” – বলেছেন হারিপ্রাসাদ।
“এটি শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ করা নয়, দুর্বৃত্তদের দমাতে আমরা যে কিছু করছি, সেটিও নিশ্চিত করা।” – যোগ করেছেন তিনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, ডেটা অনুপ্রবেশ অবহিতকরণ আইন ও সাইবার সুরক্ষা ইনস্যুরেন্স শিল্প নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করছে কংগ্রেস।
হোয়াইট হাউসের বৈঠকে সাউদার্ন কোম্পানি এবং জেপিমর্গান চেস অ্যান্ড কোম্পানির নির্বাহীরা অংশ নিয়েছিলেন। বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ সাইবার সুরক্ষা কর্মকর্তারাও উপস্থিত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি’ পরিচালক ক্রিস ইংলিস এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান আলেহান্দো মায়োরকাস।