ফেইসবুক ও গবেষকদের দ্বৈরথে নিষিদ্ধ গবেষকদের অ্যাকাউন্ট

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকের স্বচ্ছতা এবং ভুয়া তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা নিয়ে অনসন্ধান চালাচ্ছিলেন ‘নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (এনওয়াইইউ)’র একদল গবেষক। ‘অনুমতি ছাড়া ডেটা সংগ্রহ’ করার অভিযোগ তুলে ওই গবেষকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ড নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2021, 09:03 AM
Updated : 5 August 2021, 09:03 AM

গবেষকদের পাল্টা অভিযোগ, সোশাল মিডিয়া জায়ান্টের বিভিন্ন দুর্বলতা ও ত্রুটি উন্মোচন করায় তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠান।

‘এনওয়াইইউ অ্যাড অবজার্ভেটরি’ প্রকল্পে কাজ করেন ওই গবেষকরা। প্ল্যাটফর্মটিতে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের উৎপত্তি ও প্রচার নিয়ে গবেষণা চলছে ওই প্রকল্পে। রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলোর খরচ কারা দেন এবং ওই বিজ্ঞাপনের দর্শকদের কীভাবে চিহ্নিত করা হয় সেটিও তাদের গবেষণার মূল বিষয় বলে এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছেন গবেষকরা।

ফেইসবুক রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই করে না। এমন পরিস্থিতিতে ভুয়া তথ্য প্রচার করতে প্ল্যাটফর্মটি কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে-- সেটি বোঝার জন্য এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট দ্য ভার্জ।

কাজের সুবিধার জন্য ‘অ্যাড অবজার্ভার’ নামের একটি ব্রাউজার প্লাগ-ইন বানিয়েছিলেন ওই গবেষকরা। কোন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের দেখানো হচ্ছে এবং ওই ব্যবহারকারীদের কীসের ভিত্তিতে আলাদা করে চিহ্নিত করা হচ্ছে, এই বিষয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করতো প্লাগ-ইন’টি। তবে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করছিলো না বলেই উল্লেখ রয়েছে গবেষকদের ওয়েবসাইটে।

‘অ্যাড অবজার্ভার’ থেকে পাওয়া তথ্য পরবর্তীতে গবেষক ও সাংবাদিকসহ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হতো, যেন প্ল্যাটফর্মটির চলতি ট্রেন্ড এবং অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক পক্ষের ভুয়া তথ্য আরেক পক্ষের তুলনায় বেশি প্রচার পাওয়া বা রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের খরচ কে যোগায়- সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে ফেইসবুকের অপারগতার বিষয়গুলো উঠে এসেছে অ্যাড অবজার্ভার থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই।

‘অ্যাড লাইব্রেরি’র মাধ্যমে এই প্রসঙ্গে কিছু তথ্য ফেইসবুক শেয়ার করলেও বেশিরভাগ তথ্যই গবেষকদের কাছ থেকে গোপন করে প্রতিষ্ঠানটি। যেমন, ব্যবহারকারীদের পছন্দের বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কীভাবে তাদের বিজ্ঞাপনী প্রচারণার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ওই তথ্য দেখতে পারতেন। আর ওই তথ্যগুলোই সংগ্রহ করতো এনওয়াইইউ।

এমন পরিস্থিতিতে, স্বাধীন সমালোচনা এড়াতেই ফেইসবুক গবেষকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে বলে দাবি করেছেন এনওয়াইইউ-এর গবেষক লরা এডেলসন।

“ফেইসবুক আমাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে কারণ, আমরা প্ল্যাটফর্মটির বিভিন্ন সমস্যার উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করি। সবচেয়ে খারাপ দিকটা হচ্ছে, ‘ইউজার প্রাইভেসি’--যার কারণে আমাদের এই গবেষণা, সেটির অজুহাত তুলে এই কাজটি করছে ফেইসবুক। এই ঘটনা থেকে যেটা শেখার বিষয়, সেটা হলো- কে তাদের নিয়ে গবেষণা করবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ফেইসবুকের থাকা উচিত নয়”।

ফেইসবুক দাবি করছে, প্ল্যাটফর্মের সেবা নীতিমালা ভঙ্গ করার কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওই গবেষকদের অ্যাকাউন্ট। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘অ্যাড অবজার্ভার প্লাগ-ইন’, “এমন ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের ডেটা সংগ্রহ করতো যারা ওই প্লাগ-ইন ইনস্টল করেননি বা ডেটা সংগ্রহে অংশ নিতে রাজি হননি।”

অন্যদিকে ভার্জ বলছে, বিবৃতিতে ফেইসবুকের শব্দচয়ন দেখে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের কথা বলছে মনে হলেও আদতে তা নয়। আদতে বিজ্ঞাপন দাতা অ্যাকাউন্টগুলোর কথা বলেছে ফেইসবুক। ‘ব্যবহারকারীদের ডেটা’ বলতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্ব বা জনপ্রতিনিধিদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে পরিচালিত বিজ্ঞাপন প্রচারণা এবং ওই বিজ্ঞাপনের কনটেন্টের কথা বলেছে ফেইসবুক।

তৃতীয় কোনো পক্ষের প্ল্যাটফর্মটি থেকে ডেটা সংগ্রহের ব্যপারে ফেইসবুকের সাবধানতা অবলম্বন করা স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছে ভার্জ। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারীর ঘটনায় পাঁচশ’ কোটি ডলারের জরিমানা গুনতে হয়েছে ফেইসবুককে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যপ্রণালীতে বাড়তি বাধ্য-বাধকতা জুড়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)।

ফেইসবুক দাবি করছে, এফটিসির নীতিমালা মেনেই গবেষকদের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ফেইসবুকের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ প্রাইভেসি গবেষকরা। সোশাল মিডিয়া জায়ান্টের ওই ব্যাখ্যাকে ‘ভুয়া, বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রযুক্তি ও আইন গবেষক জোনাথান মেয়ার।