ব্লু অরিজিন-এর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান, রায় গেলো নাসার পক্ষে

‘আর্টেমিস’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে চাঁদের অবতরণ যান নির্মাণ প্রসঙ্গে নাসার পক্ষে রায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অফিস’ (জিএও)।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2021, 01:19 PM
Updated : 2 August 2021, 01:19 PM

সম্প্রতি চাঁদে অবতরণের জন্য নতুন যান নির্মাণের চুক্তি ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-কে দিয়েছিলো নাসা। নাসার সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জিএও’র কাছে অভিযোগ করেছিলো প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন ও ডায়নেটিক্স ইনকর্পোরেটেড। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিধানিক শাখা।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দুইশ’ ৯০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা দিয়ে ‘হিউম্যান ল্যান্ডিং সিস্টেম’ (এইচএলএস) নির্মাণ চুক্তির নিলাম জিতে নেয় ইলন মাস্কের স্পেসএক্স। এর বিপরীতে জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত পরিকল্পনার খরচ দেখানো হয়েছিলো ছয়শ’ কোটি ডলার, যা স্পেসএক্সের দ্বিগুণ।

নাসার কোনো মহাকাশযান ১৯৭২ সালের পর চাঁদে যায়নি। ২০২৪ সাল নাগাদ আবার চাঁদে ফেরার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর্টেমিস প্রোগ্রাম’। ওই প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রাথমিক অবস্থায় দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চাঁদের অবতরণ যান নির্মাণের চুক্তি করার কথা ছিলো নাসার। কিন্তু বাজেট ঘাটতির কারণে দুটি প্রতিষ্ঠানের বদলে একটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয় নাসা।

নিলামে হারের পর ব্লু অরিজিনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস অভিযোগ তুলেছিলেন যে, দুটি প্রতিষ্ঠানের বদলে একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ চুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি নাসার।

বেজোসের ব্লু অরিজিন এবং আরেক প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান ডায়নেটিক্স ইনকর্পোরেটেড-এর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিএও বলছে, “নাসা স্পেসএক্সকে এককভাবে পুরস্কৃত করার জন্য অনৈতিক আচরণ করেছে বলে যে আপত্তি তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়”।

অন্যদিকে জিএও’র সিদ্ধান্তের সঙ্গে ব্লু অরিজিন একমত নয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। নাসার সিদ্ধান্তে ‘মৌলিক ত্রুটি’ আছে এবং ‘সীমিত এখতিয়ার’-এর কারণে জিএও এই ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে শুক্রবার মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। 

রয়টার্স জানিয়েছে, চাঁদের অবতরণ যান নির্মাণের কাজ একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার বদলে দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়াই সঠিক সমাধান হবে বলে দাবি করছে বেজোসের ব্লু অরিজিন।

শুক্রবার নাসার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জিএও’র এই সিদ্ধান্তের ফলে নাসা ও স্পেসএক্স ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চাঁদে নভোচারী অবতরণের সময়রেখা তৈরির সুযোগ পাবে”। চাঁদে মার্কিন নভোচারী পাঠানোর বিষয়টি বাইডেন সরকারের কাছেও আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে বলে যোগ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

অন্যদিকে, জিএও’র সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশ হলেও নাসার পরবর্তী প্রকল্পে সুযোগ পেতে ডায়নেটিক্স ইনকর্পোরেটেড প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে বলে জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। 

এ প্রসঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি স্পেসএক্স। তবে চুপ থাকেননি মাস্ক। টুইটারে শুধু ‘জিএও’ লিখে সঙ্গে ‘পেশি মোচড়ানো’ ইমোজি জুড়ে দিয়ে নিজের মতো করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। 

এপ্রিলে যখন স্পেসএক্স নতুন চন্দ্রযান নির্মাণের চুক্তি জিতে নেয়, ব্লু অরিজিন অভিযোগ তুলেছিলো যে খরচের হিসাব সংশোধন করার সুযোগ দিয়ে স্পেসএক্সকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে নাসা। 

‘আর্টেমিস’ প্রকল্পের অংশ হতে জুলাইয়ের শেষ সোমবার দুইশ’ কোটি ডলার এককালীন ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন ব্লু অরিজিন প্রধান জেফ বেজোস।

নাসা ব্যবস্থাপক বিল নেলসনকে উদ্দেশ্য করে লেখা এক চিঠিতে দুইশ’ কোটি ডলারের এককালীন ছাড়ের পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তির কার্যক্ষমতা যাচাই করতে নিজ খরচে পৃথিবীর কক্ষপথে একটি মিশনের প্রস্তাব দেন বেজোস। তার বদলে ব্লু অরিজিন একটি নির্দিষ্ট খরচের স্থায়ী চুক্তি ও যে কোনো প্রযুক্তি উন্নয়নের খরচ গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।

“প্রতিযোগিতা ছাড়া নাসার স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে দেরি হবে, শেষ পর্যন্ত খরচ বেশি হবে এবং জাতীয় স্বার্থ পূরণ হবে না”--বলেন বেজোস।

ব্লু অরিজিনের তৈরি রকেট নিউ শেপার্ডে চড়ে মহাকাশের সীমানা থেকে ঘুরে আসার ছয় দিন পর ওই প্রস্তাব দেন বেজোস।